শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বুধবার বলেছেন, ইসলামাবাদের কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ রয়েছে যে ভারত শিগগিরই সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।
কাশ্মীরে প্রাণঘাতী হামলার পর উপমহাদেশে যুদ্ধাবস্থা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ইসলামাবাদও এ হামলার ‘চূড়ান্ত জবাব’ দেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন। ইসলামাবাদ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগের দিন সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা প্রধানদের সাথে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করার পর আতাউল্লাহ তারার এই বিবৃতি দেন, যেখানে তিনি (নরেন্দ্র মোদি) হামলার জবাব দিতে সেনাবাহিনীকে ‘সম্পূর্ণ অপারেশনাল স্বাধীনতা’ দিয়েছেন। একটি ঊর্ধ্বতন সরকারি সূত্র এএফপিকে এ তথ্য জানিয়েছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী তারার এক বিবৃতিতে বলেছেন, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে ভারত পেহেলগাম ঘটনাকে মিথ্যা অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে সামরিক হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে। পেহেলগাম হলো ভারতশাসিত কাশ্মীরের একটি পর্যটন কেন্দ্র, যেখানে ২২ এপ্রিল ২৬ জন পুরুষ নিহত হন।
বছরের পর বছর ধরে চলা এই অঞ্চলে বেসামরিক লোকজনের ওপর হামলার মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী এটি।
ভারত অভিযোগ করেছে, এ হামলার পিছনে পাকিস্তানের সমর্থন রয়েছে এবং দেশটির সমর্থন নিয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে। তবে ইসলামাবাদ ভারতের এই অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী তারার বলেন, ‘যেকোনো আগ্রাসনের চূড়ান্ত জবাব দেওয়া হবে এবং এই অঞ্চলে যেকোনো গুরুতর পরিণতির জন্য ভারত সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবে।’
এই পরিস্থিতিতে চীন, যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বের দেশগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত এই দুই প্রতিবেশী দেশের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
বুধবার ভারতীয় সেনাবাহিনী জানিয়েছে, কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (লাইন অব কন্ট্রোল বা এলওসি) বরাবর পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে টানা ষষ্ঠ রাতেও গুলিবিনিময় হয়েছে।
যদিও এটি ‘ছোট অস্ত্র’ দিয়ে সীমিত সংঘর্ষ ছিল এবং কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই গুলিবিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেনি, তবে ইসলামাবাদ থেকে রাষ্ট্রীয় রেডিও মঙ্গলবার জানিয়েছে, আকাশসীমা লঙ্ঘন করায় একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান। ঘটনাটি ঠিক কখন ঘটেছে, তা উল্লেখ করা হয়নি এবং ভারতের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।
পেহেলগাম হামলার পর এক সপ্তাহের মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক বিবাদ, নাগরিকদের বহিষ্কার এবং স্থলসীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে।
গত সপ্তাহে মোদি বলেন, যেসব ব্যক্তি এই হামলা চালিয়েছে এবং যারা তাদের সমর্থন করেছে, তাদের সবাইকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।
মোদি বলেছেন, আমি সমগ্র বিশ্বকে বলছি, ভারত প্রতিটি সন্ত্রাসী এবং তাদের সমর্থকদের সনাক্ত করবে, খুঁজে বের করবে এবং শাস্তি দেবে, ‘আমরা পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত তাদের তাড়া করব।’
এই রকম যুদ্ধংদেহী বক্তব্যের কারণে সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা বাড়ছে এবং অনেক দেশ তাদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর জানায়, তাদের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কো রুবিও শিগগিরই পাকিস্তানি ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলবেন এবং পরিস্থিতি যেন আর না বাড়ে সেজন্য আহ্বান জানাবেন।
এদিকে, জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস মঙ্গলবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের সাথে ফোনে কথা বলেছেন, যেখানে তিনি "উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করার জন্য তার সদয় পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন’।
পরে শাহবাজ শরিফের দপ্তর জানায়, তিনি গুতেরেসকে ভারতের প্রতি সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানোর অনুরোধ করেছেন এবং ভারতের যেকোনো ‘অযৌক্তিক পদক্ষেপের’ বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ‘আত্মসম্মান ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় পূর্ণ শক্তি প্রয়োগের’ অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর অঞ্চলটি ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিভক্ত। উভয় দেশই এই অঞ্চলের পূর্ণ মালিকানা দাবি করে।
১৯৮৯ সাল থেকে ভারতশাসিত কাশ্মীরে বিদ্রোহীরা স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার লক্ষ্যে সশস্ত্র আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
ভারতীয় পুলিশ তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে পেহেলগাম হামলা চালানোর অভিযোগ এনেছে—তাদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি এবং একজন ভারতীয়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা জাতিসংঘ নিষিদ্ধ পাকিস্তান-ভিত্তিক লস্কর-ই-তৈইবা সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্য।
তাদের ধরিয়ে দিতে তথ্যদাতাদের জন্য ২০ লাখ রুপি (২৩,৫০০ মার্কিন ডলার) করে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে এবং সম্ভাব্য সহযোগীদের খোঁজে ব্যাপক ধরপাকড় চালানো হচ্ছে।
ভারতশাসিত কাশ্মীরে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয়েছিল ২০১৯ সালের পুলওয়ামায়, যেখানে এক আত্মঘাতী জঙ্গি বিস্ফোরকভর্তি গাড়ি নিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ের ওপর হামলা চালায়। এতে ৪০ জন নিহত ও ৩৫ জন আহত হয়। এ ঘটনার ১২ দিন পর ভারতীয় জঙ্গিবিমান পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালিয়েছিল।
ইতোমধ্যে ইরান মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে এবং সৌদি আরব জানিয়েছে, তারা উত্তেজনা এড়ানোর চেষ্টা করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তেজনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুক্রবার বলেছেন যে, এই বিরোধ "কোন না কোনভাবে সমাধান হয়ে যাবে’।