বাসস
  ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৫
আপডেট : ১৪ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৫৯

ট্রাম্প 'চমৎকার স্বাস্থ্য' উপভোগ করছেন : হোয়াইট হাউস চিকিৎসক

ছবি সংগৃহীত

ঢাকা, ১৪ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : বার্ষিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প 'চমৎকার স্বাস্থ্য' উপভোগ করছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এটাই তার প্রথম স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, ৭৮ বছর বয়সী রিপাবলিকান ট্রাম্প নিজের প্রাণশক্তি নিয়ে বহুবার গর্ব করেছেন এবং ৮২ বছর বয়সী ডেমোক্রেটিক পূর্বসূরি জো বাইডেনকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম বলে উপহাস করেছেন।

হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত প্রেসিডেন্টের চিকিৎসকের চিঠিতে বলা হয়, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মানসিক ও শারীরিক অবস্থা চমৎকার এবং তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ও সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্পূর্ণরূপে সক্ষম।’

তবে প্রতিবেদনে কিছু স্বাভাবিক বিচ্যুতির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রোদে পোড়া কিছু ত্বক এবং গত জুলাই মাসে এক হত্যাচেষ্টায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার ফলে ডান কানে সৃষ্টি হওয়া ক্ষতচিহ্ন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর করা কোলনোস্কপিতে ট্রাম্পের কোলনে ডাইভারটিকুলোসিস (ছোট ছোট থলির মতো গঠন) ও একটি অক্ষতিকর পলিপ পাওয়া যায়। তিন বছর পর পুনরায় পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে।

ট্রাম্প বর্তমানে চার ধরনের ওষুধ গ্রহণ করছেন—এর মধ্যে দুটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে, একটি হৃদ্রোগ প্রতিরোধে ব্যবহৃত অ্যাসপিরিন এবং একটি স্টেরয়েডজাত ত্বকের ক্রিম।

প্রতিবেদনটিতে ট্রাম্পের ‘সক্রিয় জীবনধারা’ এবং ‘গলফ টুর্নামেন্টে ঘন ঘন জয়’—যা তিনি নিজেই প্রায়ই বলেন—এর প্রশংসা করা হয়েছে। ট্রাম্প মদ ও সিগারেট থেকে বিরত থাকেন, তবে ফাস্ট ফুড ও ভালো করে রান্না করা স্টেকের প্রতি তার আকর্ষণ সুবিদিত। তবে তার ওজন এখন আগের চেয়ে দৃশ্যত কিছুটা কম।

সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ট্রাম্পের বর্তমান ওজন ২২৪ পাউন্ড (প্রায় ১০১.৬ কেজি), যা ২০১৯ সালের ২৪৩ পাউন্ড থেকে কম।

ওয়াল্টার রিড সামরিক হাসপাতালে পরীক্ষার পর শুক্রবার ট্রাম্প বলেন, ‘আমি নিজেকে খুব ভালো অবস্থায় অনুভব করছি।’ এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ‘আমি কগনিটিভ (স্মৃতিশক্তি ও বুদ্ধিমত্তা) পরীক্ষা দিয়েছি। আমি যতটুকু বলতে পারি, প্রতিটি উত্তরই সঠিক দিয়েছি।’

বিতর্কিত স্বাস্থ্য দাবির ইতিহাস

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের স্বাস্থ্য নিয়ে সবসময়ই ব্যাপক আগ্রহ থাকে, তবে ট্রাম্পের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের স্বচ্ছতা নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে।

হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, প্রেসিডেন্টের শারীরিক পরীক্ষার ফলাফলের সারসংক্ষেপ প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক শন বারবাবেলা প্রকাশ করবেন এবং ‘অবশ্যই’ পুরো প্রতিবেদনটিও দেওয়া হবে।

তবে অতীতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার চিকিৎসকেরা বহুবার অতিকথন করেছেন তার স্বাস্থ্য নিয়ে।

২০১৫ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্পের চিকিৎসক হ্যারল্ড বর্নস্টেইন একটি চিঠিতে লেখেন, ‘ট্রাম্প নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নির্বাচিত হওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্যবান ব্যক্তি হবেন।’ পরে সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বর্নস্টেইন বলেন, ‘চিঠিটি পুরোপুরি ট্রাম্প নিজেই লেখেন। আমি সেটা লিখিনি।’

প্রথম মেয়াদে হোয়াইট হাউস চিকিৎসক রনি জ্যাকসন ২০১৮ সালে বলেছিলেন, ট্রাম্প যদি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাহলে তিনি ‘২০০ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারেন’। তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের ওজন ১০ থেকে ১৫ পাউন্ড কমানো উচিত হলেও তিনি সাধারণভাবে ‘চমৎকার স্বাস্থ্যেই’ আছেন এবং কোনো ‘মানসিক জটিলতা’র লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

এক বছর পর পরীক্ষায় দেখা যায়, ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি (১.৯ মিটার) উচ্চতার ট্রাম্পের ওজন ২৪৩ পাউন্ড, যা তাকে কারিগরি হিসেবে স্থূলতার শ্রেণিতে ফেলেছিল।

২০২৪ সালের নির্বাচনে বয়স একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়, যেখানে ট্রাম্প ও বাইডেন—উভয়েই মার্কিন ইতিহাসের সবচেয়ে বয়স্ক ছিলেন।

টেলিভিশন বিতর্কে বাজে পারফরম্যান্সের পর বাইডেন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন, যা তার মানসিক সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগকে আরও জোরদার করে তোলে।