বাসস
  ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৩৬
আপডেট : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১৯:৩৬

তুরস্কে বিক্ষোভ নিয়ে ছাত্র ও সাংবাদিকসহ ২০০ জনের বিচার শুরু

ঢাকা, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : তুরস্কে গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় আন্দোলনের ঘটনায় আটক প্রায় ২০০ জনের বিচার শুক্রবার ইস্তাম্বুলে শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকরাও।

ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, ইস্তাম্বুলের বিরোধী মেয়র একরেম ইমামোগলুর ১৯ মার্চ গ্রেপ্তার ও পরবর্তী কারাবন্দির ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ শুরু হলে সরকার ওই বিক্ষোভ কঠোরভাবে দমন করে এবং অভিযুক্তদের আটক করে। আদালতে হাজির হওয়া ১৮৯ জনকে ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার শুনানির সময় চাগলায়ান আদালত চত্বরে পরিবার, সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও বিরোধী সিএইচপি পার্টির সংসদ সদস্যদের ভিড় দেখা যায় বলে এএফপির একজন সংবাদদাতা জানিয়েছেন।

অভিযুক্তদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী, তবে তাদের মধ্যে আটজন তুর্কি সাংবাদিকও আছেন—তাদের একজন এএফপির আলোকচিত্রী ইয়াসিন আকগুল—যারা আন্দোলনের সংবাদ কভার করছিলেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তারা 'অবৈধ সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ' এবং 'পুলিশের সতর্কতা সত্ত্বেও ছত্রভঙ্গ না হওয়া'—এমন অভিযোগের মুখোমুখি, যার সাজা ছয় মাস থেকে চার বছর পর্যন্ত হতে পারে।

সাংবাদিকদের পক্ষে আইনজীবী ভেইসেল ওক আদালতে বলেন, তারা সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন এবং তারা পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন বলেই সেখানে ছিলেন।

'তারা প্রতিবাদের খবর সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন... সেটাই তাদের দায়িত্ব,' তিনি বিচারককে বলেন।

বিচারক তাদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করলেও শিক্ষার্থীদের মামলার ফাইল থেকে সাংবাদিকদের ফাইল আলাদা করার সিদ্ধান্ত দেন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তারা যে সাংবাদিক—এই দাবি গণ্য হয়নি, কারণ পুলিশ তাদের উপস্থিতি সাংবাদিকতার উদ্দেশ্যে ছিল কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর তুরস্ক প্রতিনিধি এরোল ওন্দারওগ্লু বলেন, 'আমরা চাই সাংবাদিকদের অব্যাহতি দেওয়া হোক। কারণ তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যেভাবে তাদের গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছে, সেইরকমই স্বেচ্ছাচারীভাবে তাদের বিচার চলছে।'

‘আমাদের সন্তানের জন্য সুবিচার চাই’

অনেক শিক্ষার্থীরই এটি প্রথম বিক্ষোভে অংশগ্রহণ, কারণ ২০১৩ সালের গেজি পার্ক আন্দোলনের পর বড় পরিসরে কোনো গণবিক্ষোভ আর হয়নি।

'আমরা আমাদের সন্তানের জন্য ন্যায্য বিচার চাই। তাদের এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে থাকার কথা, জেলে নয়,' বলেন ‘প্যারেন্টস সলিডারিটি নেটওয়ার্ক’-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা আভনি গুনদোগদু।

ইস্তাম্বুলের রাষ্ট্রীয় কৌঁসুলি কার্যালয় জানিয়েছে, ২০টি ফৌজদারি তদন্তে মোট ৮১৯ জনের বিচার হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এক বিবৃতিতে এ বিচারকে 'দ্রুতগতির ও ব্যাপক পরিসরের' বলে সমালোচনা করে জানায়, তারা ৬৫০ অভিযুক্তকে ঘিরে গঠিত ৯টি অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে কোনো স্পষ্ট অপরাধপ্রমাণ খুঁজে পায়নি।

'যেহেতু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ অনুপস্থিত, তাই এই তড়িঘড়ি বিচারগুলোর উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা চর্চায় ভয় ধরানো ছাড়া আর কিছু নয়,' বলেন সংস্থাটির ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হিউ উইলিয়ামসন।

কারাগারে থাকা ইস্তাম্বুলের মেয়র প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগানের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। তার গ্রেপ্তার দেশজুড়ে প্রতিবাদের সূত্রপাত করে, যদিও তুরস্কের তিন বৃহৎ শহরে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ছিল।

পুলিশ টিয়ারগ্যাস, মরিচের স্প্রে ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে এবং অনেকের বাড়িতে ভোররাতে অভিযান চালিয়ে প্রায় ২,০০০ জনকে গ্রেপ্তার করে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, শুক্রবার আদালতে যাদের তোলা হয়, তাদের মধ্যে ৬২ জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র বহন বা মুখ ঢেকে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ প্রমাণ হিসেবে কেবল বলা হয়েছে, একজন আন্দোলনকারীর হাতে পাথর ছিল।

আরও ২০ জনের বিরুদ্ধে অপরাধে উসকানির অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে সংস্থাটি বলেছে, এসব অভিযোগে মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়া বক্তব্য এবং জনগণকে রাস্তায় নামার আহ্বানকেই ‘উসকানি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে যা সহিংসতা বা অপরাধে উৎসাহ দেওয়ার শামিল নয়।

পরবর্তী শুনানি আগামী ৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে বলে আদালতের নথিতে জানানো হয়েছে। সাংবাদিকদের মামলার শুনানির দিন এখনো নির্ধারিত হয়নি।

আদালতের ভেতরে নিরাপত্তা কড়া থাকায় অনেক পরিবার সদস্য ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। তারা বাইরে ধাতব ব্যারিকেডের সামনে প্রতিবাদ করেন। পুরো এলাকা পুলিশে ঘেরা ছিল।

এক শিক্ষার্থী আহমেতজান কাপতান বলেন, 'আমরা আমাদের আটক বন্ধুবান্ধবের বিচার উপলক্ষে এখানে এসেছি। আমরা তাদের একা ফেলে যাব না।'