বাসস
  ০৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০

গাজায় নিহত সহায়তাকর্মীদের মৃত্যুর আগের শেষ মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ

ঢাকা, ৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, গাজায় নিহত এক সহায়তাকর্মীর মোবাইল থেকে উদ্ধার করা একটি ভিডিওতে তাদের শেষ মুহূর্তের ফুটেজগুলো দেখানো হয়েছে। ভিডিওতে স্পষ্টভাবে চিহ্নিত অ্যাম্বুল্যান্স ও জরুরি আলোর মধ্যে তীব্র গুলির শব্দ শোনা গেছে।

গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানিয়েছে।

জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, গত ২৩ মার্চ ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৫ জন মানবিক সহায়তা কর্মী নিহত হন। নিহত মানবিক কর্মীর মধ্যে এই সাহায্য কর্মীও ছিলেন। 

তবে ইসরাইলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কোনো অ্যাম্বুল্যান্সে ‘এলোপাতাড়ি হামলা’ চালায়নি, বরং ‘সন্দেহজনক যানবাহনে’ আসা ‘সন্ত্রাসীদের’ লক্ষ্য করেই গুলি চালানো হয়।

সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল নাদাভ শোশানি জানান, যে গাড়িগুলোর ওপর গুলি চালানো হয়েছে, সেগুলোর জন্য আগে থেকে অনুমোদন ছিল না এবং সেগুলোর আলোও বন্ধ ছিল। 

তবে শনিবার রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃক প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজটিতে দেখা গেছে, বাস্তব ঘটনার সঙ্গে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এসব দাবি সাংঘর্ষিক। ভিডিওতে দেখা যায়, হেডলাইট ও জরুরি বাতি চালু অবস্থায় অ্যাম্বুল্যান্সগুলো চলছিল।

ছয় মিনিট ৪২ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দৃশ্যত একটি চলন্ত গাড়ির ভেতর থেকে ধারণ করা হয়েছে। তাতে একটি লাল রঙের দমকলের গাড়ি ও অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে রাতভর অবিরাম স্বয়ংক্রিয় গুলিবর্ষণের মধ্যে চলতে দেখা যাচ্ছে। 

এগুলো রাস্তায় থেমে একটি অন্য গাড়ির পাশে দাঁড়ালে দুজন ইউনিফর্মধারী ব্যক্তি গাড়ি থেকে নামেন। এর পরই তীব্র গুলির শব্দ শোনা যায়।

ভিডিওতে দুইজন চিকিৎসাকর্মীর কণ্ঠও শোনা যায়।

একজন বলেন, ‘গাড়িটা, গাড়িটা’, অন্যজন উত্তর দেন, ‘মনে হয় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।’ এর কয়েক সেকেন্ড পরই গুলির শব্দ শুরু হয় ও স্ক্রিন কালো হয়ে যায়।

ফিলিস্তিন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানায়, নিহত সহায়তাকর্মী রিফাত রাদওয়ানের মোবাইল ফোন থেকে এই ভিডিওটি উদ্ধার করা হয়েছে। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, ‘এই ভিডিও নির্ভেজালভাবে প্রমাণ করে, অ্যাম্বুল্যান্সে ইসরাইলি বাহিনীর এলোপাতাড়ি হামলা না চালানোর দাবি মিথ্যা। 

রেড ক্রিসেন্টের মুখপাত্র নেবাল ফারসাখ সাংবাদিকদের বলেন যে, ইসরাইলি সৈন্যরা ‘চিকিৎসকদের ওপর উন্মত্তভাবে গুলি চালিয়েছে’।

ফারসাখ বলেন, ‘আমরা তখন স্পষ্টভাবে সৈন্যদের হিব্রু ভাষায় কথা বলতে শুনতে পেলাম’ আসাদ নামে পরিচিত একজন চিকিৎসকের ভাগ্য এখনও অজানা রয়ে গেছে। ’আমরা বিশ্বাস করি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার রাতে একজন ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, গত ২৩শে মার্চ ভোরে দুটি ঘটনা ঘটেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, প্রথমটি ঘটে স্থানীয় সময় ভোর ৪টায়, যখন সৈন্যরা হামাসের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়িতে গুলি চালায়, এতে দুইজন নিহত ও একজনকে আটক করা হয়। দ্বিতীয়টি ঘটে দুই ঘন্টা পরে।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আট কর্মী, গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার ছয় সদস্য ও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউ-এর এক কর্মী। 

তাদের লাশ রাফার কাছে একটি গণকবরে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় অফিস (ওসিএইচএ)। 

হামাস ইসরাইলি বাহিনীকে ‘ভুক্তভোগীদের গণকবরে দাফন করে এবং সত্য গোপন করে অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার ইচ্ছাকৃত প্রচেষ্টা’ বলে অভিযুক্ত করেছে। ওসিএইচএ জানিয়েছে যে ২৩শে মার্চ ভোরে ইসরাইলি বাহিনী প্রথম দলটিকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল।