বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫৪

শুল্কের ধাক্কা সত্ত্বেও সাংহাইতে নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রদর্শনী ‘অটো সাংহাই’ শুরু হচ্ছে

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস):  বাড়তে থাকা বাণিজ্য বাধার মধ্যেও বুধবার সাংহাইতে শুরু হচ্ছে বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল শিল্প মেলা। যেখানে বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) নতুন সম্ভাবনাকে তুলে ধরা হবে। সেখানে উচ্চপ্রযুক্তির বিলাসবহুল এসইউভি, স্যালুন ও মাল্টি-পারপাস যানবাহনের এক ঝাঁক নতুন মডেল উন্মোচন হবে। যদিও বাড়তে থাকা বাণিজ্য বাধা চীনের বৈশ্বিক উচ্চাকাঙ্ক্ষায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। বুধবর শুরু হওয়া এ ‘অটো সাংহাই’ ২ মে পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

প্রদর্শনীতে প্রায় ১,০০০ প্রদর্শক উপস্থিত থাকার কথা। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী বিদেশি গাড়ি নির্মাতারা এটি দেখাতে প্রস্তুত যে, তারা চীনের বাজারে আধিপত্য বিস্তারকারী অতি-প্রতিযোগিতামূলক চীনা সংস্থাগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারে।

চীন সরকার দীর্ঘদিন ধরে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড গাড়ি উন্নয়নে বিনিয়োগ করায় দেশের বাজার এখন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। বিশ্লেষকরা এই বাজারকে অপেক্ষাকৃত তরুণ এবং নতুনত্বের জন্য আরও উন্মুক্ত বলে মনে করছেন। কারণ, অন্যান্য বড় বাজারে হ্রাসের মধ্যে বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজার এ বাড়ছে। যেখানে অন্যান্য বড় বাজারে হ্রাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এলিক্সপার্টনার্স-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, "চীনে বৈদ্যুতিক গাড়ি দ্রুত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে, যা বুদ্ধিমান-গাড়ি প্রযুক্তি যেমন স্বয়ংক্রিয় চালনার বৈশিষ্ট্যসহ বাজারকে এগিয়ে নিচ্ছে।

এএফপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাতে ভক্সওয়াগেন, যা চীনে সবচেয়ে বড় বিদেশি গাড়ি নির্মাতা, তাদের ‘চীনের জন্য চীনে নির্মিত’ একাধিক নতুন মডেল ও ড্রাইভার সহায়তা প্রযুক্তি উন্মোচন করেছে। ভক্সওয়াগেন চায়না প্রধান রালফ ব্র্যান্ডস্ট্যাটার বলেন, "আমাদের ইভি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ধাক্কা এখান থেকেই শুরু।"

প্রদর্শনীতে বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোকে দেশীয় ডজন ডজন প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রদর্শনীতে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ প্রতিষ্ঠান, স্টার্টআপ যেমন নিও ও এক্সপেং, প্রযুক্তি জায়ান্ট হুয়াওয়ে এবং ইলেকট্রনিক্স প্রতিষ্ঠান থেকে গাড়ি প্রস্তুতকারীতে পরিণত হওয়া শাওমি। এই প্রতিযোগিতা চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত উদ্ভাবন ও অগ্রগতিতে প্রণোদনা দিয়েছে।

সোমবার ব্যাটারি জায়ান্ট সিএটিএল ঘোষণা করেছে তারা একটি এমন ব্যাটারি তৈরি করেছে যা প্রতিদ্বন্দ্বী বিওয়াইডি-র চেয়ে দ্রুত চার্জ হয় এবং মাত্র পাঁচ মিনিটে ৫২০ কিলোমিটার রেঞ্জ পুনরুদ্ধার করা যায়।

তবে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাজারে অনেক স্টার্টআপ ইতোমধ্যেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, আর ব্র্যান্ড যেমন এসএআইসি, বিবিওয়াইড ও জেল একটি তীব্র মূল্য যুদ্ধে লিপ্ত। অনেক চীনা গাড়ি নির্মাতা তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করার জন্য ইউরোপ, ল্যাটিন আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মতো বাজারে তাদের বিদেশী বিক্রয় বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। গত বছর চীন ৬.৪ মিলিয়ন যাত্রীবাহী গাড়ি রপ্তানি করেছে, যা দ্বিতীয় স্থানে থাকা জাপানের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।

নিও মঙ্গলবার জানায়, ইউরোপে সম্প্রসারণে তারা যতটা জটিলতা আশা করেছিল, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে—যার মধ্যে শুল্কমূল্য তাদের প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে প্রভাব ফেলছে। যেসব বিদেশি কোম্পানি চীনে গাড়ি তৈরি করে, যেমন জেনারেল মোটরস ও ফোর্ড, তারাও এই সমস্যা নিয়ে চিন্তিত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির ফলে বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে উত্তেজনা চরমে উঠেছে।

গত বছর থেকে চীনের গাড়ী নির্মাতারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের মুখোমুখি হয়েছে। কারণ ইউ মনে করে চীনের রাষ্ট্রীয় সহায়তা ইউরোপীয় গাড়ি নির্মাতাদেরকে অন্যায্যভাবে প্রতিযোগিতার বাইরে ঠেলে দিচ্ছে। তবে, রাশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানিতে কিছুটা শুল্ক সুরক্ষা পেয়েছে। যদিও এসব শুল্ক চীনের গাড়ির যন্ত্রাংশ রপ্তানির খরচ ২৪ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াবে, তবুও তা চীনের মোট গাড়ি শিল্প উৎপাদন মূল্যের মাত্র ৩.৮ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে বলে জানিয়েছে এলিক্সপার্টনার্স।

অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জও রয়েছে—মহামারির পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দুর্বল, অভ্যন্তরীণ ভোগব্যয় কম এবং অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগও রয়েছে। তবে, জার্মান গাড়ি বিশেষজ্ঞ ফার্দিনান্দ ডুডেনহোফার বলেন, "যারা বলে চীন দুর্বল হচ্ছে, তাদের উচিত সাংহাইয়ের দিকে তাকানো।"