শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ অক্টোবর, ২০২৪ (বাসস) : বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন স্পষ্ট : মানুষ পৃথিবীর ভূমি, সমুদ্র এবং আমাদের নিজেদের আশ্রয়দানকারী জীবিত সকলের জন্য প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কলম্বিয়ার ক্যালিতে আয়োজিত কপ১৬ জীববৈচিত্র শীর্ষ সম্মেলন সোমবার দ্বিতীয় সপ্তাহে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রকৃতি ধ্বংস বন্ধ করে পরিবেশ বান্ধব পদক্ষেপ গ্রহণে কানাডায় দুই বছর আগে সম্মত হওয়া ২৩টি লক্ষ্য অর্জনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আইপিবিইএস আন্তঃসরকারি বিজ্ঞান ও জীববৈচিত্র সম্পর্কিত নীতি সংস্থা জানিয়েছে, পৃথিবী পৃষ্ঠের তিন-চতুর্থাংশ ইতোমধ্যেই উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং দুই-তৃতীয়াংশ মহাসাগর মানবজাতির অযৌক্তিক অপচয়ের কারণে ধ্বংস হয়েছে।
১৯৭০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী অভ্যন্তরীণ জলাভূমির এক তৃতীয়াংশেরও বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে- যা বনভূমির ক্ষতির তিনগুণ।
আইপিবিইএস-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মানুষের কর্মকা-ের মাধ্যমে ভূমির ক্ষয় অন্তত ৩.২ বিলিয়ন মানুষকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। ভূমির এ ক্ষয় না হলে এই বিপুল সংখ্যক মানুষ সুফল পেত।’
তবে প্রতিবেদনটি এও জানিয়েছে যে, এখনো সব শেষ হয়ে যায়নি। পুনরুদ্ধারের সুবিধাগুলি খরচের তুলনায় ১০ গুণ বেশি হবে।
কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্কের ২৩টি লক্ষ্যগুলির মধ্যে একটি হল- ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ ক্ষয় হয়ে যাওয়া ভূমি, অভ্যন্তরীণ পানি, সামুদ্রিক ও উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রকে ‘কার্যকর পুনরুদ্ধারের’ অন্তর্ভূক্ত করা।
এক-চতুর্থাংশেরও বেশি উদ্ভিদ ও প্রাণীর ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচারের বিপন্ন প্রজাতির ‘লাল তালিকায়’ রয়েছে।
আইপিবিইএস জানায়, বিশ্বের প্রায় এক মিলিয়ন প্রজাতি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
পরাগায়নকারী, উদ্ভিদের প্রজননের জন্য অপরিহার্য ও তিন-চতুর্থাংশ শস্য- যা মানবজাতির খাদ্যের চাহিদা মেটায়, এমন সব উদ্ভিদ দ্রুত মারা যাচ্ছে।
কোরাল এই বিপন্ন প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর উপর প্রায় ৮৫০ মিলিয়ন মানুষের খাদ্য ও শ্রম নির্ভর করে।
এই প্রাণীগুলো প্রাচীর অনেক প্রাণীর জন্য খাদ্য ও জন্মের স্থল। এর সবগুলোই প্রাক-শিল্পায়নের স্তরের তুলনায় ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৩.৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট) উষ্ণ বিশ্বে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। অপরিকল্পিত, প্রতিযোগিতামূলক ও অব্যহত শিল্পায়ন এই উষ্ণায়নের জন্য অনেকাংশেই দায়ী।
পৃথিবীর উষ্ণতা বৃদ্ধিকারী গ্রিনহাউস গ্যাস রোধে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির অধীনে বিশ্বটি গড় উষ্ণতার উপরের সীমাটি অতিক্রম না করতে চাইছে।
জাতিসংঘের জন্য, জীববৈচিত্র সংকটের পাঁচটি কারণ রয়েছে। এগুলোর সবই মানবসৃষ্ট এবং এর ডাকনাম ‘ফাইভ হর্সমেন অ্যাপোক্যালিপস।’
এগুলো হল- আবাসস্থল ধ্বংস (কৃষি বা মানুষের অবকাঠামোর জন্য), জল, জলবায়ু পরিবর্তন, দূষণ ও আক্রমণাত্মক প্রজাতির বিস্তারের মতো সম্পদের অত্যধিক শোষণ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন জীববৈচিত্র ধ্বংসের প্রধান কারণ হয়ে উঠতে পারে।
কৃষি, বনায়ন, মৎস্য ও জলজ পালন, খাদ্য ও পানীয় শিল্প এবং নির্মাণ খাতগুলি প্রকৃতির ক্ষতির সবচেয়ে বড় কারণ।
ভারতীয় অর্থনীতিবিদ পবন সুখদেব অনুমান করেন যে, জীববৈচিত্রের ক্ষতি প্রতি বছর ১.৩৫ ট্রিলিয়ন থেকে ৩.১ ট্রিলিয়ন ইউরো। তিনি দ্য ইকোনমিক্স অফ ইকোসিস্টেম অ্যান্ড বায়োডাইভারসিটি (টিইইবি) শিরোনামের একটি গবেষণা প্রকল্পের নেতৃত্ব দেন।
জীববৈচিত্র্য কাঠামোর আরেকটি লক্ষ্য হল ক্ষতিকারক ভর্তুকি এবং ট্যাক্স সুবিধাগুলি ২০৩০ সালের মধ্যে "প্রতি বছর কমপক্ষে ৫০০ বিলিয়ন" হ্রাস করা।