বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১১:৩০

প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১০০ দিন পূর্তিতে প্রচারধর্মী সমাবেশে ট্রাম্প

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল ২০২৫ (বাসস) : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার মিশিগানের ওয়ারেন শহরে এক প্রচারাভিযানধর্মী সমাবেশে তার শাসনকালের ‘বিপ্লবাত্মক ও প্রতিশোধপরায়ণ’ সূচনা উদযাপন করেন। সমর্থকদের উচ্ছ্বাসে সিক্ত হয়ে ৭৮ বছর বয়সী ট্রাম্প দাবি করেন, ‘আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল প্রথম ১০০ দিন’ তার প্রশাসনের।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ারেন থেকে এএফপি জানায়, সমাবেশে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি প্রচারণার দিনগুলো মিস করি।’ এরপর তার ভাষণ এক পর্যায়ে রাষ্ট্রনেতার চেয়ে একজন প্রার্থীসুলভ হয়ে ওঠে। তিনি ডেমোক্রেট প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘র‌্যাডিকাল বাম’, বিচারকদের ‘কমিউনিস্ট’, মিডিয়াকে ‘ভুয়া’ বলে অভিহিত করেন। এমনকি বলেন, ‘বন্ধুর চেয়ে শত্রুরা আমাদের বাণিজ্যে কম ক্ষতি করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি কেবল শুরু করেছি।’ যদিও সাম্প্রতিক জরিপে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় মার্কিন জনমত তার প্রতি বিরূপ।

‘আমরা সব কিছুই করে ফেলেছি’ -

সমাবেশে ট্রাম্প অভিবাসন নীতির প্রদর্শন হিসেবে হাতকড়া ও শৃঙ্খলে আবদ্ধ অভিবাসীদের বিমানে ওঠানো, বাসে তোলা, মাথা ন্যাড়া করা—এমন একটি ভিডিও দেখান।

এতে তার বিতর্কিত নির্বাসন নীতির চিত্র উঠে আসে।

ট্রাম্পের বিলিয়নিয়ার সমর্থক ইলন মাস্ক ফেডারেল কর্মীবাহিনীর ব্যাপক ছাঁটাই শুরু করেছেন। ট্রাম্প নিজেও বৈশ্বিক সহযোগিতার বদলে শুল্ক আরোপ, মিত্রদের সমালোচনা ও বিদেশি সহায়তা বন্ধ করে বৈদেশিক নীতিকে রূপান্তর করেছেন।

মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু নীতিমালা বদলাতে বাধ্য হলেও, তিনি মঙ্গলবারও ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে ‘ভালো কাজ করছেন না’ বলে সমালোচনা করেন—যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাকে বরখাস্তের হুমকি থেকে সরে এসেছেন।

ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি আমরা হয় সব কিছুই করে ফেলেছি, অথবা প্রক্রিয়ায় আছি।’ তিনি জানান, দ্বিতীয় মেয়াদের সব লক্ষ্যই তিনি অর্জনের পথে রয়েছেন।

হোয়াইট হাউসের প্রধান হল থেকে বারাক ওবামার ছবি সরিয়ে নিজের একটি চিত্র স্থাপন করেছেন ট্রাম্প—যেখানে তিনি হত্যাচেষ্টার মধ্যেও বেঁচে গেছেন বলে দেখানো হয়েছে।

তাছাড়া, সরকারবিরোধী মামলা লড়েছে এমন আইনজীবীদের সংস্থাগুলোকে সরকারি সুবিধা না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি, এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্থায়ন হিমায়িত করেছেন—যা তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে সমালোচনার কেন্দ্র।

সীমা প্রসারণ -

সাধারণত প্রেসিডেন্টরা জনগণের পক্ষে সমর্থন বিস্তারে কাজ করেন, কিন্তু ট্রাম্প মূলত নিজের ঘাঁটি শক্তিশালী করতে মনোযোগী থেকেছেন। এই সমাবেশেও দেখা গেছে, অনেক সমর্থক এখনো তার সঙ্গেই।

৬৫ বছর বয়সী বিক্রেতা ডোনা ফিটসাইমন্স বলেন, ‘উনি দুর্দান্ত। সবাই শুল্ক নিয়ে চিন্তিত, আমরা না। অন্য সব কিছু ভালোই তো হচ্ছে।’

ডেমোক্রেটিক পার্টি এই অর্থনৈতিক উদ্বেগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করলেও নিজেরাও জনপ্রিয়তা সংকটে। তারা বলছে, ‘জীবন এখন আগের চেয়ে ব্যয়বহুল, অবসর গ্রহণ কঠিন, আর ‘ট্রাম্প মন্দা’ দরজায় কড়া নাড়ছে।’

সংসদে রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ১৪০টির বেশি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যেগুলোর অনেকগুলো আদালতের নজরে এসেছে। তিনি জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের চেষ্টা করেছেন—যা মার্কিন সংবিধানে সংরক্ষিত।

এক সাক্ষাৎকারে ক্ষমতা অতিরিক্তভাবে কুক্ষিগত করছেন কিনা এমন প্রশ্নে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি চাই না তারা এমন কিছু ভাবুক। আমি একটি কাজই করছি—আমেরিকাকে আবার মহান করে তুলছি।’

অধৈর্যতারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। প্রচারণায় তিনি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, রাশিয়া তার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

তবে রুশ প্রেসিডেন্ট শান্তি চান কি না- জিজ্ঞাসা করা হলে, এ বিষয়ে আশাবাদ প্রকাশ করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমার মনে হয় তিনি (পুতিন) চান।'