শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কূটনৈতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে যুক্তরাজ্য বুধবার এক নতুন দফার আলোচনার আয়োজন করছে।
আলোচনায় অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো।
হোয়াইট হাউসের বরাত দিয়ে লন্ডন থেকে এএফপি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ চলতি সপ্তাহেই মস্কো সফর করবেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে তার রাশিয়ায় চতুর্থ সফর।
এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্প ক্রিমিয়া অঞ্চলকে রাশিয়ার ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত।
গত সপ্তাহে প্যারিসে ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক অনুরূপ বৈঠকে প্রথম এই প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। তবে এরপর ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রচেষ্টা থেকে সরে আসবে।
ইস্টার উপলক্ষে স্বল্প সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতি দিলেও চলতি সপ্তাহে রাশিয়া আবারও বিমান হামলা শুরু করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ইউক্রেন কেবল যুদ্ধবিরতির পরই রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় বসতে রাজি।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা তড়িঘড়ি করে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে যেতে পারবে না।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চুক্তি করানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে রাজি করাতে পারেননি। গত সপ্তাহান্তে তিনি বলেন, ‘এই সপ্তাহেই চুক্তি হতে পারে’—যদিও যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
গত বৃহস্পতিবার প্যারিসে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা এবং জার্মানির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বৈঠক করেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, তিনি যুদ্ধ অবসানের একটি মার্কিন পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছেন, যদিও এর বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। প্যারিস বৈঠকের পর রুবিও রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ফোনে এই পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন।
প্যারিস বৈঠকের পর ট্রাম্প ও রুবিও উভয়েই বলেছেন, দ্রুত অগ্রগতি না হলে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনার টেবিল থেকে সরে দাঁড়াতে পারে।
ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট মঙ্গলবার বলেন, ‘ট্রাম্প এই যুদ্ধ শেষ করতে চান, উভয় পক্ষের রক্তপাত বন্ধ করতে চান, এবং তিনি বহুদিন ধরেই এ বিষয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়ে আসছেন। তিনি উভয় পক্ষের প্রতি বিরক্ত এবং তা তিনি স্পষ্টভাবেই প্রকাশ করেছেন।’
দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য
বুধবারের আলোচনায় নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি। তবে প্যারিস বৈঠকের তুলনায় এ বৈঠক অপেক্ষাকৃত নিম্নস্তরের হবে। এতে অংশ নিচ্ছেন ইউক্রেন বিষয়ক মার্কিন দূত কিথ কেলগ, ফরাসি প্রেসিডেন্টের কূটনৈতিক উপদেষ্টা ইমানুয়েল বোন।
ইউক্রেনের পক্ষে থাকবেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির দপ্তরের প্রধান আন্দ্রি ইয়ারমাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ।
যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি সংসদে বলেন, ‘এই আলোচনায় একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির কাঠামো এবং দীর্ঘমেয়াদে শান্তি প্রতিষ্ঠার উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।’
মার্চে ট্রাম্প একটি শর্তহীন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন, যা কিয়েভ গ্রহণ করলেও মস্কো প্রত্যাখ্যান করে।
হোয়াইট হাউস জানায়, দুই পক্ষ ৩০ দিনের জন্য জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর হামলা বন্ধে যে সমঝোতায় পৌঁছেছিল, তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, তারা এই চুক্তিকে ইতোমধ্যে সমাপ্ত বলে মনে করছে।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-নোয়েল ব্যারো প্যারিস বৈঠককে ‘অগ্রগতি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন, কারণ এতে ইউরোপীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের সঙ্গে একই টেবিলে বসেছেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগে আশঙ্কা করছিল, শান্তিপ্রক্রিয়ার বাইরে পড়ে যেতে পারে।
এদিকে ট্রাম্প যদি ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বন্ধ করে দেন, তাহলে ইউক্রেনকে কীভাবে সমর্থন দেওয়া যায়—তা নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা হিসাব-নিকাশে ব্যস্ত।