শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : প্রখর রোদ আর প্রচণ্ড গরমের মধ্যে নিজেদের পিঠে চাবুক মেরে রক্তাক্ত করলেন অসংখ্য ধর্মানুরাগী, কেউ কেউ আবার স্বেচ্ছায় পেরেক ঠুকে ক্রুশবিদ্ধ হলেন—এভাবেই ফিলিপাইনের গুড ফ্রাইডে পালন করলেন ক্যাথলিক ধর্মের সবচেয়ে নিবেদিতপ্রাণ কয়েক হাজার অনুসারী।
ফিলিপাইনের সান ফার্নান্দো থেকে এএফপি জানায়, এই ধর্মানুষ্ঠানটি ক্যাথলিক চার্চের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন না পেলেও এশিয়ার একমাত্র ক্যাথলিক-প্রধান দেশ ফিলিপাইনে প্রতিবছর ইস্টার উপলক্ষে এটি নিয়মিত আয়োজন হয়ে উঠেছে।
প্রতি বছর ইস্টার সপ্তাহান্তে ফিলিপাইনের বিভিন্ন স্থানে হাজার হাজার মানুষ—এবং কিছু বিদেশি পর্যটক—এই দৃশ্য দেখতে জড়ো হন।
ম্যানিলা থেকে প্রায় দুই ঘণ্টার দূরে পামপাঙ্গা প্রদেশে ৬৪ বছর বয়সী রুবেন এনাজে এবার তার জীবনের ৩৬তম ও শেষবারের মতো ক্রুশবিদ্ধ হন।
হাতের পেরেক খুলে নেওয়ার পর ক্লান্ত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমি আসলে আর পারছি না। ভক্তদের পোর্টেবল ফ্যান চালাতে হয়েছে যেন স্বাভাবিকভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারি।' এদিন তাপমাত্রা ছিল ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ক্রুশের দিকে যেতে থাকা সরু পথ পার হওয়ার এক পর্যায়ে রোমান সৈনিকের ভূমিকায় থাকা এক ব্যক্তি তাকে স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি জোরে ধাক্কা দিলে একটি ঢালে পড়ে যান তিনি। জানান, উঠার পথে মাথা ঘুরছিল তার, বিশ্রাম নিতে হয় প্রায় ৩০ মিনিট।
আগেও অবসর নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। এবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষ তার উত্তরসূরি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে ২৪ বার ক্রুশবিদ্ধ হওয়া অভিজ্ঞ আর্নল্ড মানিয়াগোকে। দায়িত্ব গ্রহণ করতে কিছুটা ‘স্নায়ুচাপ’ বোধ করছেন মানিয়াগো। মানিয়াগো বলেন, 'এই ভূমিকায় আসতে পেরে আমি কৃতজ্ঞ, তবে একটু নার্ভাসও।'
শুধু প্রায়শ্চিত্ত নয়, শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া অনেকে মুখে কাপড় বেঁধে, পিঠে বাঁশের কঞ্চি-লাগানো চাবুক দিয়ে নিজেকে আঘাত করছিলেন। যন্ত্রণা বাড়াতে কেউ কেউ কাঁচ বসানো কাঠের বাটাম ব্যবহার করছিলেন, যাতে রক্ত বের হয়।
এক বৃদ্ধ এএফপিকে একটি কাঠের বাটাম দেখান, যাতে ধারালো কাচ বসানো—যার সাহায্যে তিনি তপস্বীদের পিঠে আঘাত করে রক্ত ঝরান।
এই মিছিলের পেছনে ছোট ছোট ছেলেরাও ছিল—মাত্র আট বছর বয়সী এক শিশু একজন রক্তাক্ত, অর্ধনগ্ন লোকের পিঠে হালকাভাবে আঘাত করছিল।
৩০ বছর বয়সী মার্ক পালমা জানালেন, এই আচার শুধু প্রায়শ্চিত্তের জন্য নয়। তার বোনের জন্মগত হৃদরোগ সারিয়ে তোলার প্রার্থনাও এর সঙ্গে যুক্ত। ‘এ বছর তার অস্ত্রোপচার হবে, হৃদয়ে ছিদ্র আছে। আমি চাই সে সুস্থ হোক, সফলভাবে অপারেশন হোক।’
৩১ বছর বয়সী রেমন্ড ডুকুসিন জানালেন, ২০২২ সাল থেকে তিনি অংশ নিচ্ছেন। বাবা-মায়ের অসুস্থতার পর থেকেই এই শুরু। বাবার মৃত্যু হলেও তিনি অংশ নেওয়া থামাননি। 'আমি এই আয়োজনে অংশ নিয়ে তার স্মৃতিকে ধরে রাখতে চাই। আমি এখনও অলৌকিকতার ওপর বিশ্বাস করি,' বলেন তিনি।
পামপাঙ্গায় গুড ফ্রাইডের আয়োজনে এবার আনুমানিক ১০,০০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
বিশেষ অনুমতি-পাওয়া ৫০ জনের বেশি বিদেশি পর্যটক তাঁবুর নিচে বসে আয়োজনের দৃশ্য উপভোগ করেন।
নিউইয়র্ক সিটি থেকে আসা ৪৫ বছর বয়সী ডেভিড বলেন, 'আমরা ছুটির পরিকল্পনাই করেছিলাম এটা দেখার জন্য।'
'এখনও কোনো সম্প্রদায়-ভিত্তিক ধর্মীয় চর্চা এতটা জীবন্ত আছে—এটি দারুণ। পশ্চিমে তো ধর্মীয় অনুরাগ প্রায় হারিয়ে গেছে। এখানে সেটা এখনও তা ভীষণ জীবন্ত,' বলেন তিনি।