বাসস
  ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৪১

উত্তর কোরিয়ার যুদ্ধজাহাজে পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের নির্দেশ কিমের

ঢাকা, ৩০ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন দেশটির নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজগুলোতে দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ বুধবার জানায়, কিম একটি নতুন যুদ্ধজাহাজের অস্ত্র ব্যবস্থার পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন এবং সেখানেই এই নির্দেশ দেন।

পিয়ংইয়ং সম্প্রতি ‘চোয়ে হিয়ন’ নামের ৫,০০০ টনের একটি ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ উন্মোচন করে। বিশ্লেষকদের মতে, জাহাজটিতে স্বল্পপাল্লার কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত থাকতে পারে।

দুই দিনের এই অস্ত্র পরীক্ষার প্রথম দিনে কিম উপস্থিত ছিলেন বলে জানিয়েছে কেসিএনএ। পরে তিনি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে নৌবাহিনীকে পারমাণবিকায়নে গতি আনার নির্দেশ দ

পিয়ংইয়ং থেকে এএফপি জানায়, পূর্ব ঘোষণায় উত্তর কোরিয়া দাবি করেছিল, এই জাহাজে ‘সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র’ সংযুক্ত রয়েছে এবং এটি আগামী বছর কার্যক্রম শুরু করবে।

বিশ্লেষকদের ধারণা, জাহাজটি ভূমি ও আকাশে লক্ষ্যেবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।

মঙ্গলবারের পরীক্ষায় ‘জাহাজ থেকে জাহাজে নিক্ষেপযোগ্য কৌশলগত নির্দেশিত অস্ত্র’, বিভিন্ন স্বয়ংক্রিয় কামান, ধোঁয়া ও বৈদ্যুতিক বিঘ্নকারী বন্দুক পরীক্ষা করা হয় বলে জানিয়েছে কেসিএনএ। আগের দিন সোমবার পরীক্ষা করা হয় শব্দের গতি সম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ও ১২৭ মিমি স্বয়ংক্রিয় কামান।

কিম বলেন, উত্তর কোরিয়ার জাহাজভিত্তিক আঘাত ক্ষমতা বর্তমানে শব্দের চেয়ে বেশি গতি সম্পন্ন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও কৌশলগত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র’সহ সর্বোচ্চ শক্তির অস্ত্রের সঙ্গে কার্যকরভাবে একত্রিত হয়েছে।

সিউলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে উত্তর কোরিয়ার নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ নির্মাণ ও অস্ত্র উন্নয়নের গতিপ্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করছে।

এ ঘোষণা এমন এক সময় এলো, যখন উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি প্রথমবারের মতো স্বীকার করেছে যে তারা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য রাশিয়ায় সেনা পাঠিয়েছে। রাশিয়ার পক্ষ থেকেও শনিবার জানানো হয়, ইউক্রেনীয় বাহিনীর একটি ইউনিট ধ্বংসে ‘উত্তর কোরীয় সেনাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রয়েছে।

বিশ্লেষক আহ্ন চান-ইল মনে করেন, উত্তর কোরিয়া সম্প্রতি রাশিয়া থেকে কিছু উন্নত অস্ত্র পেয়েছে এবং সেগুলো নিজেদের জাহাজে সংযুক্ত করে সামরিক মনোবল ও অভ্যন্তরীণ ঐক্য জোরদার করছে।

শনিবার চোয়ে হিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিম ও তাঁর মেয়ে জু আয়ের ছবি প্রকাশ করে কেসিএনএ। অনেকেই জু আকে কিমের উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করছেন।

গত মার্চে কিম পারমাণবিক সাবমেরিন নির্মাণ প্রকল্প পরিদর্শন করে জানান, নৌবাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন উত্তর কোরিয়ার প্রতিরক্ষা কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পিয়ংইয়ং অতীতে রেডিওঅ্যাকটিভ সুনামি ঘটাতে সক্ষম ‘জলতলের পারমাণবিক ড্রোন’ তৈরির দাবি করলেও বিশ্লেষকরা তার বাস্তবতা নিয়ে সন্দিহান।

এদিকে ওয়াশিংটন ও সিউল যৌথ সামরিক মহড়া এবং মার্কিন কৌশলগত সম্পদের উপস্থিতি বাড়ানোর মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ জোরদার করেছে।

উত্তর কোরিয়া নিজেকে বহুবার ‘অপরিবর্তনীয় পারমাণবিক অস্ত্রধারী রাষ্ট্র’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র-দক্ষিণ কোরিয়ার মহড়াকে ‘আক্রমণের প্রস্তুতি’ বলে নিন্দা জানিয়ে আসছে।

উত্তর কোরিয়ার সাম্প্রতিক এই পরীক্ষাকে ‘নৌবাহিনীর কৌশলগত ও পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রতীক’ বলে অভিহিত করেছেন সিউলের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ কোরিয়ান স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট ইয়াং মু-জিন। তাঁর মতে, এটি ইঙ্গিত দেয় যে নতুন যুদ্ধজাহাজটি গভীর সমুদ্রেও কার্যক্রম চালাতে সক্ষম।