বাসস
  ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৫৮

ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলের হুমকি চীনের জন্য সতর্কতা: মেলোনি

মার্কিন নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১০ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বৃহস্পতিবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড দখলে সামরিক শক্তি ব্যবহারের হুমকিকে তিনি বিদেশি প্রতিদ্বন্দ্বীদের, বিশেষত চীনের প্রতি সতর্কবার্তা হিসেবে দেখেন, যাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী কৌশলগত স্বার্থে হাত না দেয়।

ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি ফ্লোরিডার পাম বিচে মার-এ-লাগো ক্লাবে আলাপ হয়।

মেলোনি বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাস্তবেই সামরিক শক্তি ব্যবহার করে গ্রিনল্যান্ড বা পানামা খাল দখল করতে চান। বরং তিনি ট্রাম্পের মন্তব্যগুলোকে চীন এবং অন্যান্য বৈশ্বিক খেলোয়াড়দের সতর্ক করার প্রয়াস হিসেবে দেখছেন, যেন তারা এমন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হস্তক্ষেপ না করে।

মেলোনি বলেন, 'আমার মনে হয়, আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অঞ্চল দখলের জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করবে না।'

তিনি বলেন, ট্রাম্প শুধু ইঙ্গিত দিচ্ছেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিকটবর্তী গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্বার্থ অন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীর অধীনে যেতে দেবেন না, বিশেষ করে চীনের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীদের।

মেলোনি আরও বলেন, 'আমার মতে, এই বক্তব্যগুলো একটি দৃঢ় বার্তা যে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলগত স্বার্থে অন্য প্রধান বৈশ্বিক খেলোয়াড়রা হস্তক্ষেপ করলে তা বরদাস্ত করা হবে না।'

তিনি আরও উল্লেখ করেন, ট্রাম্পের সতর্কবার্তার পেছনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ পানামা খাল এবং সম্পদসমৃদ্ধ গ্রিনল্যান্ডে চীনের বর্মান বাণিজ্যিক প্রভাব। তিনি তার মন্তব্যগুলোকে 'বৃহৎ শক্তিগুলোর মধ্যে দূর থেকে চলমান এক বিতর্ক' হিসেবে ব্যাখ্যা করেন।

বৃহস্পতিবার লন্ডনে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিও বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে ট্রাম্প সত্যিই গ্রিনল্যান্ড দখল কর নেবেন।

ল্যামি বলেন, ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত আচরণ এবং তার বক্তব্যের 'তীব্রতা' তার স্বভাবের অংশ, তবে 'আমাদের শুধু তার ভাষার ওপর নির্ভর না করে, তার কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে বিচার করতে হবে।'

এই সপ্তাহে ট্রাম্প গ্রিনল্যান্ড ও পানামা খাল দখলে সামরিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উড়িয়ে দেননি এবং এমনকি কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত করার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে উদ্বেগ সৃষ্টি করেন।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের বক্তব্য আমেরিকার শত্রুদের সাহস যোগাতে পারে, কারণ এটি ইঙ্গিত দেয় যে যুক্তরাষ্ট্র এমন সময়ে সীমান্ত পুনর্নির্ধারণের জন্য বলপ্রয়োগ গ্রহণযোগ্য মনে করছে যখন রাশিয়া ইউক্রেনে তার আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে এবং চীন তাইওয়ানকে দখলের হুমকি দিচ্ছে।

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল বারো বুধবার বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি বিশাল আর্কটিক দ্বীপ আক্রমণ করবে, যা ৬০০ বছরের বেশি সময় ধরে ডেনমার্কের অধীনে রয়েছে।

তিনি ফ্রান্স ইন্টার রেডিওতে বলেন, 'এটা স্পষ্ট যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কখনোই বিশ্বের অন্য কোনো দেশকে তার সার্বভৌম সীমানা আক্রমণ করতে দেবে না। আমরা একটি শক্তিশালী মহাদেশ।'

২০ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে শপথগ্রহণের দুই সপ্তাহ আগে ট্রাম্পের বক্তব্যকে সম্প্রসারণবাদী এজেন্ডার ইঙ্গিত বলে মনে করছেন।

বারো বলেন, 'আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন যে যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করবে কিনা, আমার উত্তর হবে- 'না'। তবে আমরা কি এমন একটি সময়ে প্রবেশ করেছি যেখানে এটি শক্তিমানদের টিকে থাকার লড়াই? তাহলে আমার উত্তর হবে- 'হ্যাঁ'।

তিনি আরও বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আতঙ্কিত বা অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন না হয়ে সতর্ক হতে হবে এবং শক্তিশালী হতে হবে।