বাসস
  ২৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৩৩

ইসরাইলি হামলার পর ইরানের সতর্ক বার্তা

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : ইসরাইলি বিমান হামলায় ইরানের অন্তত চার সেনা নিহত হওয়ার পর, শনিবার তেহরান তেল আবিবকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে যে, তারা নিজেদের রক্ষা করবে। ইরানে ইসরাইলি হামলায় মধ্যপ্রাচ্যে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেওয়ার পর, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ইরানের সতর্ক বার্তাটি এলো। এদিকে ইসরায়েল হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, ইরান যদি ইসরাইলের হামলা মোকাবেলায় পাল্টা হামলা চালায়, তবে ইরানকে ‘ভারী মূল্য দিতে হবে’। 

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ব্রিটেন পাল্টা পদক্ষেপের মাধ্যমে এ সংঘাতকে আরো উস্কে না দেওয়ার জন্য তেহরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ভোরবেলা ইসরায়েলি হামলার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন যে তিনি আশা করেন ‘এটিই শেষ’ হামলা। ইসরাইলের পক্ষ নিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘মনে হচ্ছে, তারা (ইসরাইল) সামরিক লক্ষ্যবস্তু ছাড়া অন্য কিছুতে আঘাত করেনি।’

বাইডেন ইসরায়েলকে তার প্রতিশোধমূলক হামলায় ইরানের পারমাণবিক ও তেল স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা না চালানোর আহ্বান জানান। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা নিশ্চিত করেছে যে, কোনও পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাত করা হয়নি। ইউরোপীয় ইউনিয়নও মধ্যপ্রাচ্যে চলমান এ সংঘাত যেন ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায়’, সেজন্য সব পক্ষকে সর্বোচ্চ সংযম রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।

ইরানের অনেক প্রতিবেশীসহ অন্যান্য দেশ ইসরাইলের হামলার নিন্দা করেছে এবং রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ উভয় পক্ষকেই সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। মস্কো মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ঘটনাগুলোকে ‘বিপর্যয়কর পরিস্থিতি’ বলে অভিহিত করে তা এড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

ইরান জোর দিয়ে জানায়, আত্মরক্ষা করার তার ‘অধিকার এবং কর্তব্য’ রয়েছে। ইরানের লেবানিজ মিত্র হিজবুল্লাহ বলেছে, তারা ইতোমধ্যেই উত্তর ইসরাইলের পাঁচটি আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে রকেট সালভোস হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, শনিবার সীমান্ত পেরিয়ে ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। হিজবুল্লাহ পরে ইসরাইলের এক ডজনেরও বেশি অবস্থানের ওপর হামলা চালাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দক্ষিণ বৈরুতের দুটি এলাকায় হামলা চালাবে বলে একই রকম হুঁশিয়ারি দিয়েছে। 

লেবাননের সরকারি ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি রবিবার ভোরে জানিয়েছে, ইসরাইল বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলিতে নতুন অভিযান চালিয়েছে। তেহরানের চারপাশে বিস্ফোরণ ও বিমান-বিধ্বংসী অগ্নিকুন্ডলি দৃশ্যমান হওয়ার পর ইরানে হামলা চালানো বিষয়টি নিশ্চিত করে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা বেশ কয়েকটি প্রদেশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলের এক সামরিক মুখপাত্র বলেন, ‘প্রতিশোধমূলক হামলা ও মিশন সম্পন্ন হয়েছে। হামলার পর ইসরায়েলি বিমান নিরাপদে ফিরে এসেছে।’ 

ইরানও নিশ্চিত করেছে যে, ইসরাইল তেহরানের আশপাশে ও অন্যান্য প্রদেশের সামরিক স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। তেহরান জানায়,  ইসরাইলের এ হামলায় তাদের ‘সীমিত ক্ষতি’ হয়েছে। তবে এতে চার সেনা নিহত হয়েছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ বলেছেন, হামলায় শুধুমাত্র রাডার সিস্টেম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং তারা তাৎক্ষণিক প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি থেকে বিরত রয়েছে। তিনি বলেন, ‘ইরান উপযুক্ত মুহুর্তে পাল্টা জবাব দেওয়ার আইনগত ও বৈধ অধিকার সংরক্ষণ করে। ইরান এখন গাজা ও লেবাননে স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।’ ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি মিশরীয়, কাতারি ও সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের সাথে টেলিফোনে আলোচনা করেছেন।

গাজা যুদ্ধবিরতি প্রচেষ্টার একজন প্রধান মধ্যস্থতাকারী কাতারের শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুল রহমান আল-থানি। ইরানে ইসরাইলের হামলার পর তার মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে যে গুরুতর প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার জন্য তিনি (কাতারের শেখ) গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।’

১ অক্টোবর ইরান তার চিরশত্রু ইসরাইলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বারের মতো সরাসরি হামলা চালিয়ে ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করার পর ইসরায়েল এ হামলার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নেয়। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অধিকাংশই ঠেকিয়ে দেওয়া হলেও ইসরাইলের একজন নিহত হয়।

ইসরাইলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে স্পষ্টবাদী সমালোচকদের অন্যতম তুরস্ক ‘ইসরাইলের  সন্ত্রাসী কর্মকা-’ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে। গত মাস থেকে ইসরাইল লেবাননে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। ইসরাইল হামলা চালিয়ে প্রতিরোধ গোষ্ঠীটির সিনিয়র নেতৃত্বকে হত্যা করেছে এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনাগুলো ধ্বংস করার জন্য স্থল হামলা চালিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার পর থেকে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইল গাজায় নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। ঘনবসতিপূর্ণ ফিলিস্তিনি ভূখ-ে ইসরাইলের হামলায় নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ বিপুল সংখ্যাক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে।

জাতিসংঘ সতর্ক করেছে যে, এ সংঘাতের ‘অন্ধকার মুহূর্ত’ উন্মোচিত হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ভয়াবহ মানবিক সংকটে মধ্যে থাকা ফিলিস্তিনিরা প্রতিদিনই ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলার সম্মুখীন হচ্ছে।

হামাস পরিচালিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক বোমাবর্ষণ ও স্থল যুদ্ধে ৪২,৯২৪ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। পরিসংখ্যানটিকে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য বলে মনে করে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১,৬১৫ জন নিহত হয়েছে।