শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪ (বাসস) : আসাদ-পরবর্তী সিরিয়ায় ক’জন কৌতুক অভিনেতা দর্শকদের সামনে সরাসরি এক পারফরমেন্সে (স্ট্যান্ড আপ কমেডি) দেশটির সাবেক স্বৈরশাসক ও তার শাসনকে উপহাসের মাধ্যমে আসাদের পুনরায় ফিরে আসার এক কাল্পনিক ও বিদ্রুপাত্মক চিত্র তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে দামেস্কের নতুন শাসকদের মনোভাব বুঝতেও নানা কসরৎ করেছেন তারা।
দামেস্ক থেকে বার্তা সংস্থা জানায়, যারা নতুন স্বাধীনতাকে স্বাগত জানিয়েছেন, সিরিয়ার রাজধানীর স্ট্যান্ড-আপ অভিনয়শিল্পী মেলকি মারদিনি তাদের একজন।
চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার দীর্ঘদিনের স্বৈরশাসক বাশার আল-আসাদের আকস্মিক পতনের কথা উল্লেখ করে তিনি মঞ্চে উঠে বলেন, ‘দুঃশাসনের পতন হয়েছে।’
বাশারের এই পতনের সাথে সাথে তার পরিবারেরও অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ের শাসনের অবসান ঘটেছে।
একটি আর্ট গ্যালারিতে অনুষ্ঠানটি চলাকালে দর্শকরা নীরব থাকায় ব্যাঙ্গাত্মক হাসি ও করতালির দিয়ে মারদিনি বলেন, ‘কি ব্যাপার? আপনারা কি এখনও (বাশারকে) ভয় পাচ্ছেন?’
২৯ বছর বয়সী এ অভিনেতা আরও বলেন, ‘আমরা কল্পনাও করতে পারিনি যে- এমন একটি দিন আসবে। আমরা এত স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারব।’
এখন স্বাধীনভাবে অভিনয়ের সংলাপ বলতে পারছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সিরিয়া অভিনয়ের জন্য ‘নিরাপদ স্থান। এখন আমরা স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছি। আমাদের কথায় বাশার ছাড়া কেউ অসন্তুষ্ট বা বিরক্ত হবেন না!
বাশারের শাসনামলে নির্বাচন নিয়ে রসিকতা, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি কর্মকর্তাদের ডলার পাচার, এমনকি প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ করলেও অভিনয় শিল্পীদের গ্রেপ্তার করা হতো বা তাদের আরও খারাপ পরিস্থিতির শিকার হতে হতো।
কৌতুক অনুষ্ঠান চলাকালে দর্শকদের সাথে কথা বলার সময় মারদিনি জানতে পারেন যে, দর্শক সারিতে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আছেন।
তিনি চিৎকার করে, ‘নতুন সিরিয়ায় একজন ত্রাতা!’- বলে সিরিয়ায় পাঁচ দশকের স্বৈরশাসনের পর মানসিক কষ্ট লাঘবে জনতা যেন চিকিৎসার জন্য মনোরোগ চিকিৎসকদের দিকে ছুটে যাচ্ছে- এমন অভিনয় করেন।
দুই ঘণ্টা ধরে এক নারীসহ ১৩ জন কৌতুক অভিনেতা সম্মিলিতভাবে স্টিরিয়া (হিস্টিরিয়া+সিরিয়া) মঞ্চস্থ করেন।
ঘটনাগুলো ভাগ ভাগ করে একএকজন অভিনয়শিল্পী পৃথকভাবে অভিনয় করেন।
বাশারের শাসন আমলে অন্যায়ভাবে একটি গ্রেপ্তারের ঘটনা, কীভাবে তারা বাধ্যতামূলক সেনাবাহিনীতে চাকুরি এড়িয়ে গিয়েছিল, কীভাবে তারা কালোবাজার থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে ডলার পাচার করেছিল-এই ঘটনাগুলো ব্যঙ্গাত্মকভাবে পরিবেশন করেন।
রামি জাবর নামে অপর একজন কৌতুক অভিনেতা মঞ্চে উঠেই বলেন, ‘সিরিয়া স্বাধীনতা চায়!’
তিনি নিষ্ঠুর গোয়েন্দা এজেন্টদের ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘মঞ্চে মুখাবরাত (গোয়েন্দা এজেন্ট) ছাড়া এটি আমাদের প্রথম শো।’
তিনি হোমসকে ‘বিপ্লবের রাজধানী’ হিসেবে অভিহিত করে নাটকের মাধ্যমে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। আরব বসন্তের প্রেক্ষিতে শহরটিতে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু হলে বাশার বাহিনী সেখানে নৃশংস দমন-পীড়ন শুরু করে।
একটি বিদেশি কোম্পানির বাণিজ্যিক প্রতিনিধি জাবর বলেন, তিনি সিরিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে কয়েকটি নিরাপত্তা পরিষেবার হাতে এক মাস আটকে ছিলেন। তারা তাকে মারধর ও নির্যাতন করে।
তিনি বলেন, সারাদেশের কৌতুক অভিনেতারাও একই অবস্থার শিকার হয়। তারাও ভীতিকর পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যান। কয়েক দশক ধরে চলা কঠোর শাসন সিরিয়ানদের শ্বাসরূদ্ধকর পরিস্থিতিতে ফেলে।
হুসেইন আল-রাভি শ্রোতাদেরকে অতীতে কখনোই তার ঠিকানা না দেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি ছিল অতীতের বিব্রতকর পরিস্থিতির উদাহরণ।
হুসেইন আল-রাভি শ্রোতাদের কাছে আসাদের কথা উল্লেখ করে জানতে চান, আমি আমি সবসময় ভীত যে, সে আবার ফিরে আসতে পারে। তবে আমি আমাদের সকলের জন্য একটি উন্নততর সিরিয়ার আশা করি।
শোতে উপস্থিত থাকা সাইদ আল-ইয়াখসি বলেন, বাক-স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়েছে।
৩২ বছর বয়সী দোকানদার বলেন, ‘শাসন পতনের শেষ সময়ে কঠোর বিধিনিষেধ ছিল। এখন আর কোনো বিধিনিষেধ নেই। কাউকে জবাবদিহি করতে হয় না। কারো ভয় নেই।’
ইসলামপন্থী ও সাবেক জিহাদি বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দ্রুত দামেস্কের দিকে অগ্রসর হয়ে আসাদের সরকারকে পতন ঘটানোর প্রসঙ্গে মারদিনি বলেন, ‘আমরা বিপ্লব ঘটাতে না পেরে ১৩ বা ১৪ বছর ধরে আমরা সেই অর্থে আমরা জীবিত ছিলাম না।'
২৩ বছর বয়সী ডেন্টিস্ট মেরি ওবায়েদ বলেন,আমরা আমাদের মনের কথা ব্যক্ত করি। সমস্ত সিরিয়ানদের জন্য তা ব্যক্ত করি।প্রত্যেক ব্যক্তি তাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে।
দর্শকরাও এ সময় তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
দেশের নতুন নেতৃত্ব প্রসঙ্গে ওবায়েদ বলেন, তিনি ‘তারা কী করে’ দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। ‘এরপর আমরা বিচার করব’। তবে এই মুহূর্তে, আমরা স্বাধীনতা ভোগ করছি। আশা করছি যে, আমরা হয়রানির লক্ষ্যবস্তু হব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপনীত হয়েছি। এক যুগ থেকে অন্য যুগে রূপান্তর ঘটেছে। এখন আমরা স্বাধীন। আমরা আমাদের সমস্ত দাবি রাখতে পারছি। এখন থেকে আর কখনো কোনো ভয় থাকবে না।