শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি অপ্রত্যাশিতভাবে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে ০.১ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার ব্যাংক অব কোরিয়া জানিয়েছে। ব্যাংকটি বলেছে, মাসের পর মাস রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও বাণিজ্য উত্তেজনার ফলে দেশটি অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপি সিউল এ সংবাদ দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এশিয়ার এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম দেশ রপ্তানিনির্ভর দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতির উপর ২৫ শতাংশ "পাল্টা" শুল্ক আরোপের হুমকি দেন। এতে দেশটির অর্থনীতিতে আতঙ্ক সৃষ্টি করে এবং সিউলে তালিকাভুক্ত শেয়ার বাজারে ধস নামে। এছাড়া দেশটির মুদ্রার মান ২০০৯ সালের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে।
দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়লের ডিসেম্বর মাসে বেসামরিক শাসন স্থগিতের ব্যর্থ চেষ্টার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়াতে যে সংকট শুরু হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠা শুরু করেছে। ওই সময় রজনৈতিক সংকট শুরু হলে গত ডিসেম্বর মাসেই তাঁকে অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে যে, তাদের প্রকৃত মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ০.১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
ব্লুমবার্গ ইকোনমিক্সের অর্থনীতিবিদ হোস্যুং কওন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতিতে দুটি বিষয় আঘাত করেছে। একটি হচ্ছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়লের সামরিক শাসনের ব্যর্থ চেষ্টা এবং অপরটি হচ্ছে মার্কিন বাণিজ্য নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ।
তিনি আরও বলেন, "ভবিষ্যতের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কমে আসার ফলে দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি কিছুটা পুনরুদ্ধার হতে পারে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক বহাল থাকায় পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া খুবই নাজুক থাকবে।"
গত বছরের প্রথম প্রান্তিকে দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি ১.৩ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হয়েছিল, তবে চতুর্থ প্রান্তিকে তা প্রত্যাশার চেয়ে কম বৃদ্ধি পায়, কারণ, ইউন সুক ইয়লের সামরিক শাসনের ঘোষণা ভোক্তাদের আস্থা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
কোরিয়া কাস্টমস সার্ভিসের মতে, এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত দেশের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশেরও বেশি কমেছে, যেখানে শুধুমাত্র সেমিকন্ডাক্টর বাদে দেশটির ১০টি প্রধান রপ্তানি খাতের মধ্যে ৯টিতে পতন লক্ষ্য করা গেছে। সবচেয়ে তীব্র পতন দেখা গেছে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে। যা প্রায় ১৪ শতাংশেরও বেশি হবে।
এই সপ্তাহে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) দক্ষিণ কোরিয়ার চলতি বছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২.০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১.০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে।
সেজং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কিম দে-জং বলেন, "দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনীতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও দুর্বল ডলার বিনিময় হারের গঠনগত চাপে কারণে প্রবৃদ্ধির গতি আরও স্পষ্টভাবে কমে আসছে।"
গত সপ্তাহে ব্যাংক অব কোরিয়ার গভর্নর রি চাং-ইয়ং বলেছেন, দেশের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি এখন ফেব্রুয়ারিতে করা ১.৫ শতাংশ পূর্বাভাসের নিচে নেমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, "শুল্ক নীতির কঠোরতা, যা প্রাথমিক পূর্বাভাসের চেয়ে অনেক বেশি, প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনায় আরও চাপ সৃষ্টি করবে।"