বাসস
  ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৩:৩২

শান্তি প্রতিষ্ঠায় পুতিনের পুনঃহামলা রুখতে মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তায় ট্রাম্পের ওপর চাপ দেবেন স্টারমার 

ঢাকা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার বৃহস্পতিবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে দেখা করে ইউক্রেনে যেকোনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মার্কিন সমর্থনে নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য অনুরোধ করবেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিনকে আবার আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখার এটাই একমাত্র উপায়। ওয়াশিংটন থেকে এএফপিএ খবর জানায়।

বুধবার রাতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সফরের ধারাবাহিকতায় স্টারমার ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন। পুতিনের সাথে আলোচনায় মার্কিন নেতা কিয়েভে স্বার্থকে ছাড় দিতে যাচ্ছেন বলে ইউরোপে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যে স্টারমার এই সফর করছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলে যুদ্ধের অবসান ঘটলে ইউক্রেনে ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর প্রস্তাবে লন্ডন এবং প্যারিস নেতৃত্ব দিচ্ছে।

যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি চুক্তির লক্ষ্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার আকস্মিক সিদ্ধান্ত নেন ট্রাম্প।

স্টারমার যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পরিকল্পনার অধীনে যুদ্ধবিরতি রক্ষার অংশ হিসেবে ইউক্রেনে ব্রিটিশ সেনা পাঠানোর প্রস্তাব করেন। তবে তিনি বলেন, স্থায়ী শান্তি নিশ্চিত করার জন্য একটি আমেরিকান নিরাপত্তা নিশ্চয়তা প্রয়োজন হবে।

ট্রাম্প রাশিয়ার পক্ষ নিচ্ছেন এবং কয়েক দশক ধরে চলা ট্রান্সআটলান্টিক জোট ভেঙে ফেলবেন ইউরোপে এমন উদ্বেগের মধ্যে তারা বিনিময়ে মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তার দাবি জানাচ্ছেন।

ট্রাম্প ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেননি। তিনি বুধবার বলেন, তিনি চান ‘ইউরোপ এটি করুক, কারণ ইউরোপ দেশটির পাশের প্রতিবেশী।’

স্টারমার ওয়াশিংটনে বিমানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘পুতিনকে নিরুৎসাহিত করার জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা যথেষ্ট হতে হবে।’ ‘যদি কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়াই যুদ্ধবিরতি হয়, তাহলে এটি তাকে (পুতিনকে) অপেক্ষা করার এবং আবার এখানে আসার সুযোগ দেবে, কারণ ইউক্রেনের প্রতি তার উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেশ স্পষ্ট।’

ইউরোপীয়রা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য প্রেরিত যেকোনো সৈন্যকে সমর্থন করার জন্য বিমান কভার, গোয়েন্দা তথ্য এবং রসদ সরবরাহের মতো সম্ভাব্য মার্কিন অবদানের সন্ধান করছে।

স্টারমার,  মার্কিন  প্রেসিডেন্টের সাথে একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও করবেন, তিনি ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্প ও ইউরোপের মধ্যে ‘সেতু’ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।

ট্রাম্প নিয়মিতভাবে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ন্যাটোর জন্য আরও বেশি অর্থ প্রদানের বিরোধিতা করে আসছেন। স্টারমার মঙ্গলবার ট্রাম্পের উদ্দেশে, যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা ব্যয় ২০২৭ সালের মধ্যে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করার ঘোষণা দেন।

এদিকে স্টারমার আশা করছেন, ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর চাপ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া ব্যাপক শুল্ক এড়াতে পারবেন।

সোমবার ম্যাখোঁর মতো করেই তিনি ইউক্রেন নিয়ে তাদের ভাবনায় ট্রাম্পের সমর্থন আদায়ের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।

গত সপ্তাহে ট্রাম্প স্টারমারকে ‘খুব ভালো লোক’ বলে অভিহিত করেন। তবে তিনি অভিযোগ করেন যে তিনি এবং ম্যাখোঁ ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ করার জন্য ‘কিছুই করেননি’।

ইউক্রেন বা তার ইউরোপীয় মিত্রদের অন্তর্ভুক্ত না করে রাশিয়ার সাথে আলোচনা শুরু করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মিত্রদের হতবাক করে দেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘একনায়ক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ট্রাম্প আক্রমণত্মক মন্তব্য করেন এবং মস্কোর আলোচনায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার হামলার জন্য কিয়েভকে দোষারোপ করার বিষয়ে প্রতিধ্বনিত করায় উদ্বেগ তীব্রতর হয়। তবে সর্বোপরি, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে রক্তক্ষয়ী লড়াই বন্ধ করার জন্য একটি চুক্তির অগ্রগতির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

জেলেনস্কি শুক্রবার হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের বিরল খনিজ পদার্থে ওয়াশিংটনের প্রবেশাধিকার প্রদানের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন। ট্রাম্প মার্কিন সামরিক সহায়তার প্রতিদান হিসেবে এটি দাবি করেছেন।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আশা করছেন, এই চুক্তি ভবিষ্যতে মার্কিন সহায়তার নিশ্চয়তা প্রদান করবে।

স্টারমার রোববার ব্রিটেনে জেলেনস্কি, ম্যাখোঁ ও অন্যান্য ইউরোপীয় নেতাদের আলোচনায় আমন্ত্রণ জানাবেন।

ব্রিটেন এবং ফ্রান্স শান্তিরক্ষী পাঠানোর প্রস্তাব দেওয়ার সাথে সাথে, একটি সম্ভাব্য চুক্তি আকার নিতে শুরু করেছে।  তবে মস্কো এবং ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের ওপর চুক্তিটি নির্ভর করছে।

যেকোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তার জন্য মার্কিন সমর্থনের বিষয়ে ট্রাম্প নীরব রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।