বাসস
  ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১১

ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা নিয়ে শুরু হয়েছে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

ঢাকা, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): আগের বৈঠকে অগ্রগতির কথা জানানোর পর, শনিবার ওমানের রাজধানী মাসকটে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কারিগরি ও উচ্চ পর্যায়ের পরমাণু আলোচনা শুরু হচ্ছে।

আলোচনার জন্য ইরানের মধ্যস্থতাকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির নেতৃত্বে তেহরানের প্রতিনিধিদল শুক্রবার মাসকাটে পৌঁছেছেন। মার্কিন পক্ষের নেতৃত্বে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ।

ওমান থেকে এএফপি এই খবর জানায়।

চলতি সপ্তাহে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি ‘সতর্ক আশাবাদ’ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র দাবি হয়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র না রাখে, তবে এই দাবি পূরণযোগ্য।’ তবে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘যদি যুক্তরাষ্ট্রের দাবিগুলো অবাস্তব বা অযৌক্তিক হয়, তাহলে আমরা স্বাভাবিকভাবেই সমস্যার সম্মুখীন হবো।’

শুক্রবার ‘টাইম ম্যাগাজিনে’ প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চুক্তি ব্যর্থ হলে সামরিক পদক্ষেপের হুমকি পুনর্ব্যক্ত করেছেন, তবে চুক্তির ব্যাপারে তিনি আশাবাদী বলেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বোমা ফেলার চেয়ে চুক্তি হওয়া অনেক বেশি শান্তি’।

ইরানের বার্তা সংস্থা ‘তাসনিম’ জানিয়েছে, আলোচনার শুরুতে কারিগরি পর্যায়ের বৈঠক হবে। এরপর উচ্চপর্যায়ের আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ দপ্তরের প্রধান মাইকেল অ্যান্টন নেতৃত্ব দেবেন কারিগরি পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলকে। অপরদিকে তেহরানের পক্ষ থেকে ইরানের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম ঘারিবাবাদি ও মাজিদ তাখত-রাভানচি থাকবেন ।

ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাঈল বাকাই শুক্রবার জানান, মাসকাট ও রোমে গত দুই শনিবার যেভাবে আলোচনা হয়েছে, তেমনি এবারও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আলবুসাঈদির মধ্যস্থতায় আলোচনা হবে।

এক্স-এ দেওয়া বার্তায় বাকাই বলেছেন, ‘ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক জ্বালানির আইনগত অধিকার নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য, এবং আমাদের কর্মসূচি যে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ, তা দেখানোর জন্য যৌক্তিক পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত আছি।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘অত্যন্ত দ্রুত’ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও ইরানের অন্যতম অগ্রাধিকার।

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি থেকে সরে আসার পর থেকে সাম্প্রতিক আলোচনাগুলো দীর্ঘস্থায়ী শত্রুদের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা, যা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে বিধিনিষেধ আরোপের বিনিময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছিল।

শত্রুভাবাপন্ন নিষেধাজ্ঞা:

চলতি জানুয়ারিতে পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর, ট্রাম্প আবারও তেহরানের বিরুদ্ধে ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি চালু করেছেন। মার্চ মাসে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনির কাছে চিঠি লিখে আলোচনার প্রস্তাব দেন। তবে কূটনীতি ব্যর্থ হলে সম্ভাব্য সামরিক পদক্ষেপের সতর্কও করেছিলেন। 

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র ইরানের তেল নেটওয়ার্ক লক্ষ্য করে নতুন নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করে-যা তেহরান ‘শত্রুভাবাপন্ন’ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে।

পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে যে ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চায়—যা তেহরান ধারাবাহিকভাবে অস্বীকার করে আসছে। তেহরান সবসময় দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ।

বুধবার জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ইরানের নাতানজ পারমাণবিক স্থাপনার কাছে তৈরি হওয়া সুড়ঙ্গ নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা জানতে চাইছি, এগুলো কী উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে? ওরা বলছে, এটা আমাদের ব্যাপার না।

ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে একটি পুরোনো সুড়ঙ্গের পাশে একটি নতুন গভীরভাবে চাপা পড়া সুড়ঙ্গ দেখানো হয়েছে। 

ওয়াশিংটন-ভিত্তিক থিঙ্ক-ট্যাঙ্কটি একটি নতুন নিরাপত্তা পরিধি গঠনের কথাও উল্লেখ করেছেন। 

এবিষয়ে গ্রোসি সাংবাদিকদের বলেন ‘আমরা তাদের জিজ্ঞাসা করছি, এটি কীসের জন্য? তারা আমাদের বলছে, এটি আপনার কোনও বিষয় নয়।’ 

তিনি বলেন, সেখানে ‘অঘোষিত পদার্থ’ সংরক্ষণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে এখনই কোনো পূর্বধারণা করতে চান না। তেহরানও এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

অপরিবর্তনীয় অধিকার:

বুধবার প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও পুনরায় বলেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার মেনে নেওয়া হবে না। 

তিনি বলেন, ‘যদি ইরান শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি চায়, তাহলে তারা অন্যান্য অনেক দেশের মতো সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম আমদানি করতে পারে’।

বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ২০১৫ সালের চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশের অনেক বেশি। তবে অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকারকে ‘আলোচনার যোগ্য নয়’ সম্প্রতি তেহরান যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন করতে চাচ্ছে-যারা ২০১৫ সালের চুক্তির সহ-স্বাক্ষরকারী । যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠকের আগে এই তিন দেশের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা করেছে ইরান।

বৃহস্পতিবার আরাঘচি বর্তমানে এই তিন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক দুর্বল উল্লেখ করে বলেন, পারমাণবিক ইস্যু ও অন্যান্য পারস্পরিক আগ্রহ ও উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করতে তিনি প্যারিস, বার্লিন ও লন্ডন সফর করতে প্রস্তুত।