শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : পাকিস্তানের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, ভারত আগামী ৬০ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
বুধবার ভোরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে তিনি এই আশঙ্কা প্রকাশ করেন। তবে তারার সরাসরি কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ হাজির করেননি। অন্যদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোও এই বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি।
পাকিস্তানি মন্ত্রীর দাবি, পাকিস্তানের কাছে এমন গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যা বলছে, ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত আক্রমণ চালাতে পারে।
তারার হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দেওয়া হবে কঠোরভাবে। এর ফলে উপমহাদেশে যে কোনো ধরনের মারাত্মক পরিণতির দায়ভার থাকবে ভারতের ওপর।
এর আগে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ আসিফ সংবাদ সংস্থা এএফপি’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, পাকিস্তানে ভারতের হামলা আসন্ন। এই অবস্থায় ইসলামাবাদ সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে। তিনি বলেছেন, পাকিস্তানের অস্তিত্বের প্রতি সরাসরি হুমকি সৃষ্টি হলে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারে দ্বিধা করবে না ইসলামাবাদ।
অন্যদিকে ভারতের পক্ষেও এসেছে কড়া বার্তা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে নিজ বাসভবনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তিন বাহিনীর প্রধান, চিফ অব ডিফেন্স অনীল চৌহান, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল।
বৈঠকে মোদি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীকে হামলার পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কোথায়, কখন এবং কীভাবে জবাব দিতে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেবে সেনাবাহিনী নিজেই।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, ওই বৈঠকে মোদি তার বক্তব্যে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর পেশাদারিত্ব ও সক্ষমতার ওপর আস্থা প্রকাশ করেন।
এনডিটিভির এক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন — সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করাই ভারতের জাতীয় সংকল্প।
সেই সঙ্গে পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপের সবুজ সংকেতও দিয়েছেন তিনি। সশস্ত্র বাহিনী ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মোদির বাসভবনে যান।
কাশ্মীরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের ওই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে ভারত। তবে পাকিস্তান বারবার সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করছে।
বুধবার বেলা ১১টায় মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটি (সিসিএস)-র সঙ্গে ফের বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।
এর আগেও গত বৃহস্পতিবার তিনি সিসিএসের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে সীমান্ত বন্ধ, সিন্ধু নদ চুক্তি বাতিলসহ পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজনীতিবিষয়ক কমিটি (সিসিপিএ)-র সঙ্গে আলোচনা করবেন।
এই কমিটিতে রয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যোগাযোগমন্ত্রী নিতিন গড়কড়ি, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডা ও অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণসহ একাধিক জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী।
এরপর মোদি অংশ নেবেন অর্থনীতি বিষয়ক কমিটির বৈঠকেও।
এদিকে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন, ‘ভারতের আক্রমণ আসন্ন’ এমন কথা তিনি বলেননি।
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর ‘আসন্ন ভারতীয় সামরিক অনুপ্রবেশের’ ইঙ্গিত দিয়ে নিজের আগের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে সোমবার (২৮ এপ্রিল) দাবি করেছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ।
গত ২২ এপ্রিলের ওই হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পর্যটক ছিলেন এবং ২০০০ সালের পর থেকে এটি ওই অঞ্চলে সবচেয়ে মারাত্মক সশস্ত্র হামলাগুলোর মধ্যে একটি। প্রাথমিকভাবে এক বার্তায় দায় স্বীকার করার দাবি উঠলেও, ‘স্পষ্টভাবে’ এই হামলায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে কাশ্মীর রেজিস্ট্যান্স, যারা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামেও পরিচিত।
ভারত কোনো প্রমাণ না দিয়েই হামলাকারীদের সীমান্তের বাইরের যোগসূত্রের ইঙ্গিত দিচ্ছে, অন্যদিকে পাকিস্তান এ ঘটনায় কোনো সম্পৃক্ততা জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
কাশ্মীর হামলার পর থেকে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশজুড়ে বেশ কয়েকটি সামরিক মহড়া চালিয়েছে। ওই ঘটনার পর, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশ দুটি একে অপরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।