শিরোনাম
ঢাকা, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের প্রায় সব দেশ জাতিসংঘ নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নতুন জলবায়ু লক্ষ্যমাত্রা জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বড় অর্থনীতিগুলোর ওপর চাপ থাকলেও তারা সময়মতো প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
প্যারিস থেকে এএফপি জাতিসংঘের একটি ডাটাবেজের বরাত দিয়ে জানায়, প্যারিস চুক্তির আওতায় প্রায় ২০০টি দেশের জন্য নির্ধারিত ১০ ফেব্রুয়ারি সময়সীমার মধ্যে মাত্র ১০টি দেশ তাদের নতুন কার্বন নির্গমন কমানোর পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।
জলবায়ু চুক্তির শর্ত ও বাস্তবতা
প্যারিস চুক্তি অনুসারে, প্রতিটি দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে নতুন করে কার্বন নির্গমন কমানোর উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণ করা প্রয়োজন। ২০৩৫ সালের মধ্যে নির্গমন হ্রাসের একটি স্পষ্ট পরিকল্পনা জমা দেওয়ার কথা ছিল।
তবে বাস্তবতা হলো, বিশ্বব্যাপী কার্বন নির্গমন বেড়েই চলেছে। অথচ বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে সহনীয় মাত্রায় রাখতে হলে এই দশকের মধ্যেই নির্গমন প্রায় অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে।
জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক প্রধান সাইমন স্টিয়েল বলেছেন, ‘এই নতুন প্রতিশ্রুতিগুলো চলতি শতকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালা।’
নেতৃত্বের অভাবে পিছিয়ে বিশ্ব
তবে এখন পর্যন্ত চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ প্রধান কার্বন নির্গমনকারী দেশগুলো নতুন লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণা করেনি।
বিশ্বের ২০টি বৃহৎ অর্থনীতির (জি-২০) মধ্যে মাত্র তিনটি- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ব্রাজিল (যারা এই বছরের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আয়োজক) সময়সীমার মধ্যে তাদের পরিকল্পনা জমা দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি অনেকটাই প্রতীকী, কারণ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
দায়বদ্ধতা ও দেরির কারণ
জাতিসংঘের এই লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এটি দেশগুলোর দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিশ্বনেতাদের অন্য অগ্রাধিকার ও রাজনৈতিক বাস্তবতার কারণে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
লন্ডনভিত্তিক থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইইডি) বিশেষজ্ঞ ইবোনি হল্যান্ড মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পিছু হটাটা অবশ্যই জলবায়ু আন্দোলনের জন্য ধাক্কা। কিন্তু এটি দেরির একমাত্র কারণ নয়।’
ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা ও জলবায়ু কূটনীতি
বিশ্লেষকদের মতে, ‘বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ভূরাজনৈতিক পরিবর্তন জলবায়ু বিষয়ে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাকে কঠিন করে তুলছে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ঐতিহ্যগতভাবে জলবায়ু নীতিতে অগ্রণী হলেও, ভবিষ্যৎ নির্বাচন ও অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণে পিছিয়ে রয়েছে।
সর্বশেষ সময়সীমার মধ্যে পরিকল্পনা জমা দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইকুয়েডর, সেন্ট লুসিয়া, নিউজিল্যান্ড, অ্যান্ডোরা, সুইজারল্যান্ড ও উরুগুয়ে।
বড় দেশগুলোর দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন
মালাউইর কূটনীতিক ও লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রিজ গ্রুপের চেয়ারম্যান ইভান্স এনজেওয়া বলেছেন, "অনেক উন্নয়নশীল দেশ প্রয়োজনীয় অর্থ ও কারিগরি দক্ষতার অভাবে সময়মতো পরিকল্পনা জমা দিতে পারেনি। কিন্তু যারা সবচেয়ে বেশি দূষণের জন্য দায়ী, তাদের এগিয়ে আসতে হবে।"
বিশ্লেষকদের মতে, দেরি হলেও কিছু দেশ গুণগত মানসম্পন্ন পরিকল্পনা প্রস্তুত করতে চাইছে। তবে অতিরিক্ত দেরি হলে জলবায়ু ইস্যুতে বিশ্বব্যাপী উদ্যোগ ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ-৩০ আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে আগামী সেপ্টেম্বরে দেশগুলোকে শক্তিশালী পরিকল্পনা জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনালের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ট্রেসি কার্টি সতর্ক করে বলেছেন, ‘বিশ্বে জলবায়ু সংকট দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে। দেশের নেতারা যদি দেরি করেন, প্রকৃতি কিন্তু অপেক্ষা করবে না।’