শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব অর্থনীতির বড় বড় দেশগুলো বন কী পরিমাণ কার্বন শোষণ করতে পারে তা অতিরঞ্জিতভাবে তুলে ধরছে-এবং এর ফলে তারা আরও বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নিচ্ছে। নতুন এক গবেষণায় বৃহস্পতিবার এমন আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, গবেষণায় ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়াকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করে বলা হয়েছে, বন ও অন্যান্য ভূমি-ভিত্তিক কার্বন শোষণকারী উপাদানগুলোর হিসাব নির্ধারণে পরিষ্কার নিয়ম না থাকায় দেশগুলো তাদের জাতীয় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের প্রতিবেদন ‘ম্যানিপুলেট’ করার সুযোগ পাচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এখনও নিশ্চিত নন যে, ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এসব কার্বন শোষক (সিঙ্ক) কীভাবে আচরণ করবে, কিংবা তারা ঠিক কতটা কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ু থেকে শোষণ করতে পারবে।
তবু দেশগুলো নিজেদের মতো করে ধারণা তৈরি করে সেই সংখ্যাগুলোই ব্যবহার করছে তাদের জাতীয় জলবায়ু পরিকল্পনায়। এই পরিকল্পনাগুলো ২০৩৫ সাল পর্যন্ত চূড়ান্ত করার কথা রয়েছে আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের আগেই।
জলবায়ু বিষয়ক নীতিনির্ধারক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্স’ জানিয়েছে, বন কী পরিমাণ কার্বন শোষণ করতে পারবে তা নিয়ে অতিরিক্ত আশাবাদী অনুমান করা হচ্ছে, যা জীবাশ্ম জ্বালানি নির্গমনের প্রকৃত কর্তনের প্রয়োজনীয়তা আড়াল করছে।
এই ফাঁকি বৈশ্বিক উষ্ণায়নকে শিল্প-পূর্ব যুগের তুলনায় ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রচেষ্টার প্রতি হুমকি তৈরি করছে-যা ২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তির মূল লক্ষ্য।
‘ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্স’-এর ভাষ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়া তাদের সর্বশেষ জলবায়ু পরিকল্পনায় এতটাই বেশি বননির্ভর হয়েছে যে, বাস্তব নির্গমন কমানোর হার ১০ শতাংশ কমে গেছে।
অন্যদিকে, ব্রাজিল ২০৩৫ সালের মধ্যে ২০০৫ সালের তুলনায় নির্গমন ৫৯ থেকে ৬৭ শতাংশ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবে বন কীভাবে এই লক্ষ্য পূরণে অবদান রাখবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়নি।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ব্রাজিলের এইভাবে লক্ষ্য নির্ধারণের ফলে দেশটি তাদের জ্বালানি খাতের নির্গমন দ্বিগুণ করেও লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে।
গবেষণার সহ-লেখক ক্লাউদিও ফোরনার বলেন, ‘আপনি যদি বন ব্যবহার না করেন, তাহলে পুরো কাজটাই করতে হবে জ্বালানি খাতকে। কিন্তু আপনি যদি সব কিছু বন দিয়ে চালিয়ে যান, তাহলে নির্গমন বাড়তে থাকলেও লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হয়ে যায়।’
তিনি বলেন, এই সমস্যার উৎপত্তি হয়েছে কারণ প্যারিস চুক্তি দেশগুলোকে নিজেদের মতো করে অনুমান করার সুযোগ দিয়েছে যে, তাদের ভূমি কতটা কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারবে।
‘নিয়ম না থাকলে দেশগুলো এই ব্যবস্থাকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করবেই,’ বলেন ফোরনার।
বৃদ্ধির অনুমান
ফোরনার বলেন, বন অবশ্যই বৈশ্বিক নির্গমন হ্রাসের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, তবে এগুলোর হিসাব আলাদা করে উপস্থাপন করা উচিত—জ্বালানি ও শিল্প খাতের নির্গমনের সমানুপাতে নয়।
এর পেছনে যুক্তি হলো—বনের মাধ্যমে কার্বন শোষণের প্রক্রিয়া এখনও জটিল ও সম্পূর্ণরূপে অনুধাবনযোগ্য নয়, যেখানে জীবাশ্ম জ্বালানির প্রভাব অনেক স্পষ্ট।
এ ছাড়া, বনের কার্বনও আবার ফিরে আসতে পারে বায়ুমণ্ডলে-যেমন বন আগুন বা প্রাকৃতিক কারণে।
এমনকি জলবায়ু পরিবর্তন ও মানবসৃষ্ট অন্যান্য প্রভাবও বন ও মাটির কার্বন শোষণ ক্ষমতা দুর্বল করে তুলছে বলে উদ্বেগ রয়েছে।
ফোরনার বলেন, ‘বিজ্ঞান এখনো জানে না ভবিষ্যতে কার্বন সিঙ্ক কেমন আচরণ করবে। আর যদি বিজ্ঞান না জানে, তাহলে অধিকাংশ সরকার যে জানে না-তা নিশ্চিত। তবু তারা ধরে নিচ্ছে এই শোষণ ক্ষমতা বাড়তেই থাকবে। যদি সেই অনুমান ভুল হয়, তাহলে বড় ঘাটতি তৈরি হবে।’
‘ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্স’-এর মতে, এই অনিশ্চয়তা বছরে প্রায় ৩০০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের সমান হতে পারে—যা ইউরোপের বার্ষিক নির্গমনের প্রায় সমান।
জাতিসংঘের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরাও ‘ভূ-প্রয়োগ সংক্রান্ত নির্গমন ও শোষণের হিসাব’ নিয়ে দেশীয় হিসাব ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মধ্যে গড়পড়তা ১৫ শতাংশ নির্গমনের সমান একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ অসংগতি’র কথা আগেই বলেছেন।
গত বছরের এক প্রতিবেদনে তারা বলেন, এই হিসাবের সমন্বয় করতে গিয়ে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বকে আগের ধারণার চেয়েও কম সময়ে ‘নেট-শূন্য নির্গমন’ লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে।