শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার লক্ষ্যে ব্রাজিল, চীন, রাশিয়া এবং অন্যান্য ব্রিকস সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা সোমবার রিও ডি জেনেইরোতে দুই দিনের আলোচনা শুরু করেছেন। ব্রাজিল থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের প্রভাবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএএফ) প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দেওয়ার পর বিশ্ব অর্থনীতি যখন গভীর অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তখন ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মিশর, ইথিওপিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ ১১ সদস্যের এ জোটের শীর্ষ কূটনীতিকরা আগামী জুলাই মাসে অনুষ্ঠেয় ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের এজেন্ডা আরও শানিত করতে এ বৈঠক করছেন।
ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরা বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে সংলাপের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, "মানবিক সংকট, সশস্ত্র সংঘাত, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বহুপাক্ষিকতার অবক্ষয়ের এই সময়ে ব্রিকসের ভূমিকা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।"
গত জানুয়ারিতে চীনসহ বহু দেশকে ট্রাম্প প্রশাসন সার্বজনীন হারে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে। তবে চীনের ক্ষেত্রে এই শুল্কের হার ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। এর জবাবে বেইজিংও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে।
চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনাকারী ঝাও চেনসিন সোমবার বেইজিংয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ও দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে চীন ইতিহাসের সঠিক ধারায় রয়েছে।
২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোট পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন সংগঠনগুলোর বিকল্প হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। জি৭-এর মতো পশ্চিমা নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর বিকল্প প্ল্যাটফর্ম খুঁজছে। বর্তমানে এটি বৈশ্বিক জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক এবং বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৯ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে। জোটটি ইউক্রেন, গাজা এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
গাজার প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু করে ভিয়েরা বলেন, ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার চাই এবং তিনি ৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে গাজার ওপর চলমান অবরোধকে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ব্রিকস অপেক্ষাকৃত সংযত অবস্থান নিয়েছে, সাধারণ শান্তির আহ্বান জানালেও রাশিয়ার আক্রমণের সরাসরি নিন্দা এড়িয়ে গেছে। ভিয়েরা জাতিসংঘ সনদের নীতিমালা ও উদ্দেশ্য অনুসারে একটি কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র যাকে "ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সপ্তাহ" হিসেবে অভিহিত করেছে, ঠিক তখনই এ বৈঠক শুরু হয়েছে।
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি মনোভাব পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, তিনি মনে করছেন, পুতিন কেবল সময়ক্ষেপণ করছেন।
জবাবে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন আগামী ৮ থেকে ১০ মে পর্যন্ত তিন দিনের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন। তবে হোয়াইট হাউস জানায়, এই বিরতি যথেষ্ট নয় এবং ট্রাম্প একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি দেখতে চান। একই সময়ে ট্রাম্প ইউক্রেনের উপর ক্রিমিয়া পুনরুদ্ধারের আশা ত্যাগ করতে চাপ সৃষ্টি করছেন।
এ বৈঠকে মার্কিন ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ করা ব্রিকসের একটি প্রধান আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছরের শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকস দেশগুলো ডলার বহির্ভূত লেনদেন বাড়ানোর কথা বলেছিল, যার প্রেক্ষিতে ট্রাম্প ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন।
বৈঠকের পূর্বে ব্রাজিলের দৈনিক ‘ও গ্লোবো’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, ব্রিকস সদস্য দেশগুলো পারস্পরিক লেনদেনে জাতীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে চায়, তবে একটি অভিন্ন ব্রিকস মুদ্রা চালু করার আলোচনার এখনো সময় হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে ট্রাম্পের বাণিজ্য রোষানলের তুলনায় ব্রাজিল অপেক্ষাকৃত রেহাই পেয়েছে—ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ হয়েছে, যা চীনের তুলনায় অনেক কম।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিয়েরা জানান, ব্রিকস -এর তরফ থেকে নতুন কোনো মুদ্রা গঠনের পরিকল্পনা নেই।
মঙ্গলবার ব্রিকস বৈঠকে আরও নয়টি "অংশীদার" দেশ আলোচনায় অংশ নেবে, যাদের মধ্যে রয়েছে কয়েকটি সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র, কিউবা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, উগান্ডা এবং নাইজেরিয়া।