শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : নতুন প্রযুক্তিতে প্রাচীন জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ার এক সময়ের সজীব রেইনফরেস্ট যখন মরুভূমিতে রূপ নেয়, তখন ‘জলবায়ু বিপর্যয়ের’ মুখে প্রাগৈতিহাসিক দৈত্যাকৃতি ক্যাঙ্গারুরা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
সিডনি থেকে এএফপি জানায়, প্রায় পাঁচ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে এই বিলুপ্ত প্রজাতির ‘প্রোটেমনোডন’ বিচরণ করত। এদের ওজন ছিল প্রায় ১৭০ কেজি (৩৭৫ পাউন্ড), যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভারী ক্যাঙ্গারুর চেয়েও প্রায় দ্বিগুণ।
প্রত্নতাত্ত্বিকরা জীবাশ্ম দাঁতের দীর্ঘস্থায়ী রাসায়নিক চিহ্নগুলোর সঙ্গে সদ্য আবিষ্কৃত শিলার উপাদান মিলিয়ে একটি জনবসতির খাদ্যাভ্যাস পুনর্গঠন করতে সক্ষম হন।
রাসায়নিক উপাদানের সাদৃশ্য দেখে এই ক্যাঙ্গারুগুলো খাবারের সন্ধানে কতদূর গমন করত তা বোঝা গেছে।
কুইন্সল্যান্ড জাদুঘরের বিজ্ঞানী স্কট হকনাল বলেন, ‘ভাবুন যেন প্রাচীন যুগের জিপিএস ট্র্যাকার।’
‘আমরা জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে জানতে পারি- একটি প্রাণী কোথায় চলাফেরা করেছে, কী খেয়েছে, কার সঙ্গে থেকেছে এবং কীভাবে মারা গেছে- এ যেন প্রাগৈতিহাসিক বিগ ব্রাদার।’
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, এসব মেগা-হার্বিভোর বা বিশালাকৃতির তৃণভোজী প্রাণী একসময় নিবিড় রেইনফরেস্টে বসবাস করত এবং খাবারের জন্য খুব বেশি দূরে যেত না।
প্রায় ৩ লাখ বছর আগে জলবায়ু ক্রমশ শুষ্ক ও অস্থির হয়ে ওঠে এবং রেইনফরেস্ট শুকিয়ে যেতে শুরু করে।
গবেষকদের ভাষায়, ‘তীব্র জলবায়ু পরিবর্তনের সময়ও যখন দৈত্যাকৃতি ক্যাঙ্গারুরা নিজেদের বাসস্থানের কাছাকাছিই থাকতে চাইত, সেটাই তাদের বিলুপ্তির একটি বড় কারণ হয়ে ওঠে।’
অস্ট্রেলিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে এবং পাপুয়া নিউগিনিতে এই প্রজাতির বিভিন্ন শাখা আরও দীর্ঘ সময় টিকে ছিল। শেষদিককার কিছু প্রজাতি প্রায় ৪০ হাজার বছর আগেও জীবিত ছিল।
বিজ্ঞানী অ্যান্থনি ডসেটো জানান, নতুন এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে অস্ট্রেলিয়ার মেগাফোনার বিলুপ্তির ইতিহাস আরও গভীরভাবে অনুধাবন করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘দৈত্যাকার ইকিডনা, প্রায় দুই টনের মতো ওজনের ওয়ম্ব্যাট সদৃশ মার্সুপিয়াল এবং বিশাল মাংসাশী টিকটিকির মতো প্রাণীরা এক সময় অস্ট্রেলিয়াজুড়ে বিচরণ করত।’
‘অস্ট্রেলীয় মেগাফোনার বিলুপ্তি নিয়ে বহু দশক ধরে বিতর্ক চলেছে, কিন্তু এখন আমরা ব্যক্তি ও প্রজাতি ভিত্তিতে আরও নির্ভুলভাবে বিশ্লেষণ করতে পারব,’ বলেন ডসেটো, যিনি ওলংগং আইসোটোপ জিওক্রোনোলজি ল্যাবের গবেষক।
‘এই সূক্ষ্ম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন প্রতিটি স্থান ও জীবাশ্ম বিশ্লেষণ করে আরও নিখুঁত বিলুপ্তি-সংক্রান্ত চিত্র নির্মাণ করা সম্ভব।’
পিয়ার-রিভিউড জার্নাল প্লস ওয়ানে গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে।