শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা সোমবার ‘নির্ণায়ক সপ্তাহে’ প্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিয়েভের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে যাতে তারা ক্রিমিয়া ছেড়ে দিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে এগিয়ে যায়।
ইউক্রেনের কিয়েভ থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ক্রিমিয়া ছাড়তে রাজি। ২০১৪ সালে রাশিয়া এ উপদ্বীপ দখল করে নেয়।
ক্ষমতা গ্রহণের আগে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি একদিনেই ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন। জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি লড়াই থামাতে কূটনৈতিক উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
শনিবার তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসলে যুদ্ধের অবসান চান কি না। এ যুদ্ধ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা ধ্বংস করেছে এবং লক্ষাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে।
এরপর রাতে রাশিয়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় চারজনকে হত্যা এবং এক ডজনেরও বেশি মানুষকে আহত করেছে।
রোববার ট্রাম্প বলেন, 'আমি চাই তিনি (পুতিন) গুলি চালানো বন্ধ করুন, বসে আলোচনা করুন এবং একটি চুক্তি সই করুন।' তিনি যোগ করেন, 'আমরা একটি চুক্তির কাঠামোতে পৌঁছেছি বলে মনে করি এবং আমি চাই তিনি এতে সই করুন।'
এর আগে রোববার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এনবিসি’কে বলেন, 'আমরা কাছাকাছি এসেছি, তবে এখনো যথেষ্ট কাছে পৌঁছাইনি। আমি মনে করি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সপ্তাহ হতে যাচ্ছে।'
হোয়াইট হাউস বলেছে, দ্রুত অগ্রগতি না হলে তারা শান্তি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা থেকে সরে আসতে পারে। ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ প্রক্রিয়াকে তিনি দুই সপ্তাহ সময় দেবেন।
- আলোচনায় ক্রিমিয়া ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ -
ওয়াশিংটন এখনও তাদের প্রস্তাবিত শান্তিচুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, তারা যুদ্ধবিরতির জন্য বর্তমান ফ্রন্টলাইন বরাবর যুদ্ধ বন্ধ করার এবং ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলছে।
ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন জেলেনস্কি ক্রিমিয়া ছাড়তে সম্মত হবেন, যদিও ইউক্রেনীয় নেতা বারবার বলেছেন, তিনি এটি কখনও করবেন না।
রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে পূর্ণমাত্রার আগ্রাসন শুরু করে। এরপর থেকে তারা পূর্ব ও দক্ষিণ ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে, যদিও তাদের পুরোপুরি সামরিক নিয়ন্ত্রণ সেখানে প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্রিমিয়াও।
এদিকে, জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্তোরিয়াস রবিবার বলেন, ইউক্রেনের উচিত নয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে উল্লিখিত সব ভূখণ্ড ছাড়ার শর্ত মেনে নেওয়া।
তিনি এআরডি সম্প্রচারমাধ্যমকে বলেন, 'ইউক্রেন বহুদিন ধরেই জানে যে, টেকসই এবং বিশ্বাসযোগ্য কোনো যুদ্ধবিরতি বা শান্তিচুক্তির জন্য কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হতে পারে। তবে এসব ছাড় অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সাম্প্রতিক প্রস্তাবে যে মাত্রায় বলা হয়েছে, সেই পর্যায় পর্যন্ত যাবে না।'
রোববার মার্কো রুবিও রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন বলে মস্কোর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে বলা হয়, তারা 'আলোচনা শুরু করার জন্য উদ্ভূত শর্তগুলো সংহত করার গুরুত্ব" এবং 'দীর্ঘমেয়াদে টেকসই শান্তির একটি নির্ভরযোগ্য পথ নির্ধারণের' ওপর জোর দিয়েছেন।
- কুরস্ক যুদ্ধ ও উত্তর কোরিয়ার স্বীকৃতি -
২০২৪ সালের আগস্টে কিয়েভ রাশিয়ার পশ্চিমাঞ্চলীয় কুরস্ক এলাকায় আকস্মিক সীমান্তপারের পাল্টা অভিযান চালায়। ইউক্রেনীয় বাহিনী আশা করেছিল, ভবিষ্যৎ শান্তি আলোচনায় সুবিধা আদায়ের জন্য এ ভূমি ব্যবহার করা যাবে।
রাশিয়া শনিবার দাবি করে, তারা কুরস্কের ইউক্রেনীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন শেষ গ্রাম গর্নাল দখল করেছে। তবে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এটিকে "প্রচারণামূলক কৌশল" বলে উড়িয়ে দেয়।
রাশিয়ার চিফ অব স্টাফ ভ্যালেরি গেরাসিমভ কুরস্ক অভিযানে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করা উত্তর কোরীয় সেনাদের ‘বীরত্ব’ প্রশংসা করেছেন। এটাই প্রথমবার মস্কো আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরীয় সেনাদের অংশগ্রহণের কথা স্বীকার করেছে।
সোমবার উত্তর কোরিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, তারা রাশিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ জানায়, পিয়ংইয়ংয়ের সেনারা কুরস্ক পুনর্দখলে মস্কোকে সহায়তা করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দাবি, গত বছর উত্তর কোরিয়া কুরস্কে ১০ হাজারের বেশি সেনা পাঠিয়েছিল।
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন কেসিএনএ-কে বলেন, "ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করা সবাই আমাদের মাতৃভূমির সম্মানিত বীর।" তিনি আরও জানান, রাজধানীতে তাদের ‘যুদ্ধকীর্তির’ স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হবে।
উত্তর কোরিয়ার কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের বিবৃতিতে বলা হয়, 'রাশিয়ান ফেডারেশনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দুঃসাহসিক আগ্রাসন প্রতিহত করতে এবং কুরস্ক অঞ্চল পুনর্দখলের জন্য পরিচালিত অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।'
অন্যদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি রবিবার জানান, ইউক্রেনীয় বাহিনী এখনও রাশিয়ার ভূখণ্ডে তাদের উপস্থিতি বজায় রেখেছে।
কয়েকজন রুশ সামরিক ব্লগার জানিয়েছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন সীমান্তের বনাঞ্চল ঘিরে এখনও লড়াই চলছে।
এছাড়া, কুরস্ক অঞ্চলের এক স্থানীয় রুশ সেনা কমান্ডারও জানিয়েছেন, সেখানে এখনো অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে রবিবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত খবরে জানানো হয়।