শিরোনাম
ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : গত মাসে ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের মাধ্যমে হয়তো প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষকে মাঠের বাইরে পাঠানো হয়েছে, তবে তুরস্কের তরুণ সমাজে যে প্রতিবাদের চেতনা জেগে উঠেছে, তা দমন করতে এখনও হিমশিম খাচ্ছে সরকার।
ইস্তাম্বুল থেকে এএফপি জানায়, গত ১৯ মার্চ ইমামোগলু দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়ার পর রাতেই ইস্তাম্বুল সিটি হলে জড়ো হয় বিশাল জনতা। দ্রুতই সেই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে—২০১৩ সালের গেজি পার্ক আন্দোলনের পর এটি তুরস্কের সবচেয়ে বড় গণআন্দোলন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
রমজান মাস শেষে ঈদ উপলক্ষে কিছুদিন বিক্ষোভ থমকে থাকলেও গত দশ দিনে আবার নতুন করে প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ইস্তাম্বুল ও আঙ্কারার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট এরদোগানের ইসলামপন্থী দল একেপি কিছু উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক বদলির সিদ্ধান্ত নেয়—যা সরকারপন্থী হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছে। এর ফলে প্রতিবাদের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে আরও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
ইস্তাম্বুলের ইয়েদিতেপে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক দেমেত লুকুসলু বলেন, ‘তরুণদের মধ্যে আগে থেকেই একপ্রকার ক্ষোভ ছিল, কিন্তু মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে তা সুস্পষ্ট বিরোধিতায় রূপ নিয়েছে।’
তার মতে, অনেক তরুণের কাছে এটি সমাজের ক্রমবর্ধমান রক্ষণশীলতা ও ইসলামপন্থার প্রতি এক ধরনের প্রত্যাখ্যান—একটি অধিক ‘অধিকার ও স্বাধীনতা’র দাবিতে রূপ নিয়েছে।
‘নীরবতা ভাঙতে চাই’
একইদিন ইমামোগলুকে ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী দল সিএইচপির প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পর তাঁর গ্রেপ্তার দেশের নানা প্রান্তে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়। ২০০২ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা একেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে অনেকেই।
ইস্তাম্বুলের একটি স্কুলের শিক্ষার্থী এদা বলেন, ‘আমরা এমন এক প্রজন্ম যারা কেবল একেপির শাসনই দেখেছি, কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয় না।’
১৭ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সরকার যে নীরবতা চাপিয়ে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে চেয়েছে, আমরা তা ভাঙতে চাই।’
বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শত শত শিক্ষার্থীর মধ্যে অনেকেই এখনও কারাগারে বন্দি বলে জানান তিনি।
শুক্রবার থেকে এ আন্দোলন-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক গণবিচার শুরু করেছে তুরস্ক। প্রথম দিনেই ১৮৯ জনকে অভিযুক্ত হিসেবে হাজির করা হয় আদালতে—যাদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি।
আদালত চত্বরে ছিল পুলিশের নজরদারিতে শত শত আন্দোলনকারীর জমায়েত।
‘আমাদের বন্ধুরা যাঁরা কারাবন্দি, আমরা তাদের জন্যই এখানে এসেছি। আমরা তাদের পাশে আছি—তাদের একা ফেলে যাব না,’ বলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহমেতজান কাপতান।
তিনি বলেন, ‘আমরা ভয়কে জয় করেছি—এখন আমরা আরও শক্তিশালী, আরও ঐক্যবদ্ধ।’
আর্থিক অভিঘাত
ইমামোগলুর গ্রেপ্তারকে বিরোধীরা তাদের নেতা ছাড়া করার অপচেষ্টা বলে আখ্যা দিয়েছে। এর ফলে অর্থনীতিতেও পড়েছে নেতিবাচক প্রভাব।
সরকারঘেঁষা বলে পরিচিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বয়কটের ডাক দিয়েছে বিরোধীরা। এক মাসে ইস্তাম্বুলের বিআইএসটি ১০০ শেয়ারবাজার সূচক প্রায় ১৪ শতাংশ পড়ে গেছে।
এছাড়া ডলারের বিপরীতে তুর্কি মুদ্রা লিরার মান কমেছে প্রায় আট শতাংশ—যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৫০ বিলিয়ন ডলার সরবরাহ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি।
পরিস্থিতি সামাল দিতে বৃহস্পতিবার ব্যাংক সুদের হার ৪২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪৬ শতাংশ করেছে—মার্চ ২০২৪ সালের পর প্রথমবারের মতো সুদের হার বাড়ানো হলো।
এ আন্দোলনের কারণে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিকেকে)-এর সঙ্গে সরকারের সাম্প্রতিক সমঝোতার উদ্যোগও হুমকির মুখে পড়েছে।
এরদোয়ানের জোটসঙ্গী ও জাতীয়তাবাদী নেতা দেভলেত বাহচেলি এ সপ্তাহে বলেন, ইমামোগলুর বিচার দ্রুত শুরু হওয়া উচিত। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি পিকেকে-কে নিরস্ত্রীকরণ ও বিলুপ্ত করার প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করতে পারে।
বিরোধী দলীয় নেতা ও সিএইচপি প্রধান ওজগুর ওজেল নতুন নির্বাচনের দাবি তুলেছেন এবং শনিবার মধ্য তুরস্কের গ্রামীণ প্রদেশ ইয়োজগাতে বিশাল বিক্ষোভের ডাক দেন।
এর আগে এই অঞ্চলের কৃষকদের ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ট্রাক্টর মিছিল করার কারণে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা করা হয়। সেই স্থানে ওজেল নিজেই ট্রাক্টর চালিয়ে জনসভায় হাজির হন।