বাসস
  ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৬

ইরান পরমাণু আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘বাস্তব ও ন্যায্য’ চুক্তি চায় 

ঢাকা, ১২ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইরান শুক্রবার বলেছে, তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচিতে একটি ‘বাস্তব এবং ন্যায্য’ চুক্তি চায়। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে উচ্চ-পর্যায়ের আলোচনার আগে আপস করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে এবং জোর দিয়ে বলছে, তেহরানের পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন কিন্তু ইরান যদি তা প্রত্যাখ্যান করে তবে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে চিঠি পাঠালে শনিবার ওমানে দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষরা বৈঠকে বসতে চলেছে।

খামেনির উপদেষ্টা আলী শামখানি এক্স-এক পোস্টে বলেছেন, ‘কেবল মাত্র ক্যামেরার সামনে কথা বলা এবং প্রদর্শন করা তো দূরের কথা, তেহরান একটি ‘বাস্তব ও ন্যায্য’ চুক্তির চেষ্টা করছে। আলোচনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং বাস্তবায়নযোগ্য প্রস্তাব প্রস্তুত।’ 

তিনি নিশ্চিত করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি ‘আমেরিকার সাথে পরোক্ষ আলোচনার জন্য পূর্ণ কর্তৃত্ব নিয়ে’ ওমান যাচ্ছেন। তিনি আরো বলেছেন, ওয়াশিংটন যদি সদিচ্ছা দেখায়, তাহলে এগিয়ে যাওয়ার পথ ‘মসৃণ’ হবে।

ট্রাম্প তার রাষ্ট্রদূত স্টিভ উইটকফের আরাঘচির সাথে দেখা করার কয়েক ঘণ্টা আগে এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেছেন, আলোচনার আগে ট্রাম্প ইরানের পরমাণু অস্ত্র মজুতের বিরোধিতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তিনি বলেছেন, ‘আমি চাই ইরান একটি চমৎকার, মহান, সুখী দেশ হোক। কিন্তু তাদের পরমাণু অস্ত্র থাকতে পারবে না।’

ট্রাম্পের বন্ধু এবং বিশ্ব ভ্রমণকারী দূত উইটকফ আলোচনার আগে নমনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।

উইটকফ‘ দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’কে বলেছেন,  ‘আমাদের আজকের অবস্থান’ শুরু হয় ইরানকে তার পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করার দাবি দিয়ে। এদিকে ট্রাম্পের চারপাশে কট্টরপন্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি যা খুব কম লোকই আশা করেছে, ইরান কখনো মেনে নিবে না।’

উইটকফ সংবাদপত্রকে বলেছেন, ‘এর মানে এই নয় যে, প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা দুই দেশের মধ্যে আপস করার অন্য কোনো উপায় খুঁজে বের করব না।’

তিনি আরো বলেছেন,  ‘যেখানে আমাদের লাল রেখা থাকবে, সেখানে তোমাদের পরমাণু সক্ষমতার অস্ত্রায়ন থাকতে পারে না।’

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে একটি চুক্তিতে আলোচনা করেছিলেন যা ইরানকে তার বিতর্কিত কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করার ওপর জোর না দিয়ে পরমাণু অস্ত্র মজুত থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছিল।

ট্রাম্প চুক্তিটিকে অত্যন্ত দুর্বল বলে নিন্দা করেছেন এবং প্রথমবার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটি বাতিল করেন। পরিবর্তে ইরানের তেল খাতের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।

তেহরান এক বছর ধরে চুক্তিটি মেনে চলে এবং তারপর নিজস্ব প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে।

আলোচনার আগে, ট্রাম্প পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তারা ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপ ‘সম্পূর্ণরূপে’ সম্ভব।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান বলেছে, তেহরান জাতিসংঘের পরমাণু পরিদর্শকদের বহিষ্কার করতে পারে। যার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সতর্ক করে দিয়েছে, এটি ‘ক্রমশ তীব্র’ হবে।

ইরান ধারাবাহিকভাবে পারমাণবিক অস্ত্র মজুতের চেষ্টা অস্বীকার করে আসছে।

শুক্রবার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, ইরান ‘সরল বিশ্বাস এবং পূর্ণ সতর্কতার সাথে কূটনীতিকে একটি প্রকৃত সুযোগ দিচ্ছে।’

তিনি বলেছেন, ‘আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করা উচিত, যা তাদের শত্রুতাপূর্ণ বক্তব্য সত্ত্বেও নেওয়া হয়েছিল।’ 

গত বৃহস্পতিবার, ওয়াশিংটন ইরানের তেল নেটওয়ার্ক এবং পরমাণু কর্মসূচির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।

ইরানের পরমাণু সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলামি তাদের প্রভাবকে খাটো করে দেখেন নি।

তিনি বলেছেন, ‘তারা বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করেছিল, কিন্তু তারা দেশের অগ্রগতি থেকে বিরত রাখতে পারেনি।’

ইসলামি বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এখনো মনে করে, তারা হুমকি এবং ভয় দেখানো, মনস্তাত্ত্বিক অভিযান, অথবা বোকামি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে এই জাতি এবং দেশকে থামাতে পারবে।’

ওমান আলোচনার আগে, উইটকফ রাশিয়া সফর করেছেন। ইরানের সাথে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

ওবামা-যুগের চুক্তিকে সমর্থনকারী ইউরোপীয় ইউনিয়ন শুক্রবার বলেছে, ইরানের পরমাণু ইস্যুতে ‘কূটনীতির কোনো বিকল্প নেই।’

সোমবার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওয়াশিংটন সফরের সময় ট্রাম্প এই আলোচনার ঘোষণা দেন। নেতানিয়াহু সতর্ক করে বলেছেন, কূটনীতি দীর্ঘায়িত হলে সামরিক পদক্ষেপ ‘অনিবার্য’ হবে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে তেহরানের সমর্থন পাওয়া স্বাধীনতাকামী হামাসের ইসরাইলের ওপর হামলার পর ইরান ও ইসরাইল প্রথমবারের মতো একে অপরের ওপর সরাসরি আক্রমণ করেছে।

গাজায় হামাস ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। একইভাবে লেবাননে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ। আরব নেতাদের মধ্যে ইরানের প্রধান মিত্র সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের পতন ঘটে গত বছরের ৮ ডিসেম্বর।

পশ্চিমা বিশ্ব ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং আঞ্চলিক প্রভাব আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলেও তেহরান বলছে, তারা কেবল তার পরমাণু কর্মসূচি নিয়েই কথা বলবে।

ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তখত-রাভানচি বলেছেন, ‘যদি আমেরিকান পক্ষ অপ্রাসঙ্গিক বিষয় এবং দাবি উত্থাপন না করে এবং হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন না করে তাহলে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা উজ্জ্বল।’

এদিকে কট্টরপন্থী ইরানি গণমাধ্যমগুলো আলোচনা সম্পর্কে সন্দিহান।

‘কায়হান’ পত্রিকা সতর্ক করে বলেছে, নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় বসা  একটি ‘ব্যর্থ কৌশল।’এতে কোনো ফলাফল আসবে না।