বাসস
  ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:২৫
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:২৭

হোয়াইট হাউসের আয়তন কি ট্রাম্প ও মাস্ককে ধারণ করতে পারবে?

ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (বাসস) : আগামী সপ্তাহে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং একই দিনে টেকজায়ান্ট ইলন মাস্কও বাইবেলের ওপর হাত রেখে শপথ নিতে যাচ্ছেন। ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

আধুনিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি নজিরবিহীন যে ট্রাম্প এমন একজন উপদেষ্টার ছায়ায় হোয়াইট হাউসে যাবেন যিনি কেবল বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিই নন, একই সঙ্গে ট্রাম্পের মতই তারও রয়েছে আগ্রাসী উচ্চাকাঙ্ক্ষা, কট্টোর-ডানপন্থি রাজনীতি এবং মিডিয়ার প্রভাব।  

জানা গেছে যে, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইলন মাস্ক ‘ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ অর্থাৎ সরকারি দক্ষতা বিভাগের বিষয়ে মনোনিবেশ করেছেন। এই বিভাগের দায়িত্বে থাকবেন মাস্ক। 

মাস্ককে ফেডারেল ব্যয় এবং নিয়মকানুন কমানোর পরিকল্পনার দায়িত্বে নিযুক্ত করা হয়েছে।

উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনাগুলো ডানপন্থী মতাদর্শীদের কাছে জনপ্রিয় কিন্তু ট্রাম্প শিবির ব্যাখ্যা করেনি যে এই ধরনের ব্যাপক পরিবর্তন কীভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব এড়াবে, কারণ মাস্ক একজন প্রধান সরকারি ঠিকাদার।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ইলন মাস্ক গত বছরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে তার সমর্থন ঘোষণা করেন। অথচ ২০২২ সালে তিনি  ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পতনের ইঙ্গিত দিয়ে মন্তব্য করেছিলেন ‘ট্রাম্পের টুপি খুলে ঝুলিয়ে রাখা এবং সূর্যাস্তের দিকে যাত্রা করার সময় এসেছে।’

ট্রাম্পের অন্যতম দৃশ্যমান এবং সুপরিচিত সমর্থক হিসেবে প্রকাশ্যে আসেন ইলন মাস্ক। ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করতে ‘আমেরিকা পিএসি’ নামে একটা রাজনৈতিক অ্যাকশন কমিটি গঠন করেছিলেন তিনি। এই নির্বাচনী চক্রের জন্য ১১.৯ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছিলেন মাস্ক।

তাদের এই সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে বড় বড় ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব বা সিইওদের প্রচলিত আচরণ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা, যারা তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সম্ভাব্য দাতাদেরকে খুশি করতে হ্যাম্পটনের বিশাল বাড়িতে ব্যয়বহুল ভোজ আয়োজনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেন।

ফলে স্বভাবতই ইলন মাস্ক-ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যতিক্রমী সম্পর্ক ও  ট্রাম্পের প্রতিমাস্কের অনুপ্রেরণার পিছনে মাস্কের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন তুলছেন পর্যবেক্ষকরা।

কেউ কেউ এই বলে উপহাস করছেন যে মাস্কের অনুপ্রেরণার পেছনে যে পাহাড় প্রমাণ স্বার্থের দ্বন্দ্ব, সেই প্রশ্নে ওভাল অফিস কি দুই ব্যক্তিত্বের জন্য যথেষ্ট বড় হবে? 

মধ্যবর্তী নির্বাচনের হতাশাজনক ফলাফল সত্ত্বেও পরবর্তী মার্কিন রাষ্ট্রপতি হওয়ার জন্য আমেরিকানদের একটি ‘কণ্ঠস্বর’ দেওয়ার এবং ‘জাতির কাঠামো পুনরুদ্ধার করার’প্রতিশ্রুতি দিয়ে ট্রাম্পের শীর্ষ পদে তৃতীয়বার ঝুকে পড়াকে সমর্থন করার মাধ্যমে ট্রাম্প-মাস্কের মধ্যে এক রাজনৈতিক বন্ধন সৃষ্টি করেছেন।

মেসেজিংয়ের উপর এই জুটির অসাধারণ সম্মিলিত ক্ষমতা রয়েছে। মাস্ক তার এক্স সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মকে ডানপন্থীদের জন্য একটি আশ্রয়স্থলে পরিণত করেছেন। ট্রাম্প একটি সম্পূর্ণ রক্ষণশীল মিডিয়া ইকোসিস্টেম থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ কভারেজ উপভোগ করছেন।’ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মার্গারেট ও'মারা বলেন, ‘ট্রাম্পের মতো, মাস্কও এমন কিছু কথা এবং কাজের মাধ্যমে মনোযোগ আকর্ষণের মূল্য বোঝেন যা কিছু লোক আপত্তিকর বলে মনে করে। তিনি চ্যালেঞ্জিং নিয়ম পছন্দ করেন।’

জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব মিডিয়া এন্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক পিটার লোজ বলেন, ‘ইলন মাস্ক ধনাঢ্য এবং সাহসী এবং তিনি ক্রমাগত ডোনাল্ড ট্রাম্পকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে তিনি ট্রাম্প অত্যন্ত চমৎকার মানুষ।’ যা শুনতে ডোনাল্ড ট্রাম্প পছন্দ করেন।’

তবে, রোমের লুইস গুইডো কার্লির ইতিহাসের অধ্যাপক লরেঞ্জো ক্যাসেলানি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন  ‘এত দীর্ঘমেয়াদে সংঘর্ষ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।’