বাসস
  ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:০৯

মার্কেজকে কেন ঘুষি মেরেছিলেন ভার্গাস য়োসা

গার্সিয়া মার্কেজ ও মারিও ভার্গাস য়োসা। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস): মেক্সিকো সিটির এক চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এলেনা পোনিয়াতোস্কা কখনও ভাবেননি, সাহিত্যের দুই ভবিষ্যৎ নোবেলজয়ীর মধ্যে ঘটে যাওয়া এক বিস্ময়কর ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে যাবেন তিনি।

মেক্সিকো সিটি থেকে এএফপি জানায়, তারিখটা ছিল ১৯৭৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি। পোনিয়াতোস্কা বসেছিলেন কলম্বীয় সাহিত্যিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ ও তাঁর স্ত্রী মার্সেডেসের পাশে, একটি প্রামাণ্যচিত্র লা ওদিসেয়া দে লোস আন্দেসু ‘দ্য অ্যান্ডিজ’স ওডিসি’ দেখতে।

প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন পেরুর খ্যাতনামা সাহিত্যিক মারিও ভার্গাস য়োসাও।

পোনিয়াতোস্কা বলেন, 'আমি কেবল র্ঘটনাক্রমে গার্সিয়া মার্কেজের পাশে বসেছিলাম।' সোমবার, ভার্গাস য়োসার মৃত্যুর পরদিন এএফপিকে তিনি এসব বলেন।

পোনিয়াতোস্কার ভাষ্য অনুযায়ী, গার্সিয়া মার্কেজ হাসিমুখে ভার্গাস য়োসার দিকে এগিয়ে যান। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় অপ্রত্যাশিত ঘটনা—ভার্গাস য়োসা তাঁর মুখে সজোরে ঘুষি মারেন।

রক্তাক্ত অবস্থায় মার্কেজ যখন মেঝেতে পড়ে যান, তখন পোনিয়াতোস্কা দৌড়ে তাঁর চোখের ওপর রাখতে একটি স্টেক নিয়ে আসেন—এই দৃশ্য পরে এক জোড়া সাদাকালো ছবিতে ইতিহাস হয়ে ওঠে।

তৎকালীন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, য়োসা চিৎকার করে বলেন, 'প্যাট্রিসিয়ার সঙ্গে যা করেছ, তার জন্য!' য়োসার স্ত্রীর নাম ছিল প্যাট্রিসিয়া, যিনি একইসঙ্গে তাঁর চাচাতো বোনও।

তবে ‘অপরাধ’টি কী ছিল, তা কখনোই জানা যায়নি। দুই লেখকই বিষয়টি গোপন রাখতে চেয়েছিলেন।

পরবর্তীতে মেক্সিকান সাংবাদিক হুলিও শেরের এক বইয়ে জানা যায়, য়োসা তাঁকে ঘটনাটি প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছিলেন।

এই ঘটনার পর দুই সাহিত্যিকের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ছিন্ন থাকে।

তবে তিন দশকেরও বেশি সময় পরে, গার্সিয়া মার্কেজের বিখ্যাত উপন্যাস ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিচিউড (একশো বছরের নিঃসঙ্গতা)-এর ৪০ বছর পূর্তি সংস্করণে ভূমিকার লেখক হিসেবে য়োসার নাম দেখা যায়। তখন তাঁরা আবারও একসঙ্গে জনসম্মক্ষে আসেন। সে সময়ই চিত্রগ্রাহক রোদ্রিগো মোয়া প্রথমবারের মতো মার্কেসের চোখে আঘাত পাওয়া সেই ছবিগুলো প্রকাশ করেন।

লাতিন আমেরিকান সাহিত্যের এই দুই মহারথীর অনুবাদক গ্রেগরি রাবাসা ২০১৯ সালে দ্য প্যারিস রিভিউ-এ দাবি করেন, ঘটনার পেছনে ছিল এক প্রেমঘটিত উপদেশ—গার্সিয়া মার্কেস নাকি প্যাট্রিসিয়াকে স্বামীকে ছেড়ে দিতে বলেছিলেন। তবে পোনিয়াতোস্কা বলেন, 'আমি এসব কিছু জানতাম না, জানার চেষ্টা করাও আমার কাজ নয়।'