শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : সুদানের দারফুর অঞ্চলের আল-ফাশার শহরের পথে অবস্থিত উম কাদাদাহ দখলের পর দুদিন ধরে চালানো সহিংস হামলায় অন্তত ৫৬ জন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে দেশটির আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)।
পোর্ট সুদান থেকে এএফপি জানায়, শুক্রবার ও শনিবারের এই হত্যাকাণ্ডগুলো ‘জাতিগত ভিত্তিতে’ পরিচালিত হয়েছে বলে দাবি করেছে স্থানীয় প্রতিরোধ কমিটি, যারা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশজুড়ে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ত্রাণ ও সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় করে আসছে।
উম কাদাদাহ শহরটি আল-ফাশার থেকে প্রায় ১৮০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। শহরটি দখলের একদিন পরই সেখানে হামলা চালানো হয়। আল-ফাশার বর্তমানে দারফুর অঞ্চলের একমাত্র বড় শহর, যা এখনও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
গত মাসে সেনাবাহিনী সুদানের রাজধানী খার্তুম পুনরুদ্ধার করার পর থেকেই উত্তর দারফুরের এই ঘেরাওকৃত রাজধানীতে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে আরএসএফ।
উম কাদাদাহে নিহতদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে স্থানীয় কমিটি। তারা জানিয়েছে, আরএসএফ ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, শহরটির নাগরিকদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করেছে এবং সব ধরনের টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দিয়েছে। নিহতদের মধ্যে শহরের হাসপাতালের পরিচালকও রয়েছেন। এখনও অন্তত ১৪ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
এদিকে, জাতিসংঘ জানায়, আরএসএফের হামলায় এল-ফাশার শহর এবং আশেপাশের দুর্ভিক্ষপীড়িত দুটি শরণার্থী শিবির—জামজাম ও আবু শউকে—অন্তত ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত এল-ফাশারের জামজাম শিবিরে আরএসএফের গোলাবর্ষণ ও হামলায় অন্তত ৪৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মীরা। মৃতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তবে ইন্টারনেট ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা যাচ্ছে না।
সুদানের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, আল-ফাশারে শনিবার পর্যন্ত মোট ৭৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও ১৭ জন।
এদিকে, দারফুরের শরণার্থী শিবির ও বাস্তুচ্যুত জনগণের সাধারণ সমন্বয়কারী অ্যাডাম রেগাল জানান, রোববারও জামজাম ও আবু শউক শিবিরে আরএসএফের গোলাবর্ষণ ও সাঁজোয়া যান দিয়ে হামলা অব্যাহত ছিল।
যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধের দুই পক্ষ—আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর ওপরই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, দারফুরে আরএসএফ গণহত্যা চালিয়েছে এবং সেনাবাহিনীও বেসামরিক জনগণের ওপর হামলা করেছে।
এই সংঘাত সুদানকে কার্যত দুটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। উত্তর ও পূর্বাঞ্চল সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, দারফুর ও দক্ষিণের একাংশ আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
যুদ্ধের ফলে এখন পর্যন্ত লাখো মানুষ নিহত হয়েছেন, বাস্তুচ্যুত হয়েছেন ১ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। আন্তর্জাতিক উদ্ধার সংস্থা এটিকে ‘এতদিনের মধ্যে রেকর্ডকৃত সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট’ হিসেবে অভিহিত করেছে।