শিরোনাম
ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন, যা জ্বালানি থেকে শুরু করে অটোমোবাইল খাত পর্যন্ত সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে এবং মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙত্মা করা হচ্ছে।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ট্রাম্প তার প্রতিবেশী কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তারা অবৈধ অভিবাসন এবং মার্কিন সীমান্তে ফেন্টানিল প্রবাহ বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
এছাড়া, তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছেন, অভিযোগ করেছেন যে দেশটি এই মাদকের উৎপাদনে ভূমিকা রেখেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই তিনটি দেশেরই ‘বড় বাণিজ্য ঘাটতি’ রয়েছে, যা ট্রাম্পের অন্যতম উদ্বেগের বিষয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের তিন প্রধান বাণিজ্য অংশীদারের ওপর ব্যাপক হারে শুল্ক আরোপ ট্রাম্পের জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয়বৃদ্ধির কারণে জনসাধারণের অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প।
মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি
উচ্চ আমদানি ব্যয় ‘ভোক্তা ব্যয় ও ব্যবসার বিনিয়োগ কমিয়ে দিতে পারে,’ বলেছেন ইওয়াই প্রধান অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ডাকো।
তার মতে, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে মূল্যস্ফীতি ০.৭ শতাংশ পয়েন্ট বাড়তে পারে, তবে পরে তা ধীরে ধীরে কমে আসবে।
তিনি মন্তব্য করে, ‘প্রশাসন ব্যবসাবান্ধব নীতির কথা বললেও বাণিজ্য সংক্রান্ত বাড়তে থাকা অনিশ্চয়তা আর্থিক বাজারের অস্থিরতা বাড়াবে এবং বেসরকারি খাতের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।’
তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের দাবি, কর হ্রাস ও বিধিনিষেধ শিথিল করার পরিকল্পনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সহায়ক হবে।
- পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত -
ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতারা ট্রাম্পের পরিকল্পনার সমালোচনা করেছেন। শুক্রবার সিনেটের সংখ্যালঘু দলের নেতা চাক শুমার বলেন, ‘আমি উদ্বিগ্ন যে নতুন শুল্ক মার্কিন ভোক্তাদের জন্য আরও ব্যয়বৃদ্ধির কারণ হবে।’
কানাডা ও মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কৃষিপণ্য সরবরাহকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে, যেখান থেকে প্রতি বছর কয়েক দশমিক বিলিয়ন ডলারের আমদানি হয়।
শুল্ক বৃদ্ধির ফলে গাড়ি শিল্পও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল মোবিলিটির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রিত গাড়ির ২২ শতাংশই ছিল কানাডা ও মেক্সিকো থেকে আমদানি করা।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও যন্ত্রাংশ সরবরাহকারীরা পুরো অঞ্চলে উৎপাদন পরিচালনা করে। ফলে শুল্কের ফলে গাড়ির দাম বাড়তে পারে।
শুমার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের উচিত চীনের মতো বাণিজ্য ব্যবস্থাকে নিজেদের সুবিধামতো চালায় এমন প্রতিযোগীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়া এবং আমাদের মিত্রদের বিরুদ্ধে না যাওয়া।’
ট্রাম্প যদি শুল্ক আরোপ করেন, তবে কানাডা ও মেক্সিকো পাল্টা ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এতে বাণিজ্য সংঘাত আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
তবে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট শুক্রবার বাণিজ্যযুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শুক্রবার বলেন, ‘অটোয়া একটি পরিকল্পিত, দৃঢ় কিন্তু যৌক্তিক ও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দিতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এটিচাই না। কিন্তু যদি ট্রাম্প এগিয়ে যান, তাহলে আমরাও ব্যবস্থা নেব।’
মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবম বলেছেন, তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো শুল্ক ঘোষণার জন্য ‘শান্ত ও বিচক্ষণভাবে’ অপেক্ষা করবে।
তিনি জানান, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের পরিকল্পনা এ, পরিকল্পনা বি, পরিকল্পনা সি রয়েছে।’ তবে এ নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
- তেলের ওপর শুল্ক হ্রাসের চিন্তা -
আটলান্টিক কাউন্সিলের ডেভিড গোল্ডউইন ও জোসেফ ওয়েবস্টার জানিয়েছেন, কানাডা ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলোর কাছ থেকে অপরিশোধিত তেলের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি ‘মার্কিন জ্বালানি মূল্যে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য-পশ্চিমাঞ্চলে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
ট্রাম্প এর আগে কানাডা ও মেক্সিকো থেকে তেল আমদানির ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছিলেন এবং শুক্রবার তিনি বলেন, তিনি তেলের ওপর শুল্কের হার কমানোর কথা ভাবছেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্ভবত আমরা শুল্ক কিছুটা কমিয়ে আনব।’
তিনি যোগ করেন, ‘আমরা মনে করি, এটিকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারব।’
কংগ্রেশনাল রিসার্চ সার্ভিস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মোট অপরিশোধিত তেল আমদানির প্রায় ৬০ শতাংশই আসে কানাডা থেকে।
কানাডার অপরিশোধিত তেল যুক্তরাষ্ট্রে পরিশোধন করা হয় এবং এ অঞ্চলের অনেক স্থানে এর সহজ বিকল্প নেই।
তবে শুল্কের ফলে কানাডার উৎপাদকরা ক্ষতির মুখে পড়বে এবং মার্কিন পরিশোধনাগারগুলোও উচ্চ ব্যয়ের সম্মুখীন হবে বলে মনে করেন তেল মূল্য সংক্রান্ত তথ্য পরিষেবা প্রতিষ্ঠান ওপিআইএস-এর টম ক্লোজা।
এর ফলে পেট্রোলের দাম বাড়তে পারে।