বাসস
  ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩৭
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৩:১৯

ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে নিয়োগ দিলেন ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট আব্বাস

ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস তার এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও)-র প্রথম সহ-সভাপতি হিসেবে শনিবার নিয়োগ দিয়েছেন, যা তাকে প্রবীণ এই নেতার সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

এ সপ্তাহে রামাল্লায় অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে সহ-সভাপতির পদ সৃষ্টি হওয়ার পর ৮৯ বছর বয়সী আব্বাস হুসেইন আল-শেইখকে এ পদে নিয়োগ দেন।

রামাল্লাহ থেকে এএফপি জানায়, পিএলও-র সংস্কারের জন্য কয়েক বছরের আন্তর্জাতিক চাপের পর এই পদ সৃষ্টি করা হলো এবং এটি এমন সময়ে এলো যখন আরব ও পশ্চিমা শক্তিগুলো গাজা যুদ্ধোত্তর শাসনে আব্বাসের ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) সম্প্রসারিত ভূমিকার কথা ভাবছে।

পিএলও-র নির্বাহী কমিটির সদস্য ওয়াসেল আবু ইউসুফ এএফপিকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস পিএলও নেতৃত্বের একজন ডেপুটি (সহ-সভাপতি) হিসেবে হুসেইন আল-শেইখকে নিয়োগ দিয়েছেন।’

১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত পিএলও ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা ও স্বাক্ষরের ক্ষমতা রাখে, আর পিএ ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের নির্দিষ্ট অংশে শাসনকার্য পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

পিএলও একটি ছাতাসংস্থা, যাতে বহু ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী রয়েছে; তবে হামাস ও ইসলামিক জিহাদের মতো সশস্ত্র গোষ্ঠী, যারা বর্তমানে গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে লড়ছে, তারা এর অন্তর্ভুক্ত নয়।

৬৪ বছর বয়সী শেইখ, আব্বাসের ফাতাহ আন্দোলনের এক অভিজ্ঞ নেতা, যিনি পিএর নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেএবং যিনি আব্বাসের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত।

তিনি ১৯৭০-এর দশকের শেষ এবং ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে টানা ১০ বছরেরও বেশি সময় ইসরাইলি কারাগারে কাটান, যেখানে তিনি হিব্রু ভাষা শেখেন।

২০২২ সালে তাকে পিএলও নির্বাহী কমিটির মহাসচিব এবং এর আলোচনা বিভাগের প্রধান করা হয়—এই সংবেদনশীল দায়িত্বে আব্বাসের প্রতি তার ঘনিষ্ঠতা প্রতিফলিত হয়।

সম্প্রতি আব্বাস তাকে বিদেশে ফিলিস্তিনি কূটনৈতিক মিশন তদারকির জন্য গঠিত এক কমিটির প্রধানও নিয়োগ দিয়েছেন।

ফিলিস্তিনি বিশ্লেষক হানি আল-মাসরি বলেন, পিএর ভেতরেই একটি সহ-রাষ্ট্রপতি পদের প্রয়োজন ছিল।

তিনি বলেন, ‘এটি কোনো সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নয় বরং বাইরের চাপের প্রতিক্রিয়া,’—প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের এই পরিচালক আরও বলেন, ‘প্রয়োজন ছিল এমন একজন ভাইস-প্রসিডেন্টের, যার হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যেতে পারে।’

- ‘উত্তরসূরি নিয়োগের প্রাক্কালে’ -

তবে বিশ্লেষক আরেফ জাফাল বলেন, নতুন এই পদ সৃষ্টি করা হয়েছে আব্বাসের পরবর্তী উত্তরসূরি নির্ধারণের পথ প্রশস্ত করতে, ‘কারণ ফিলিস্তিনি পরিস্থিতির অনেক কিছুই এখন তা দাবি করছে।’

আল-মারসাদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালক জাফাল এএফপিকে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক ব্যবস্থা এমনিতেই ভগ্নদশায় রয়েছে, তাই আমি মনে করি এই সমস্ত আয়োজনই আব্বাসের উত্তরসূরি তৈরির এ প্রাক্কাল।’

সৌদি আরব আব্বাসের এই ‘সংস্কারমূলক পদক্ষেপকে’ স্বাগত জানিয়েছে—পিএলও ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে শেইখকে তার ডেপুটি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া প্রসঙ্গে, যে রাষ্ট্রকে প্রায় ১৫০টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে বলে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই সংস্কারমূলক পদক্ষেপ ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করবে... যার মূলে রয়েছে ১৯৬৭ সালের সীমান্তরেখার ভিত্তিতে পূর্ব জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জন।’

গত মার্চ মাসে, কায়রোতে গাজা যুদ্ধোত্তর ভবিষ্যৎ নিয়ে আয়োজিত এক শীর্ষ সম্মেলনে আব্বাস ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, তিনি পিএলও-র ভেতর একটি সহ-সভাপতির পদ সৃষ্টি করবেন।

২০০৫ সালে ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের মৃত্যুর পর থেকে আব্বাস পিএর প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন।

পরের বছর তিনি চার বছরের জন্য প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন, তবে এরপর আর কোনো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, আব্বাসের মৃত্যু বা পদত্যাগের ক্ষেত্রে, সহ-সভাপতিই পিএলও এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব নেবেন, যেটিকে প্রায় ১৫০টি দেশ স্বীকৃতি দিয়েছে।

এ সপ্তাহের পিএলও সম্মেলনে আব্বাস সহ-সভাপতি পদের প্রস্তাব আনেন, তবে কয়েকটি গোষ্ঠী এর বিরোধিতা করে সম্মেলন থেকে ওয়াকআউট করে।

তাদের দাবি, এই উদ্যোগ পিএলও-র সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি এবং বিদেশি হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত বহন করে।

এদিকে, পিএ অর্থনৈতিকভাবে ধসের মুখে রয়েছে এবং হামাসের ইসরাইল হামলার পর গাজা যুদ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক অনুদানদাতারা ক্রমেই বেশি করে রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের শর্তে আর্থিক সহায়তা জুড়ে দিচ্ছেন।

বুধবার, আব্বাস যুক্তি দেন যে, সহ-সভাপতির পদ সৃষ্টি ফিলিস্তিনি প্রতিষ্ঠানগুলিকে শক্তিশালী করবে এবং ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আরও জোরালো করবে।

কিছু বিশ্লেষক মনে করছেন, এই পদক্ষেপ আব্বাসের পক্ষ থেকে একটি কৌশলগত প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে তিনি ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের চিত্র দেখাতে চাইছেন।