শিরোনাম
ইসলামাবাদ, ৬ মে, ২০২৩ (বাসস ডেস্ক) : এ পর্যন্ত বিশ্বের কোন দেশেরই স্বীকৃতি না পেলেও আফগানিস্তানের তালেবান সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি শনিবার বিদেশ সফরে বেরিয়ে পাকিস্তান ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করেছেন। আমির খান মুত্তাকির আফগানিস্তান ত্যাগে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, জাতিসংঘ মহাসচিব নারীদের উপর তালেবান সরকারের নিষেধাজ্ঞার নিন্দা পুনর্ব্যাক্ত করার মাত্র কয়েকদিন পরই, ইসলামাবাদ সফরে তার ওপর থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। খবর এএফপি’র।
চীন ও পাকিস্তান আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। বেইজিংয়ের নজর তাদের খুবই স্বল্প দৈর্ঘের অভিন্ন আফগান সীমান্ত জুড়ে থাকা বিশাল অব্যবহৃত খনিজ সম্পদের দিকে। আর ইসলামাবাদের উদ্বেগ হচ্ছে- তাদের সূদীর্ঘ অভিন্ন আফগান সীমান্ত বরাবর বিশাল নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টা।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিদেশী সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং পশ্চিমা-সমর্থিত সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর, সেদেশের শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রীসহ এই প্রথম উচ্চ-মাপের আফগান প্রতিনিধিদলটি বিদেশ সফর করছে।
সাউথ এশিয়ান স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাবিলিটি ইনস্টিটিউট-এর মহাপরিচালক মারিয়া সুলতান বলেন, এই মুহূর্তে আমরা যা বুঝতে পারছি, তা হচ্ছে- শীর্ষ পর্যায়ের এই সফরের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হল তারা এটা উপলব্ধি করতে পারছে যে, আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ভবিষ্যত সম্ভব নয়। তিনি এএফপিকে বলেন, আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক স্থাপন করা গুরুত্বপূণর্, তবে সেটা কেবলমাত্র কূটনৈতিক সম্পর্কের পুনর্গঠনের মাধ্যমেই সম্ভব ।
এ সপ্তাহের গোড়ায়, জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন ও অন্যান্য ২০ টি দেশ ও সংস্থার দূতদের এক বৈঠকে বলেন, দেশে লক্ষ লক্ষ নারীকে দৃষ্টি থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে। এছাড়াও এই সপ্তাহে, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার পররাষ্ট্র মন্ত্রীদের ভারতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কাবুল পর্যবেক্ষকের মর্যাদা পেয়েছে। তবে কোনো প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই আফগানিস্তান নিয়ে সেখানে আলোচনা করা হয়েছে। শুক্রবার, জাতিসংঘ স্থানীয় নারীদের বিশ্ব সংস্থায় কাজ করা নিষিদ্ধ করার আলোকে এক পর্যালোচনায় আফগানিস্তানে উপস্থিত থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। এদিকে তালেবান সরকার কাবুল থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে, আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মিশন নিষেধাজ্ঞার নিন্দা পুনর্ব্যক্ত করেছে। তালেবান সরকার নারীদের উপর নিষেধাজ্ঞাকে অভ্যন্তরীণ সামাজিক সমস্যা অভিহিত করে নিষেধাজ্ঞার সমালোচনাকে দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগানিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ মানবিক সংকটাপন্ন দেশের অন্যতম। আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলি বলছে, ৩৮ মিলিয়ন জনসংখ্যা সেখানে ক্ষুধার্ত এবং ৩ মিলিয়ন শিশু অপুষ্টির ঝুঁকিতে রয়েছে। ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে, তালেবান কর্তৃপক্ষ শরিয়া আইনের একটি কঠোর সংস্করণ আরোপ করে কিশোরী মেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নিষিদ্ধ করে এবং নারীদের সরকারি চাকরি থেকে সরিয়ে নেয়। সংস্কারটিকে জাতিসংঘ ‘লিঙ্গ-ভিত্তিক বর্ণবাদ’ অভিহিত করেছে।
কিন গ্যাং, ডিসেম্বরে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হওয়ার পর, পাকিস্তানে তার প্রথম সফর করছেন। তিনি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সাথেও দ্বিপাক্ষিক আলোচনা করবেন। চীন স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে পাকিস্তানের প্রধান প্রতিরক্ষামূলক মিত্র এবং বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অবকাঠামো প্রকল্পে সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার।