শিরোনাম
ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটনসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে শনিবার আবারও হাজারো মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তার কট্টর নীতিমালার প্রতিবাদে এটিই সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিতীয় দফার বড় ধরনের বিক্ষোভ।
নিউইয়র্ক থেকে এএফপি জানায়, নিউইয়র্কের প্রধান গ্রন্থাগারের সামনে বিক্ষোভকারীরা হাতে ধরে রেখেছিলেন নানা স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড— ‘আমেরিকায় কোনো রাজা নেই’, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’— এমন বার্তা ছিল সেগুলোতে। তাদের অধিকাংশের আশঙ্কা, নাগরিক অধিকার মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।
অবৈধ অভিবাসীদের বিতাড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দেন— 'আইস নয়, ভয় নয়— অভিবাসীদের স্বাগত'।
আইস বা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের ভূমিকার বিরুদ্ধেই ছিল এই স্লোগান।
ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসের সামনে দাঁড়িয়ে ৪১ বছর বয়সী বেঞ্জামিন ডগলাস বলেন, 'আমেরিকায় বসবাসরত মানুষদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যে নিপীড়ন চালাতে পারে না— এই আইনের শাসনের মৌলিক ধারণার ওপরই সরাসরি আঘাত হানা হচ্ছে।'
মাহমুদ খালিল নামে এক প্রো-ফিলিস্তিনি ছাত্র আন্দোলনকারীর মুক্তির দাবিতে পোস্টার হাতে থাকা এই বিক্ষোভকারী বলেন, 'ইচ্ছাকৃতভাবে কিছু মানুষকে টার্গেট করে ঘৃণাবাদ উসকে দেওয়া হচ্ছে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে প্রাপ্ত আইনি সুরক্ষা দুর্বল হয়ে পড়ে।'
একজন বিক্ষোভকারীকে ‘ইট দ্য রিচ’ লেখা জামা পরিহিত অবস্থায় আটক করতে দেখা যায়।
৭৩ বছর বয়সী ক্যাথি ভ্যালি, যিনি নাৎসি হিটলারের হাতে বেঁচে যাওয়া এক পরিবারের সন্তান, বলেন, 'আমার মা-বাবার কাছ থেকে যা শুনেছি, আজকের যুক্তরাষ্ট্রে ঠিক সেই একই কাহিনি পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।' তবে ট্রাম্পকে ‘হিটলার বা অন্যান্য ফ্যাসিস্টদের চেয়ে অনেক বেশি নির্বোধ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
‘বিজ্ঞানের বিপরীতে সরকার’
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমিউনোলজি বিষয়ে পিএইচডি করা ড্যানিয়েলা বাটলার (২৬) বলেন, 'বিজ্ঞান ও জনস্বাস্থ্য গবেষণার তহবিল কমিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে আমি সরব হতে এসেছি।' টেক্সাসের চলমান হাম-বিস্ফোরণ সংকেত হিসেবে তিনি একটি মানচিত্র বহন করছিলেন।
ট্রাম্পের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র, একজন পরিচিত টিকা-সন্দেহবাদী। বহু বছর ধরে তিনি হাম, গুটিবসন্ত ও রুবেলার (এমএমআর) টিকা ও অটিজমের মধ্যে ভুয়া সংযোগ দাঁড় করানোর চেষ্টা চালিয়ে গেছেন।
বাটলারের কথায়— 'যখন বিজ্ঞানকে অগ্রাহ্য করা হয়, তখন মানুষ মারা যায়।'
কনজারভেটিভ টেক্সাসের উপকূলীয় শহর গ্যালভেস্টনেও ছিল ছোট পরিসরের বিক্ষোভ।
সেখানে ৬৩ বছর বয়সী লেখক প্যাটসি অলিভার বলেন, 'আগে আমি শুধু ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় থাকতাম, কিন্তু এখন সেটা যথেষ্ট নয়। আমরা ইতোমধ্যেই অনেক কিছু হারিয়েছি।'
উইয়েস্ট কোস্টের সান ফ্রান্সিসকোতে কয়েকশ’ মানুষ সমুদ্রতটে জড়ো হয়ে মানববন্ধন গঠন করেন, যার আকারে লেখা ছিল— ‘ইমপিচ + রিমুভ’। অন্যান্যরা উল্টোভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ধারণ করেন, যা ঐতিহ্যগতভাবে সংকটের প্রতীক।
এই আন্দোলনের প্রধান সংগঠন ‘৫০৫০১’— যার অর্থ ৫০টি অঙ্গরাজ্যে ৫০টি বিক্ষোভ এবং একটি সম্মিলিত আন্দোলন— জানায়, শনিবার সারাদেশে প্রায় ৪০০টি বিক্ষোভের পরিকল্পনা ছিল।
তাদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, 'ট্রাম্প প্রশাসন ও তার ধনিক মিত্রদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রবিরোধী এবং অবৈধ কর্মকাণ্ডের দ্রুত, বিকেন্দ্রীকৃত ও অহিংস জবাবই এই আন্দোলনের লক্ষ্য।'
এর আগে ৫ এপ্রিল অনুষ্ঠিত ‘হ্যান্ডস অফ’ আন্দোলনের তুলনায় এবার লোকসমাগম কিছুটা কম ছিল বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ। তবুও সংগঠকদের আশা— অভিবাসন দমন, সরকারি ব্যয় হ্রাস, বিশ্ববিদ্যালয়, সংবাদমাধ্যম ও আইনজীবীদের ওপর চাপ প্রয়োগের প্রতিবাদে এই বিক্ষোভ দীর্ঘমেয়াদি আন্দোলনে রূপ নেবে।