শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ইসরাইলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রধান রোনেন বার সোমবার বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে কয়েক সপ্তাহের উত্তেজনার পর তিনি আগামী ১৫ জুন পদত্যাগ করবেন। যদিও তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্থগিত করেছে।
ইসরাইলী গোয়েন্দা সংস্থা ‘শিন বেত’ এর নিহত কর্মকর্তাদের স্মরণে আয়োজিত একটি স্মরণসভায় রোনেন বার বলেন, "৩৫ বছরের চাকরি জীবনের পর, স্থায়ী উত্তরসূরি নিয়োগ এবং দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে, আমি আগামী ১৫ জুন আমার দায়িত্ব শেষ করবো।
রোনেন বার তার বরখাস্তের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে আদালতে একটি আইনি মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, যা জাতিকে বিভক্ত করেছে। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের দক্ষিণ ইসরাইলে আক্রমণের আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো নিয়ে পরস্পরবিরোধী সাক্ষ্য প্রকাশ করেছেন, যে হামলার জেরে গাজায় যুদ্ধ শুরু হয়।
তিনি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে একটি শপথ বাক্য পাঠিয়ে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আনুগত্য দাবি করার এবং সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের উপর গুপ্তচরবৃত্তি করার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে গত রোববার, নেতানিয়াহু তার নিজের পক্ষ থেকে আদালতে একটি হলফনামা দাখিল করেন এবং রোনেন বারকে মিথ্যাবাদী বলে আখ্যা দেন।
সোমবার সংস্থার সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্যে বার বলেন, আদালতে চলমান এই প্রক্রিয়া আমার ব্যক্তিগত অবস্থান নিয়ে নয় বরং ভবিষ্যত শিন বেত প্রধানদের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষার বিষয়ে।
তিনি বলেন, প্রত্যেক শিন বেত প্রধান যেন সরকারের নীতির অধীনে হলেও জনস্বার্থে স্বাধীনভাবে ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, তার জন্য একটি সুস্পষ্ট সীমানা নির্ধারণ করা প্রয়োজন, যেখানে আস্থা ও আনুগত্যের মধ্যে পার্থক্য বজায় থাকবে।
তিনি আরও স্বীকার করেন, হামাসের অভূতপূর্ব আক্রমণ প্রতিরোধে সংস্থার ব্যর্থতা ছিল। বহু ফ্রন্টে সফলতার পর, এক রাতেই দক্ষিণ ফ্রন্টে আকাশ ভেঙে পড়ল। সমস্ত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। শিন বেত পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হয়েছিল, একটি সংস্থার প্রধান হিসেবে আমি এ ব্যর্থতার দায় নিয়েছি।
গত মাসে সরকার রোনেন বারকে বরখাস্তের ঘোষণা দিলেও সুপ্রিম কোর্ট তা স্থগিত করে দেয়, যার ফলে ইসরাইলে ব্যাপক প্রতিবাদ-বিক্ষোভ শুরু হয়, উভয় পক্ষের সমর্থন ও বিরোধিতাও দেখা যায়। এই নজিরবিহীন বরখাস্তের সিদ্ধান্ত আদালতে চ্যালেঞ্জ করে রাজনৈতিক বিরোধী দল ও কিছু এনজিও।
দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারাভ-মিয়ারা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ব্যক্তিগত স্বার্থের সংঘাত থাকায় রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রচেষ্টা কলঙ্কিত করেছেন। কারণ, শিন বেত নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে কাতার থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগে তদন্ত করছিল ।
প্রাথমিক শুনানির পর আদালত রোনেন বার ও সরকারকে পৃথক পৃথক হলফনামা জমা দিতে বলেছেন।
গত সপ্তাহে রোনেন বার তার হলফনামায় বলেন, সম্ভাব্য সাংবিধানিক সংকটের ক্ষেত্রে ‘এটা স্পষ্ট’ ছিল যে নেতানিয়াহু চাইতেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে চলবেন, আদালতের নয়।
রোনেন বার আরও বলেন, ৭ অক্টোবর হামলার ঠিক আগে শিন বেত নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা দলকে সতর্ক করেছিল।
‘সেই রাতে কিছুই গোপন করা হয়নি।’
তবে গত রোরবার রোনেন বারের বিপরীত প্রতিক্রিয়া দিয়ে নেতানিয়াহু আদালতে ২৩ পৃষ্ঠার একটি হলফনামা দাখিল করেছেন। হলফনামায় নেতানিয়াহু লেখেন, রোনেন বার প্রধানমন্ত্রীকে জাগিয়ে দেননি, প্রতিরক্ষামন্ত্রীকেও জাগাননি, সেনাবাহিনী বা অন্য কাউকেও সতর্ক করেননি।
নেতানিয়াহু আরও বলেন, শিন বেতের প্রধান হিসেবে রোনেন বার তার ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন এবং সংগঠন পরিচালনা চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতার ক্ষেত্রে তিনি সমগ্র ইসরাইলি সরকারের আস্থা হারিয়েছেন ।