শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ সুদানের দক্ষিণাঞ্চলে সেনাবাহিনী ও বিরোধী বাহিনীর মধ্যে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় জাতিসংঘ শুক্রবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংঘর্ষপীড়িত এলাকা থেকে বাস্তুচ্যুত সাধারণ মানুষ এএফপিকে জানিয়েছেন, তারা খাদ্যবিহীন অবস্থায় রয়েছেন।
জুবা থেকে এএফপিকে জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে নবীন দেশ দক্ষিণ সুদান দীর্ঘদিন ধরেই নিরাপত্তাহীনতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত। তবে প্রেসিডেন্ট সালভা কির ও দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট রিয়েক মাচারের অনুগত গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সাম্প্রতিক লড়াই নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, ২০১৮ সালের শান্তি চুক্তির মাধ্যমে শেষ হওয়া পাঁচ বছরব্যাপী গৃহযুদ্ধ—যাতে প্রায় ৪ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়—আবারও নতুন রূপে ফিরে আসতে পারে। সেই চুক্তির পর কির ও মাচার একত্রে ঐক্য সরকার গঠন করলেও তা ক্রমেই ভেঙে পড়ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সেন্ট্রাল ইকুয়েটোরিয়া রাজ্যের মরোবো ও ইয়েই কাউন্টিতে সরকারি বাহিনী দক্ষিণ সুদান পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (এসএসপিডিএফ) এবং বিরোধী দল সুদান পিপলস লিবারেশন আর্মি-ইন অপজিশন (এসপিএএলএ-আইও)-এর মধ্যে সংঘর্ষের ফলে 'বেসামরিক জনগণের হতাহত ও বাস্তুচ্যুতি ঘটেছ', জানিয়েছে দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ মিশন (ইউএনএমআইএসএস)।
২০১৮ সালের চুক্তি অনুযায়ী এই রাজ্যটি সরকারি ও বিরোধী বাহিনীর নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বিভক্ত ছিল।
প্রো-মাচার বাহিনী অভিযোগ করেছে, সরকার বাহিনী সম্প্রতি একটি সামরিক শিবিরে হামলা চালিয়ে মরোবো ও ইয়েই কাউন্টিকে যুদ্ধক্ষেত্রে রূপান্তর করার চেষ্টা করছে এবং বেসামরিকদের এলাকা ছাড়ার জন্য হুঁশিয়ার করছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এএফপির মন্তব্যের অনুরোধে কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
জাতিসংঘ সংঘর্ষের বিস্তারিত তথ্য না জানালেও রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির ভঙ্গুরতার কথা উল্লেখ করে দ্রুত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে।
মরোবো কাউন্টির কমিশনার চার্লস ডাটা বুলেন জানিয়েছেন, এলাকাটির পরিস্থিতি এখনও অস্থিতিশীল, প্রতিদিন প্রায় ৭,০০০ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন, যাদের অধিকাংশই গ্রামীণ অঞ্চল ছেড়ে মরোবো শহরের দিকে পালাচ্ছেন।
২৮ বছর বয়সী মার্গারেট ইলেলি জানান, মঙ্গলবার বিকেলে কাছাকাছি গুলির শব্দ শুনেই তারা সবকিছু ফেলে পালিয়ে যান। বর্তমানে তিনি মরোবো শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। এএফপিকে তিনি বলেন, "আমি হতবিহ্বল হয়ে গেছি, বুঝতে পারছি না এখন কী করব।"
৩০ বছর বয়সী চার্লস লিকাম্বো তার পাঁচ সদস্যের পরিবারসহ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। তিনি জানান, ফসল ও ছাগল রেখে পালাতে হয়েছে।
":আমার পরিবার ও আমি এখনও কোনো খাদ্য সহায়তা পাইনি। আমার সন্তানেরা ক্ষুধায় কাঁদছে,' বলেন তিনি। তিনি মানবিক সংস্থাগুলোর কাছে সহায়তার আহ্বান জানান।
এ সংঘর্ষের মধ্যে এমন এক সময়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, যখন রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। গত মাসে মাচারকে গৃহবন্দী করা হয়েছে।
জাতিসংঘ জানায়, মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত এ সহিংসতায় ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এর মধ্যে ১৮০ জনেরও বেশি নিহত ও ২৫০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।