শিরোনাম
ঢাকা, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বিশ্বনেতারা বুধবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা উপত্যকা অধিগ্রহণ এবং ফিলিস্তিনিদের 'স্থায়ীভাবে' অন্য দেশে পুনর্বাসনের প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের গাজাকে 'মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা' হিসেবে পুনর্নির্মাণের প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র নিন্দার জন্ম দেয় এবং মার্কিন মিত্র দেশগুলোর মধ্যে গভীর সংশয় সৃষ্টি করে।
হামাস
গাজা শাসক গোষ্ঠী হামাস বলেছে যে, ট্রাম্পের প্রস্তাব 'শুধু আগুনে ঘি-ই ঢালবে'। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, 'আমাদের ফিলিস্তিনি জনগণ ... কোনো দেশকে আমাদের ভূমি দখল করতে বা আমাদের মহান ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে দেবে না, যারা আমাদের ভূমি দখলমুক্ত করতে এবং আমাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে রক্ত দিয়েছে, যার রাজধানী হবে জেরুজালেম।'
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ট্রাম্পের প্রস্তাবের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি নেতৃত্ব 'গাজা উপত্যকা দখল ও ফিলিস্তিনিদের তাদের জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত করার আহ্বানকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে'। আব্বাসের দপ্তর এক বিবৃতিতে জানায়, 'ফিলিস্তিনিদের বৈধ অধিকার কোনোভাবেই আলোচনার বিষয় নয়।'
ইসরাইল
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, যিনি ট্রাম্পের পাশে দাঁড়িয়ে তার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন, বলেন যে এই ধারণাটি 'মনোযোগের দাবিদার' এবং মার্কিন নিয়ন্ত্রণে গাজা উপত্যকা 'ইতিহাস বদলে দিতে পারে'।
ইসরাইলের দক্ষিণপন্থী অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মট্রিচ পরে 'ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের বিপজ্জনক ধারণা চিরতরে দাফন করার' শপথ নেন।
জাতিসংঘ
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার প্রধান ট্রাম্পের বিবৃতিকে 'খুবই বিস্ময়কর' বলে মন্তব্য করেছেন। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার ফিলিপ্পো গ্রান্ডি এএফপিকে বলেন, ধারণাটির বিস্তারিত কিছু পরিষ্কার না হওয়ায় এটি একটি 'সচেতন সমস্যা' হিসেবে মন্তব্য করা কঠিন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ফলকার তুর্ক পরে জোর দিয়ে বলেন, দখলকৃত এলাকা থেকে লোকজনকে বহিষ্কার করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। 'স্বাধীনতার অধিকার আন্তর্জাতিক আইনের একটি মৌলিক নীতি, এবং সকল রাষ্ট্রকে এটি সুরক্ষা দিতে হবে,' তুর্ক বলেন।
চীন
চীন গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের 'বাধ্যতামূলক স্থানান্তর'-এর বিরোধিতা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, 'চীন সর্বদাই মনে করে যে, ফিলিস্তিনিদের শাসন তাদের সীমানার মধ্যে থাকা উচিত, যা গাজা উপত্যকার পরবর্তীকালের শাসনের মৌলিক নীতি।'
ফ্রান্স
ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গাজা কোনো 'তৃতীয় পক্ষের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত' হওয়া উচিত নয়। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, 'ফ্রান্স দুই রাষ্ট্রের সমাধান বাস্তবায়নের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাবে, যা ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনিদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে।'
তুরস্ক
তুরস্ক ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এটিকে 'অগ্রহণযোগ্য' বলে অভিহিত করেছে। তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান আনাদোলু সংবাদ সংস্থাকে বলেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর 'আমরা বা এ অঞ্চলের কেউই মেনে নেবে না' এবং 'এমন আলোচনা উত্থাপন করাও ভুল'।
মিশর
মিশর ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে এবং গাজা উপত্যকা শাসনের জন্য কর্তৃপক্ষের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাতি দ্রুত গাজা পুনর্গঠনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের বিতাড়ন না করে গাজা পুনর্গঠন করতে হবে।' কায়রোতে ফিলিস্তিনি প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মুস্তফার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং 'প্রাথমিক পুনরুদ্ধার প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব' ও 'ত্বরিত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার' ওপর জোর দেন।
ব্রিটেন
প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের 'গাজায় ফিরে যাওয়ার অধিকার' থাকতে হবে, এবং দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জার্মানি
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্নালেনা বেয়ারবক বলেন, 'এটি স্পষ্ট যে গাজা, পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনিদের ভূখণ্ড। এগুলো ভবিষ্যত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করবে।'
অস্ট্রেলিয়া
প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবেনিজ বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার দেশের দীর্ঘস্থায়ী সমর্থন অপরিবর্তিত রয়েছে। 'অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান আজ সকালে যেমন ছিল, গত বছর যেমন ছিল, তেমনই আজও রয়েছে,' তিনি বলেন।
ব্রাজিল
প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের ধারণাটিকে 'প্রায় অস্পষ্ট বিষয়' বলে অভিহিত করেছেন। ব্রাজিলীয় রেডিওকে লুলা বলেন, 'গাজায় যা ঘটেছে তা ছিল একটি জাতিগত নির্মূল অভিযান, এবং সৎভাবে বলতে গেলে, আমি জানি না, ইসরাইলের সমর্থনদাতা যুক্তরাষ্ট্র গাজা সামলানোর জন্য সেরা জায়গায় রয়েছে কি না।'