শিরোনাম
ঢাকা, ৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): সারা বছর ধরে তুষারে সাদা হয়ে থাকা পাকিস্তানের অসম্ভব উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে পানির অভাবের সাথে লড়াই করা কৃষকরা তাদের নিজস্ব বরফের স্তূপ তৈরি করেছেন।
পাকিস্তানের হুসেইনাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে শীতকাল উষ্ণ হওয়ার ফলে তুষারপাত ও পরবর্তী মৌসুমী তুষার গলানোর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
কারাকোরাম পর্বতমালার ছায়ায় ২ হাজার ৬শ’ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত স্কার্দু উপত্যকার কৃষকরা তাদের আপেল ও এপ্রিকট বাগানে সেচ দেওয়ার জন্য অনলাইনে সাহায্যের জন্য অনুসন্ধান করেছিলেন।
গোলাম হায়দার হাশমি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ইউটিউব থেকে কৃত্রিম হিমবাহ পেয়েছি।’
তারা ভারতীয় অঞ্চল লাদাখের পরিবেশ কর্মী ও প্রকৌশলী সোনম ওয়াংচুকের ভিডিও দেখেছিল। যিনি প্রায় ১০ বছর আগে এই কৌশলটি তৈরি করেছিলেন।
শীতের ঠান্ডার সময় পাইপ দিয়ে গ্রামে পানি সরবরাহ করা হয় ও বাতাসে ছিটানো হয়।
বালতিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাকির হোসেন জাকির বলেন, পানিকে এমনভাবে চালিত করতে হবে, যাতে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে নেমে গেলে বাতাসে জমাট বাঁধে, যার ফলে বরফের স্তম্ভ তৈরি হয়।’
বরফটি বৌদ্ধ স্তূপের মতো শঙ্কু আকারে তৈরি হয় এবং সংরক্ষণ ব্যবস্থা হিসেবে কাজ করে। বসন্ত জুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে ক্রমাগত গলে যায়।
গিলগিট-বালতিস্তানে ১৩ হাজার হিমবাহ রয়েছে, যা মেরু অঞ্চলের বাইরে পৃথিবীর অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বেশি।
তাদের সৌন্দর্য এই অঞ্চলটিকে দেশের শীর্ষ পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি করে তুলেছে। পুরাতন সিল্ক রোডের ওপর সুউচ্চ শৃঙ্গগুলো এখনও চেরি বাগান, হিমবাহ ও বরফ-নীল হ্রদের মধ্যে পর্যটকদের পরিবহনকারী একটি মহাসড়ক থেকে দৃশ্যমান।
আফগানিস্তান থেকে মিয়ানমার পর্যন্ত বিস্তৃত হিন্দুকুশ-হিমালয় পর্বতমালার বিশেষজ্ঞ শের মুহাম্মদ বলেন, এই অঞ্চলের বেশিরভাগ পানি সরবরাহ বসন্তে বরফ গলে যাওয়ার ফলে আসে, গ্রীষ্মকালে বার্ষিক হিমবাহ গলে যাওয়ার ফলে কিছুটা অংশ আসে।
ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি)-এর গবেষক মুহাম্মদ এএফপিকে বলেন, ‘অক্টোবরের শেষ থেকে এপ্রিলের শুরু পর্যন্ত আমরা ভারী তুষারপাত পাচ্ছিলাম। কিন্তু গত কয়েক বছরে এটি বেশ শুষ্ক।
গিলগিট-বালতিস্তানে প্রথম ‘বরফ স্তূপ’ তৈরি করা হয়েছিল ২০১৮ সালে।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য জাতিসংঘ-পাকিস্তান পরিকল্পনা, জিএলওএফ-২-এর প্রাদেশিক প্রধান রশিদ-উদ্দিন বলেন, এখন প্রতি শীতে ২০টিরও বেশি গ্রামে এই জলাধার তৈরি হয় এবং ১৬ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা জলাধার বা ট্যাঙ্ক তৈরি না করেই পানির সুবিধা পান।’
কৃষক মুহাম্মদ রাজা এএফপিকে বলেন যে, এই শীতে তার গ্রামে হুসেনাবাদে আটটি স্তূপ তৈরি করা হয়েছে, যা প্রায় দুই কোটি লিটার পানি বরফে আটকে রেখেছে।
তিনি বলেন, ‘রোপনের সময় আমাদের আর পানির অভাব হয় না। যেহেতু উপত্যকার ঢালে খোলা আকাশের জলাধার দেখা দিয়েছে।
উপত্যকার কৃষক আলী কাজিম বলেন, আগে জুন মাসে পানির জন্য আমাদের হিমবাহ গলে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হত।
কারাকোরাম পর্বতমালাসহ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া পাকিস্তান ও বিশ্বজুড়ে হিমবাহ দ্রুত গলে যাচ্ছে, যা দীর্ঘমেয়াদে বন্যার ঝুঁকি ও পানি সরবরাহ হ্রাসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।
১৯৮১ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পাকিস্তানের তাপমাত্রা বৈশ্বিক গড়ের তুলনায় দ্বিগুণ দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।