বাসস
  ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৪০

সুদানে যুদ্ধের দুই বছর পূর্তি : আধাসামরিক বাহিনীর পাল্টা সরকার গঠনের ঘোষণা

ঢাকা, ১৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : দুই বছর পেরিয়ে গেল সুদানে রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়েছে। দুই বছর ধরে চলা যুদ্ধে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানির পর, সুদানের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) মঙ্গলবার সেনাবাহিনী-সমর্থিত প্রশাসনের সাথে লড়াই করার জন্য নিজস্ব পাল্টা সরকার গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। 

কায়রো থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।

জাতিসংঘ বলছে, ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল শুরু হওয়া সংঘাত বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকট সংকটের জন্ম দিয়েছে। এই যুদ্ধের ফলে ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।  যার মধ্যে ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষ অন্যান্য দেশে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো শান্তিচুক্তি বা বিরতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।

সুদানের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রয়েছেন সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, আরএসএফের নেতৃত্বে রয়েছেন তার সাবেক ডেপুটি মোহাম্মদ হামদান দাগলো।

মোহাম্মদ হামদান দাগলোর নেতৃত্বে র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার ঘোষণা করেছে। দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে।

২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর মধ্যে এই সংঘর্ষ শুরু হয়।

দাগলো টেলিগ্রামের এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই বার্ষিকীতে, আমরা গর্বের সাথে শান্তি ও ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিচ্ছি, একটি বিস্তৃত জোট যা সুদানের আসল চেহারা প্রতিফলিত করে’।

আরএসএফ এবং এর মিত্ররা ফেব্রুয়ারিতে কেনিয়ায় একটি সনদে স্বাক্ষর করে। যেখানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় ‘শান্তি ও ঐক্যের সরকার’ ঘোষণা করা হয়।

দাগলো তার সর্বশেষ বিবৃতিতে বলেছেন যে, ‘বেসামরিক ও রাজনৈতিক বাহিনী’ সহ আধাসামরিক বাহিনী একটি অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান স্বাক্ষর করেছে, যা ছিল ‘একটি নতুন সুদানের জন্য একটি রোডম্যাপ’।

ওই সংবিধানে ‘সমস্ত অঞ্চলের প্রতিনিধিত্বকারী ১৫ সদস্যের প্রেসিডেন্ট পরিষদের বিধান রয়েছে। যা আমাদের স্বেচ্ছাসেবী ঐক্যের প্রতীক।

বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে আফ্রিকার তৃতীয় বৃহত্তম দেশটি স্থায়ীভাবে ভেঙে যেতে পারে।

সুদান নিয়ে গবেষণা করা কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরৎ শ্রীনিবাসন বলেন, দারফুরে আরএসএফের সাহস বৃদ্ধির সাথে সাথে, ‘যে আঞ্চলিক বিভাজন ঘটছে তার অর্থ কার্যত বিচ্ছিন্নতা হতে পারে।’

সুদানে জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী ক্লেমেন্টাইন নকওয়েটা-সালামি, বলেন ‘এই দুই বছরে লাখ লাখ মানুষের জীবন ধ্বংস হয়ে গেছে। পরিবারগুলো ভেঙে পড়েছে। জীবিকা হারিয়েছেন অনেকেই এবং অনেকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হযে পড়েছে।

২০২৩ সালে শুরু হওয়া যুদ্ধে অগণিত মানুষ নিহত হন এবং লাখ লাখ মানুষ খার্তুম ছেড়ে পালিয়ে যান।

৫২ বছর বয়সী আব্দেল রাফি হুসেইন, যিনি আরএসএফের নিয়ন্ত্রণাধীন খার্তুমেই ছিলেন, বলেন, ‘আমি শরীরের অর্ধেক ওজন হারিয়ে ফেলেছি।’ সেনাবাহিনী সম্প্রতি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিলেও তিনি জানান, ‘আমরা এখন নিরাপদে আছি। কিন্তু এখনও পানি ও বিদ্যুতের চরম সংকট চলছে, হাসপাতালগুলোর অধিকাংশই অচল।’

আরএসএফ এখন দারফুরের ওপর তাদের দখল মজবুত করার চেষ্টা করছে এবং আল-ফাশের দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এটি দারফুর অঞ্চলে এখনও সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা শেষ প্রাদেশিক রাজধানী।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। রোববার আধাসামরিক বাহিনী নিকটবর্তী জমজম বাস্তুচ্যুত শিবিরের নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।

জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, আরএসএফের অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে আনুমানিক ৪ লাখ বেসামরিক লোক দুর্ভিক্ষ কবলিত শিবির থেকে পালিয়ে যায়।

ইউরোপীয় দেশগুলো ধ্বংসাত্মক যুদ্ধের অবসান ঘটাতে ‘এখনই এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানিয়েছে এবং তারা ৯০০ মিলিয়ন ডলার নতুন মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।