বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৮:৫৬

পোপ ফ্রান্সিসকে বিশাল জনসমাগমে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : আর্জেন্টিনীয় পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ সাধারন মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তিনদিনব্যাপী প্রদর্শনের শুরুতে বুধবার সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় শেষ বিদায় জানাতে হাজার হাজার শোকাহত মানুষ হাজির হয়েছেন।

ভ্যাটিকান সিটি থেকে এএফপি জানায়,সকাল ১১টা (গ্রিনিচ মান সময় ০৯০০) থেকে ব্যাসিলিকার দরজা খুলে দিলে দীর্ঘ সারিতে থাকা তীর্থযাত্রী ও পর্যটকরা খোলা কফিনের পাশে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শুরু করেন।

৬৭ বছর বয়সী রোমের অবসরপ্রাপ্ত নারী সিমোনেত্তা মারিনি বলেন, ‘আমি এক মহান মানুষকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছি। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের পক্ষে।’

২০১৩ সালে ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিকদের নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া সংস্কারপন্থী ফ্রান্সিস সোমবার ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি সম্প্রতি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পাঁচ সপ্তাহ হাসপাতালে ছিলেন।

পোপের মরদেহ রাখা হয়েছে লাল আস্তরণযুক্ত কাঠের কফিনে। তিনি পরেছিলেন পোপীয় পোশাক—লাল চাসুবল, সাদা মিত্রা, পায়ে কালো জুতা এবং আঙুলের মাঝে ছিল রোজারি।

আগামী তিন দিন কফিনটি মাইকেলেঞ্জেলোর আঁকা গম্বুজের নিচে অবস্থিত অলটার অব দ্য কনফেশন-এর সামনে একটি নিচু বিয়ারে রাখা থাকবে।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টা (গ্রিনিচ সময় ১৮০০) কফিনটি বন্ধ করে দেওয়া হবে, শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে শনিবার।

৬৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নার্স ভিনচেঞ্জা নোসিলা ভোর ৪টায় রোমের দক্ষিণে ফর্মিয়া থেকে রওনা দিয়ে পোপের মরদেহ প্রথম দেখতে আসেন।

তিনি বলেন, ‘এটা খুব আবেগময় ছিল। তারা বেশি সময় দেয় না, হেঁটে যেতে হয়, দ্রুত বিদায় জানিয়ে বের হয়ে আসতে হয়।’

ছুটিতে রোমে আসা ষাটের ঘরের এক আইরিশ দম্পতি জানান, তাদের দেশে যাজকদের যৌন নির্যাতনের সমস্যা মোকাবেলায় পোপ ফ্রান্সিস যে ভূমিকা নিয়েছিলেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই তারা এসেছেন।

ক্লিওধনা ডেভলিন বলেন, ‘তিনি ছিলেন গরিব, বঞ্চিত ও নির্যাতিতদের পক্ষে একজন মহান কণ্ঠস্বর।’

কার্ডিনালদের শোভাযাত্রা

কর্তৃপক্ষ জানায়, দরজা খোলার সময় প্রায় ২০ হাজার মানুষ ব্যাসিলিকায় প্রবেশের অপেক্ষায় ছিলেন। ভিতরে লোকজন দশ সারি হয়ে কফিনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলেন।

এর আগে ভোরে, ১২ বছরব্যাপী পোপিয় দায়িত্বকালীন তাঁর বাসস্থান ‘কাসা সান্তা মার্তা’ চ্যাপেল থেকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকা পর্যন্ত পোপের কফিনটি শোভাযাত্রায় আনা হয়।

কার্ডিনাল, যাজক ও সুইস গার্ডদের সঙ্গে ছিল ঘণ্টার ধ্বনি ও মানুষের করতালি। বহু মানুষ ছবি তোলেন।

শনিবারের শেষকৃত্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ব্রিটেনের প্রিন্স উইলিয়ামসহ বিশ্বের বহু রাষ্ট্রপ্রধান ও লক্ষাধিক তীর্থযাত্রী অংশ নেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শেষকৃত্যের পর তাঁর মরদেহ রোমের সান্তা মারিয়া মেজোরে পোপিয় গির্জায় সমাহিত করা হবে, যেখানে একটি সাধারণ শিলালিপিতে লেখা থাকবে: ঋৎধহপরংপঁং।

‘তাঁর অভাব গভীরভাবে অনুভূত হবে’
ইতালি আগামী শনিবারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা পরিকল্পনা করছে, যেহেতু শুক্রবার দেশটিতে একটি সরকারি ছুটিও রয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ানতেদোসি জানান, প্রায় ১৫০ থেকে ১৭০টি বিদেশি প্রতিনিধিদল এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষের আগমনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

বেসিলিকার ভেতরে ও বাইরে ব্যারিকেড বসানো হয়েছে, নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং গরমের কারণে পানির বোতল বিতরণ করা হচ্ছে।

৪৩ বছর বয়সী রোমের শিক্ষক পাসকোয়ালে অ্যাপোলিতো বলেন, ‘সকালে ভেতর থেকে একটা টান অনুভব করলাম যে আমাকে আসতেই হবে।’
‘তিনি শ্রোতা ছিলেন, আপন করে নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তাঁকে ভীষণভাবে মিস করব।’

ফ্রান্সিসের নিজ দেশ আর্জেন্টিনা যেখানে সাতদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে, সেখানে ইতালি পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে, যা ২০০৫ সালে পোপ জন পল দ্বিতীয়ের জন্য ঘোষিত তিনদিনের শোককাল থেকে বেশি।

কার্ডিনালদের বৈঠক

শেষকৃত্যের পর বিশ্বব্যাপী নজর যাবে ফ্রান্সিসের উত্তরসূরি নির্বাচনের দিকে।

বিশ্বজুড়ে কার্ডিনালদের ভ্যাটিকান থেকে রোমে ফেরার আহ্বান জানিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

৮০ বছরের কম বয়সী কার্ডিনালরাই কনক্লেভে ভোট দেওয়ার যোগ্য। পোপের মৃত্যু পরবর্তী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যেই এ কনক্লেভ শুরু হতে হবে।

বুধবার বিকেলে ক্যামেরলেনগো কার্ডিনাল কেভিন ফারেলের নেতৃত্বে দ্বিতীয় কার্ডিনাল বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময় পর্যন্ত তিনিই পবিত্র আসনের দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে থাকবেন।

ফ্রান্সিসের মৃত্যুর এক মাস আগেই তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান। চিকিৎসকরা তাঁকে দু’মাস বিশ্রামের পরামর্শ দিলেও তিনি জনসম্মুখে উপস্থিত হতে থাকেন।

ঈস্টার সানডের দিন তিনি মিছিলে অংশ নেন এবং পোপ মোবাইলে করে ঘুরে ঘুরে মানুষকে শুভেচ্ছা জানান ও শিশুদের চুমু খান।

তাঁর মৃত্যু সনদে বলা হয়েছে, পরদিন সকালে তিনি স্ট্রোক, কোমা ও হৃদযন্ত্রবিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।