বাসস
  ২০ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:২৪

মস্কোয় ইস্টার যুদ্ধবিরতি নিয়ে সংশয়

ঢাকা, ২০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনের সঙ্গে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বাসিন্দারা এই পদক্ষেপে শান্তি আসার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিলেও মস্কোর এক শান্ত পাড়ায় দেখা গেছে, এ নিয়ে আশাবাদী হওয়ার মতো মনোভাব নেই।

মস্কো থেকে এএফপি জানায়, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, কিয়েভ এই অপ্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। তবে তার অভিযোগ, রুশ বাহিনী ইতিমধ্যে স্থল ও আকাশপথে নতুন হামলা চালিয়ে প্রতিশ্রুতি ভেঙেছে।

দক্ষিণ মস্কোর এক পাড়ার বাসিন্দা ৬১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত স্বেতলানা বলেন, ‘আমার মনে হয়, এর ফল কিছুই হবে না। এই ইস্টারের যুদ্ধবিরতির কোনও ফল নেই, কারণ ইউক্রেন এই সমঝোতা মানবে না।’

৮৫ বছর বয়সী মারিয়া গোরানিনাও ইউক্রেনের ওপর আস্থাহীনতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধবিরতির পর ওরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে আবার আমাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আমি চাই, ইউক্রেনের সঙ্গে চিরকালের মতো শান্তি হোক।’

এর আগে গত মাসে পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেন, যদিও কিয়েভ তা মেনে নিয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার হুমকি দেন, অগ্রগতি না হলে তিনি আর মধ্যস্থতার চেষ্টা চালাবেন না।

স্বেতলানার প্রশ্ন, ‘তিন বছর পেরিয়ে গেল, এত মানুষ পঙ্গু হলো, মরল, আর এখন কি আমরা ইউক্রেনের কিছুটা দখল করে থেমে যাব? তাহলে পুরো যুদ্ধের অর্থই বা কী?’

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে অভিযান শুরু করার পর থেকে রাশিয়ায় সরকারি নীতির সমালোচনা কিংবা যুদ্ধবিরোধী মত প্রকাশ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীকে প্রশ্ন করলেই কারাবাসসহ বিভিন্ন শাস্তির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

‘চাপ প্রয়োগ করে যাওয়া উচিত’

পুতিন যুদ্ধবিরতিকে ‘মানবিক উদ্যোগ’ বলে আখ্যায়িত করলেও বাস্তবে রুশ বাহিনী টানা কয়েক মাস ধরে যুদ্ধক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছে। শনিবার রাশিয়ার সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা কুরস্ক সীমান্ত অঞ্চলের একটি গ্রাম ইউক্রেনীয়দের কাছ থেকে পুনর্দখল করেছে—যেখানে গত আগস্টে কিয়েভের বাহিনী শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে এনেছিল।

এখন ইউক্রেন সেখানে মাত্র একটি সংকীর্ণ এলাকা ধরে রেখেছে, আর রাশিয়া আরও এগিয়ে গেছে উত্তর-পূর্ব সুমি অঞ্চলে।

এদিকে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের পর ইউক্রেন কতটা যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ওপর নির্ভর করতে পারবে, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও অর্থ ছাড়া কিয়েভ যদি বিকল্প কোনো সহায়তা না পায়, তবে পরিস্থিতি আরও রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকে পড়তে পারে।

এই পটভূমিতে রাশিয়ার আত্মবিশ্বাসও বেড়ে গেছে।

৫৮ বছর বয়সী ইয়েভগেনি পাভলোভ বলেন, ‘আমি ইউক্রেনকে বিশ্বাস করি না। এই যুদ্ধবিরতির কোনও বাস্তবতা নেই, গোলাগুলি চলতেই থাকবে। বিরতি দেওয়ার দরকার নেই। যদি চাপ দেওয়া হয়, তাহলে তা শেষ পর্যন্ত দিয়ে যাওয়া উচিত।’