শিরোনাম
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : আফগান নাগরিকদের ফেরত পাঠানোর মধ্যেই শনিবার আফগানিস্তানে তালেবান কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে কাবুলে পৌঁছেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে পাকিস্তান থেকে ৮৫ হাজারের বেশি আফগান নাগরিককে বহিষ্কার করা হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই শিশু।
কাবুল থেকে এএফপি জানায়, ইসলামাবাদ ঘোষণা দিয়েছে, এপ্রিল মাস শেষ হওয়ার আগেই তারা আবাসিক অনুমতি বাতিল করা হয়েছে এমন ৮ লাখের বেশি আফগানকে ফেরত পাঠাবে, এর মধ্যে কেউ কেউ পাকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেছেন বা কয়েক দশক ধরে বসবাস করছেন।
প্রতিদিনই আফগান পরিবারগুলো গ্রেপ্তার, অভিযান কিংবা পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আশঙ্কায় সীমান্তের দিকে ছুটছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল আফগান তালেবান সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হাসান আখুন্দ রয়েছেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত এক ভিডিও অনুযায়ী, আফগানিস্তানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী (অর্থ ও প্রশাসনিক দায়িত্বে) মোহাম্মদ নাঈম তাকে বিমানবন্দরে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান।
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরী বলেন, 'নির্ধারিত সময়সীমার কোনো প্রকার শিথিলতা বা সময় বাড়ানো হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'আপনি যদি কোনো কাগজপত্র ছাড়া আসেন, তবে সেটি শুধু সন্দেহই বাড়ায়—আপনি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত কি না, সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করছেন কি না বা অন্য কোনো অপরাধ করছেন কি না।'
চৌধুরী আগেও আফগান নাগরিকদের ‘সন্ত্রাসী ও অপরাধী’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি রাজনৈতিক কৌশল, যার মাধ্যমে তালেবান সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সংকট নিয়ে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
শুক্রবার তিনি জানান, এপ্রিলের শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৫ হাজার আফগান পাকিস্তান থেকে সীমান্ত পেরিয়ে নিজ দেশে ফিরেছেন, যাদের বেশিরভাগের কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা শুক্রবার জানায়, ফেরত যাওয়া এই আফগানদের অর্ধেকেরও বেশি শিশু—যাদের এমন এক দেশে প্রবেশ করতে হচ্ছে, যেখানে মেয়েরা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত এবং বহু খাতে নারীদের কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
শনিবার আফগান শরণার্থী মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র এএফপিকে জানান, ১ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত পাকিস্তান সীমান্তের দুটি প্রধান প্রবেশপথ দিয়ে প্রায় ৭১ হাজার আফগান প্রত্যাবর্তনকারীকে তালেবান কর্তৃপক্ষ নথিভুক্ত করেছে।
— বহিষ্কারের দ্বিতীয় ধাপ —
জাতিসংঘ বলছে, আফগানিস্তানের বিভিন্ন সংঘাত থেকে পালিয়ে প্রায় ৩০ লাখ আফগান পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছে।
১৯৯০-এর দশকে তালেবান সরকারের প্রথম মেয়াদে পাকিস্তান ছিল তিনটি দেশগুলোর একটি, যারা সরকারটিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। পরে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে ন্যাটো বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে গোপনে তালেবানকে সহায়তা করার।
তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন বেড়েছে, বিশেষত সীমান্তবর্তী অঞ্চলে সহিংসতা বাড়ার পর।
গত বছর পাকিস্তানে এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল, এবং ইসলামাবাদ কাবুলকে দায়ী করে বলেছে, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে আশ্রয় নিয়ে সেখান থেকেই হামলার পরিকল্পনা করছে।
তালেবান সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
২০২৩ সালে ফেরত পাঠানোর প্রথম ধাপে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই লক্ষাধিক কাগজপত্রবিহীন আফগানকে সীমান্ত পার হতে বাধ্য করা হয়।
চলতি বছরের মার্চে ঘোষিত দ্বিতীয় ধাপে পাকিস্তান সরকার ৮ লাখের বেশি আফগান নাগরিকের আবাসিক অনুমতি বাতিল করে। যেসব আফগান তৃতীয় দেশে স্থানান্তরের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাদের এপ্রিলের শেষ নাগাদ পাকিস্তান ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার দেওয়া ‘প্রুফ অব রেজিস্ট্রেশন’ কার্ডধারী ১৩ লাখের বেশি আফগান নাগরিককেও ইসলামাবাদ ও রাওয়ালপিন্ডি ত্যাগ করতে বলা হয়েছে।