বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৬:৫৭

ইথিওপিয়ার কুষ্ঠরোগীদের কষ্টের জীবন

আডিস আবাবা, ২৩ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : এএফপি): কুষ্ঠরোগে শুধু ডান পা হারাননি তিলাহুন ওয়ালে—ইথিওপিয়ায় এখনও হাজার হাজার মানুষ এ রোগের কারণে নিজের পরিবার পর্যন্ত হারিয়েছেন ।

ইথিওপিয়ার ঘনবসতিপূর্ণ ওরোমিয়া অঞ্চলের ৪৬ বছর বয়সী কৃষক তিলাহুন বলেন, ‘আমার পরিবার আমাকে ত্যাগ করেছে। তারা আমার নম্বর ব্লক করেছে, আমার সঙ্গে কথা বলতেও চায় না।’ প্রায় ১০ বছর আগে তিনি কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হন।

পূর্ব আফ্রিকার এই দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ১৩ কোটি। ১৯৯৯ সালে, প্রতি ১০ হাজারে আক্রান্তের সংখ্যা ১-এর নিচে নেমে যাওয়ার পর ইথিওপিয়া কুষ্ঠরোগকে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে নির্মূল ঘোষণা করেছিল।

তবে জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে এখনও প্রতি বছর প্রায় ২,৫০০ নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়। কুষ্ঠরোগকে ২০টি ‘উপেক্ষিত’ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগের একটি হিসেবে চিহ্নিত করেছে ডব্লিউএইচও।

গভীরভাবে ধর্মপরায়ণ ইথিওপীয় সমাজে কুষ্ঠরোগকে প্রভুর শাস্তি হিসেবে দেখা হয়।

কী এই রোগ?

মাইক্রোব্যাকটেরিয়াম লেপ্রি নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট এই সংক্রামক রোগটি ত্বক ও স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করে এবং এতে শারীরিক বিকলাঙ্গতাসহ নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডব্লিউএইচও বলছে, কুষ্ঠরোগ ২০০০ সালে বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে নির্মূল ঘোষণা করা হলেও, আজও ১২০টির বেশি দেশে এই রোগের উপস্থিতি রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ২ লাখ কুষ্ঠরোগের নতুন ঘটনা রেকর্ড হয়—যদিও এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য এবং সময়মতো চিকিৎসা পেলে বিকলাঙ্গতা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

৩৫ বছর বয়সী হাইলে কাইরোস ছোটবেলায় এই রোগে আক্রান্ত হন। তিনি বলেন, ‘শরীরের কিছু অংশে ফোলা দেখা দেয়।’ একটি কম্বলে ঢেকে তিনি নিজের পায়ে কুষ্ঠের প্রভাব আড়াল করে রাখেন।

তিনি জানান, এখনও সমাজে কুষ্ঠরোগ নিয়ে বিদ্বেষ রয়েছে। মানুষ তাকে এড়িয়ে চলে।

‘ইথিওপিয়ার মানুষ এখনও এই রোগ সম্পর্কে খুব কম জানে’, বলেন তিনি।

চিকিৎসা ও সহায়তা

রাজধানী আডিস আবাবায় অবস্থিত আলার্ট হাসপাতাল কুষ্ঠরোগ চিকিৎসায় বিশেষায়িত। একসঙ্গে বহু রোগী সেখানে চিকিৎসা নেন।

১৯৩৪ সালে এটি মূলত একটি কুষ্ঠ উপনিবেশ হিসেবে শহর থেকে দূরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে এখন শহর বিস্তৃত হয়ে তা ঘিরে ফেলেছে।

‘কলঙ্ক কিছুটা কমেছে’

আন্তর্জাতিক কুষ্ঠ মিশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক সলোমন গেতাহুন বলেন, রোগটি নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ধীরে ধীরে বদলাচ্ছে।

এই এনজিওটি দেশজুড়ে কমিউনিটিতে আলোচনা সভার আয়োজন করে, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তিরা নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সংস্থাটি কুষ্ঠরোগীদের ক্ষুদ্রঋণও দেয়, যাদের অনেকেই কাজ খুঁজে পান না।

৭০ বছর বয়সী আতালে মেকুরিয়াও এমনই একটি কেন্দ্রে কাজ করেন, যেখানে প্রায় এক ডজন নারী কুষ্ঠরোগী মাদুর, ঐতিহ্যবাহী পোশাক ও গয়না তৈরি করেন।

‘এই সামান্য আয় দিয়েই পরিবার চালানো যায়’, বলেন আতালে। কাঁচা তুলা দিয়ে বুননের প্রতি কেজিতে তিনি ১০০ থেকে ১৫০ বির (প্রায় ৭৫ সেন্ট থেকে ১.১৫ ডলার) পান।

আতালে বলেন, ‘এখানে আসা ও সময় কাটানো আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাড়িতে বসে থাকার চেয়ে অনেক ভালো।’ তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হলেও এখন কিছুটা কম বৈষম্যের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

‘আগে মানুষ বলত, 'ওর কাছে যেও না!' এখন ওষুধের সহজলভ্যতার কারণে অবজ্ঞা অনেকটাই কমেছে’, বলেন তিনি।

সহায়তা হ্রাসে হুমকির মুখে সাফল্য

ডব্লিউএইচও ইথিওপিয়ার চিকিৎসা ও পরিচর্যায় অগ্রগতির প্রশংসা করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বড় ধরনের সহায়তা কাটছাঁটের কারণে এই প্রচেষ্টা হুমকির মুখে পড়তে পারে।

গত মাসে ডব্লিউএইচও তাদের বাজেট এক-পঞ্চমাংশ কমানোর ঘোষণা দেয়।

এটি আলার্ট হাসপাতালের জন্য একটি বড় সমস্যা হতে পারে, যেখানকার প্রতিরোধমূলক ওষুধের জোগান আসে ডব্লিউএইচও থেকে।

হাসপাতালের পরিচালক শিমেলিস গেজাহেগন বলেন, ইথিওপীয় কর্তৃপক্ষ ‘বিকল্প পরিকল্পনা’র প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

তিনি যোগ করেন, এই কাজ চালিয়ে যাওয়া এবং রোগটি নির্মূলে আরও অগ্রগতি অর্জনের জন্য সরকারকে অবশ্যই এগিয়ে আসতে হবে।

‘তবে কিছু সমস্যার মুখে পড়তে হতে পারে’, বলেন তিনি।