শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে বিশেষ সংসদ অধিবেশনের আহ্বান জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি এবং রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে। গত ২২ এপ্রিল পেহেলগাম হামলার ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় এই অধিবেশনের আহ্বান জানান তিনি।
মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এই খবর জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পিটিআই।
খাড়গে মোদিকে চিঠিতে লিখেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, এই মুহূর্তে যখন ঐক্য ও সংহতি অত্যন্ত জরুরি, বিরোধীরা বিশ্বাস করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংসদের উভয় কক্ষের একটি বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি ২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল পেহেলগামে নিরীহ নাগরিকদের ওপর নৃশংস হামলা মোকাবিলায় আমাদের সম্মিলিত সংকল্প এবং ইচ্ছাশক্তির একটি শক্তিশালী প্রদর্শন হবে।
চিঠিটি কংগ্রেস সাংসদ এবং দলের যোগাযোগ শাখার প্রধান জয়রাম রমেশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বিষয়টি শেয়ার করেছেন।
ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে কংগ্রেস প্রধানের লেখা চিঠিটি পাঠানো হলো।
পেহেলগাম হামলার পরপরই সরকার এর আগে বিরোধী নেতাদের সাথে একটি সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন।
সেখানে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বৈঠকটি ডাকা হয়েছিল।
সে সময় খাড়গে এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, সরকারের যেকোনো পদক্ষেপের জন্য বিরোধী দলের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘কারগিল থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত এই হামলার জন্য শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এই আক্রমণ কেবল নিরীহ পর্যটকদের উপর ছিল না, দেশের শত্রুরা ভারতের আত্মাকে আক্রমণ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে।’
মোদি ঘোষণা করেন, ‘এই হামলা যারা চালিয়েছে এবং যারা পরিকল্পনা করেছে তারা এমন শাস্তি পাবে যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না।’
গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামের বৈসারণ উপত্যকায় বন্দুকধারীরা গুলি চালিয়ে ২৬ জন পর্যটককে হত্যা করে।
এদিকে হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরের ৪৮টি রিসোর্ট বন্ধ ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার।
জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি পর্যটন কেন্দ্র জনসাধারণের জন্য বন্ধ করা হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এসব কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। একটি সরকারি নির্দেশে এমন তথ্য জানানো হয়।
গত সপ্তাহে পেহেলগামের মনোরম তৃণভূমিতে বন্দুকধারীর হামলায় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার কয়েকদিন পর নিরাপত্তা উদ্বেগ থেকে এই সিদ্ধান্ত বলে জানা গেছে।
বার্তা সংস্থা পিটিআইয়ের পর্যালোচনা করা একটি সরকারি নথি অনুসারে, ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলের সরকার কাশ্মীরের ৮৭টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধ করে দেয়ার এবং বাকিগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বুদগামের দুধপত্রি এবং অনন্তনাগের ভেরিনাগের মতো বেশ কয়েকটি পর্যটন স্থানও পর্যটকদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
স্থানীয়দের আয়ের একটি প্রধান উৎস ছিল কাশ্মীরের এসব পর্যটন কেন্দ্রগুলো। পেহেলগাম হামলার পর এসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে।
গত সপ্তাহে বন্দুকধারীর হামলার পর ভীত হয়ে পর্যটকরা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। অন্যদিকে অনেক ভ্রমণকারী তাদের আসন্ন ভ্রমণ বাতিল করেছেন।
মাত্র এক সপ্তাহ আগেও পেহেলগাম শহরে ছিল অসংখ্য পর্যটকের ভিড়। কিন্তু এখন পর্যটকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
এদিকে, এই সিদ্ধান্তের পর স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, পর্যটক কমে যাওয়ার ফলে তাদের আয় এবং জীবিকার উপর তা বড় প্রভাব পড়বে। কারণ, শহরটি এখনও গত সপ্তাহের ভয়াবহতার সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি।
তারা হামলার নিন্দা জানিয়ে বিক্ষোভও করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে তাদের সংহতি প্রকাশ করেছে।
গতকাল এক বিশেষ বিধানসভা অধিবেশনে এক জোরালো ভাষণে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ বলেন, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রথম জম্মু ও কাশ্মীরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং একটি বড় হামলার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছে।