শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): ইরানের প্রেসিডেন্ট রোববার সেই বন্দরের বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করেছেন, যেখানে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে ২৮ জন নিহত ও এক হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। বিস্ফোরণের ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও সেখানে এখনও দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, শনিবার দক্ষিণ ইরানের শাহিদ রাজায়ী বন্দরে বিস্ফোরণটি ঘটে। এ বন্দর হরমুজ প্রণালীর কাছে অবস্থিত, যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট তেল রপ্তানির পাঁচভাগ পরিবাহিত হয়।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, ভয়াবহ ধোঁয়া ও বায়ুদূষণ ছড়িয়ে পড়ায়, রোববার বন্দরের নিকটবর্তী হরমুজগান প্রদেশের রাজধানী বান্দার আব্বাসের সব স্কুল ও অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়, যাতে করে কর্তৃপক্ষ জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় মনোযোগী হতে পারে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্থানীয় বাসিন্দাদের ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলার এবং সুরক্ষামূলক মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছে।
বান্দার আব্বাসে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান উদ্ধারকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘সরকারের কিছু করণীয় বা অনুসরণযোগ্য বিষয় আছে কিনা, তা সরেজমিনে দেখতে এসেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘যারা স্বজন হারিয়েছেন, তাদের আমরা দেখভাল করব, আর যারা আহত হয়েছেন, তাদেরও অবশ্যই আমরা সহযোগিতা করব।’
পেজেশকিয়ান এরই মধ্যে বিস্ফোরণের কারণ অনুসন্ধানে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
রাশিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে, তারা ‘বিভিন্ন বিশেষজ্ঞবাহী’ একাধিক বিমান ইরানে পাঠাচ্ছে আগুন নেভাতে সহায়তার জন্য। রাশিয়ার জরুরি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এসবের মধ্যে একটি বিশেষায়িত অগ্নিনির্বাপক বিমানও রয়েছে।
‘দ্য নিউইয়র্ক টাইমস’ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণে যা ফেটেছে তা হলো সোডিয়াম পারক্লোরেট, যা ক্ষেপণাস্ত্রের কঠিন জ্বালানির একটি প্রধান উপাদান।
তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রেজা তালাঈ-নিক রাষ্ট্রীয় টিভিকে বলেন, ‘এ এলাকায় সামরিক জ্বালানি বা সামরিক কাজে ব্যবহৃত কোনো আমদানি বা রপ্তানি পণ্য ছিল না।’
বন্দরের কাস্টমস অফিস রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সম্ভবত বিপজ্জনক ও রাসায়নিক পদার্থের সংরক্ষণাগারে আগুন লাগার কারণেই বিস্ফোরণটি ঘটে।
এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে -
এক আঞ্চলিক জরুরি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়েকটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়েছে।
রেড ক্রিসেন্ট প্রধান পিরহোসেইন কুলিভান্দ সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক ভিডিওতে রবিবার জানান, নিহতের সংখ্যা ২৮ এবং আহতের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে।
প্রাদেশিক বিচার বিভাগকেও উদ্ধৃত করে ইরানের আইএসএনএ বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা ২৮ এবং আহতের সংখ্যা ১,২৪২ জন।
কুলিভান্দ আরও জানান, কিছু আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসার জন্য রাজধানী তেহরানে পাঠানো হয়েছে, যা বিস্ফোরণস্থল থেকে এক হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে অবস্থিত।
রোববারও রাষ্ট্রীয় টিভির সরাসরি সম্প্রচারে ঘটনাস্থল থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উঠে আসতে দেখা গেছে।
রাষ্ট্রীয় টিভির এক প্রতিবেদক ঘটনাস্থল থেকে জানান, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে, তবে পুরোপুরি নিভেনি।’
ফারস বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের শব্দ ও কম্পন ৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত অনুভূত হয়েছে।
রবিবার ঘটনাস্থলে থাকা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসকান্দার মোমেনি জানান, বন্দরের ‘প্রধান এলাকাগুলোর’ পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল এবং কনটেইনার লোডিং ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের কাজ পুনরায় শুরু হয়েছে।
অন্য এক কর্মকর্তা, সড়ক ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী ফারজানে সাদেগ জানান, বন্দরের কেবল একটি অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং অন্যান্য অঞ্চলে ‘পণ্যবাহী কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে চলছে।’
রবিবার তাসনিম বার্তা সংস্থার এক ছবিতে দেখা যায়, আকাশে ছড়িয়ে থাকা কালো ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে একটি হেলিকপ্টার পানি ঢালছে। অন্য ছবিতে দেখা যায়, দগ্ধ ও উল্টে পড়া কনটেইনারের ভেতর দমকলকর্মীরা উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন এবং নিহত ব্যক্তির মরদেহ সরিয়ে নিচ্ছেন।
কর্তৃপক্ষ বিস্ফোরণস্থলের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিয়েছে এবং প্রচারিত ভিডিওচিত্র শুধু ইরানি গণমাধ্যমের মাধ্যমেই আসছে।
শোক ঘোষণা -
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার এএফপিকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তিনজন চীনা নাগরিক ‘স্থিতিশীল’ অবস্থায় রয়েছেন এবং নতুন কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত ইরানের সঙ্গে ‘একাত্মতা’ প্রকাশ করেছে এবং সৌদি আরব, পাকিস্তান, ভারত, তুরস্ক, জাতিসংঘ ও রাশিয়া শোকবার্তা পাঠিয়েছে।
তেহরান-সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ আন্দোলনও শোক জানিয়েছে, তারা বলেছে, ইরান ‘বিশ্বাস ও কঠোর সংকল্পের’ মাধ্যমে এই ট্র্যাজেডি কাটিয়ে উঠতে পারবে।
কর্তৃপক্ষ সোমবার জাতীয় শোকদিবস এবং রোববার থেকে হরমুজগান প্রদেশে তিনদিনের শোক ঘোষণা করেছে।
বিস্ফোরণটি এমন সময় ঘটল যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল ওমানে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করছিল, যার পরে উভয় পক্ষই ‘অগ্রগতির’ কথা জানিয়েছে।
যদিও ইরানি কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত বিস্ফোরণটিকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবেই বিবেচনা করছে, তবে এটি ইসরাইলের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে চলা ছায়াযুদ্ধের প্রেক্ষাপটেও ঘটেছে।
‘ওয়াশিংটন পোস্ট’ জানিয়েছে, ২০২০ সালে ইসরাইল শাহিদ রাজায়ী বন্দরে একটি সাইবার হামলা চালিয়েছিল।