শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): গ্রিনল্যান্ড কখনোই ‘ক্রয়যোগ্য সম্পত্তি' হবে না- রোববার এমন মন্তব্য করেছেন আর্কটিক অঞ্চলের এই দ্বীপের নতুন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ড্যানিশ স্বশাসিত অঞ্চলটি অধিগ্রহণের আলাপকে অসম্মানজনক বলে সমালোচনা করেছেন তিনি।
কোপেনহেগেন থেকে এএফপি জানায়, গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডরিক নিলসেন তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমবারের মতো ডেনমার্ক সফরে গিয়ে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই সফরের ছায়ার মতোই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই দ্বীপটি দখলের হুমকি বারবার উঠে এসেছে।
ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী ফ্রেডেরিকসেনের পাশে দাঁড়িয়ে নিলসেন সাংবাদিকদের বলেন, 'আমরা কখনোই কোনো সম্পত্তির মতো বিক্রি হয়ে যাব না, আর এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা, যা সবার বোঝা উচিত।'
এর আগে এপ্রিলের শুরুতে ফ্রেডেরিকসেন গ্রিনল্যান্ড সফরকালে যুক্তরাষ্ট্রকে বলেন, 'আপনি আরেকটি দেশকে দখল করতে পারেন না।'
তবে মার্চের নির্বাচনে মধ্য-ডানপন্থি ডেমোক্র্যাটস পার্টির নেতৃত্বে গ্রিনল্যান্ডে নতুন জোট সরকার গঠনের পর নিলসেন ও ফ্রেডেরিকসেন দুজনই জানিয়েছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসতে ইচ্ছুক।
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বারবার গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশের পর যুক্তরাষ্ট্র ও ডেনমার্কের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন, এবং প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের সম্ভাবনাও তিনি উড়িয়ে দেননি।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী যোনাস গার স্তোরের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, 'আমি মনে করি আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য আমাদের এটি প্রয়োজন, আর যদি না পাই, তাহলে সেটা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি হবে। তাই গ্রিনল্যান্ড আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
অসম্মান দেখানোর অভিযোগ
নিলসেন বলেন, 'আমরা এখন এমন এক পরিস্থিতিতে আছি যেখানে আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে, তা সম্মানজনক নয়।'
ফ্রেডেরিকসেন একমত প্রকাশ করে যোগ করেন, 'আমি পুরোপুরি একমত।'
নিলসেন আবারও জোর দিয়ে বলেন, গ্রিনল্যান্ড যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে প্রস্তুত।
তিনি বলেন, 'আমরা শক্তিশালী অংশীদারিত্বের জন্য প্রস্তুত, আমরা আরও উন্নয়নের জন্য প্রস্তুত, তবে আমরা সম্মান চাই।'
'পারস্পরিক সম্মান ছাড়া কোনো অংশীদারিত্ব হতে পারে না।'
মার্চ মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও গ্রিনল্যান্ড সফর করেন, যা নুক ও কোপেনহেগেন উভয়ই উসকানি হিসেবে দেখেছে।
গ্রিনল্যান্ডের পিটুফিক মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে সফরকালে ভ্যান্স ডেনমার্কের সমালোচনা করে বলেন, 'আপনারা গ্রিনল্যান্ডবাসীদের জন্য যথেষ্ট কাজ করেননি এবং এই বিশাল ও সুন্দর ভূখণ্ডের নিরাপত্তা কাঠামোর জন্যও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করেননি।'
এর জবাবে ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লকে রাসমুসেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, 'আমরা সমালোচনার জন্য উন্মুক্ত, তবে একথা স্পষ্ট করে বলতে চাই, সমালোচনার যে ভাষায় তা করা হয়েছে, তা আমাদের পছন্দ হয়নি।'
নিলসেন নিজেও বলেছেন, 'যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড পাবে না।' তিনি আরও যোগ করেন, 'আমরা কারও সম্পত্তি নই। আমাদের ভবিষ্যৎ আমরা নিজেরাই ঠিক করব,' — এক ফেসবুক পোস্টে এ মন্তব্য করেন তিনি।
কোপেনহেগেনে তার দুদিনের সফরকালে নিলসেন ডেনমার্কের রাজা ফ্রেডেরিক এবং ড্যানিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন।
ডেনমার্কের রাজপ্রাসাদ এক পৃথক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সফর শেষে রাজা ফ্রেডেরিক নিলসেনের সঙ্গে গ্রিনল্যান্ড সফরে যাবেন।
সর্বশেষ জনমত জরিপ অনুযায়ী, গ্রিনল্যান্ডের ৫৭,০০০ বাসিন্দার বিশাল অংশ ডেনমার্ক থেকে স্বাধীনতা চায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হতে চায় না।