বাসস
  ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪:০৮

ঢাকা উত্তরে এবার সাতটি স্থানে সর্বোচ্চ তিন ঘন্টার জলাবদ্ধতা হতে পারে : ডিএনসিসি প্রশাসক

ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। ছবি: সংগৃহীত

\মো. সাজ্জাদ হোসেন\

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকার সাতটি স্থানে এবার জলাবদ্ধতা হতে পারে। তবে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার মধ্যে এই পানি সরে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।

জাতীয় বার্তা সংস্থা-বাসসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি প্রায় দুই মাস আগে কর্পোরেশনের দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নেওয়ার পর ১৯টা বড় জলাবদ্ধ এলাকা চিহ্নিত করেছি। সে ১৯টা এলাকার মধ্যে সাতটিতে জলাবদ্ধতা থাকবে, বাকিগুলোতে জলাবদ্ধতা হবে না। আমি এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান যে ১৯টি খাল পুনরুদ্ধারের প্রকল্প হাতে নিয়েছি, এই খালগুলো যদি ঠিকভাবে পরিষ্কার করা যায় তাহলে অনেক পানি কমে যাবে। সুতরাং ১৯টি জায়গার মধ্যে সাতটি জায়গায় এবার জলাবদ্ধতা হবে, বাকিগুলোতে হবে না।’

জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করার আগে এর কারণ অনুসন্ধানের ওপর গুরুত্বারোপ করে ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘প্রথমত জলাবদ্ধতা কেন হয় এটা দেখতে হবে। কারণ এটা হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ঢাকায় ১৯৮৮ সালে যখন বন্যা হয়, তখন ঢাকাসহ অন্যান্য কিছু শহর শুকনো করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। শুকনো করতে গিয়ে শহর রক্ষাবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঢাকা শহরে প্রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার এর বেড়িবাঁধ দেয়া হলো। এই বেড়িবাঁধ করতে গিয়ে সরকার নিজে জলাধার ভরাট করেছে। এটা করে সরকার দেখালো যে, জলাধার ভরাট করা যায়। এটার দেখাদেখি বসুন্ধরা, ইস্টার্ন হাউজিং ওনারা জলাধার ভরাট করা শুরু করলেন। এরপর ভরাটের একটা মারাত্মক ট্রেন্ড শুরু হয়। এভাবে পাইকারি হারে জলাধার ভরাট করা শুরু হলো। এরপর শুরু হলো জলাধার ভরাট করে আবাসন ব্যবসা।’

তিনি বলেন, ‘এটা করতে গিয়ে খাল, পুকুর ও জলাধার সব ভরাট করা হয়েছে। ঢাকার চারপাশের নদীগুলো তো ভরাট হয়েছেই ঢাকার ভেতরে পাঁচটা বহমান ছিল, এই নদীগুলোও সরাসরি ভরাট করে সেখানে আবাসন ও রাস্তা করা হয়েছে। জলাবদ্ধতার মূল কারণ হচ্ছে এই নদী ভরাট করে রাস্তা এবং আবাসন নির্মাণ। ফলে খালের পানি এবং নদীর পানি যাওয়ার কোন রাস্তা নেই। ঢাকায় বৃষ্টি হলেই মিরপুরের কালশি, পল্টন, খিলগাও ঝিলপাড়, হাতিরঝিলের পাড়ে ৩৯ নম্বর বস্তি, এয়ারপোর্টের উল্টা পাশে আশকোনা, ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এবং রায়ের বাজারের কিছু অংশে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এই প্রত্যেকটি জায়গায় আগে নদী ছিল। সুতরাং জলাবদ্ধতা নিরসনে কারণ অনুসন্ধান করতে হবে। অন্যথায় শুধু প্রকল্প নিলেই এর সমাধান হবে না।’

কালশিসহ উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় এখনো আমাদের বাহিনী ড্রেন, নালা এগুলো পরিষ্কার করার কাজ চালাচ্ছে উল্লেখ করে মুহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘কয়েকদিন আগে আমরা প্যারিস খাল উদ্ধার করেছি।  সেখানে একটি খাল আছে যেটি পুরোপুরি ভরা, আমরা সেই খালটি পরিষ্কার করছি।  এবার ঢাকায় যদি মাঝারি থেকে অতি বৃষ্টি হয়, তাহলে সাতটি জায়গায় তিন ঘন্টার বেশি পানি জমবে না। এজন্য গতবারের মতো ৭০০ বা হাজার কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি, খাল পরিষ্কারের যে বাজেট সেটা দিয়েই করা হচ্ছে। শত এবং হাজার কোটি টাকার প্রকল্প না নিয়েই আমরা এবার যে কাজটি করছি, তাতে আশা করি নগরবাসী স্বস্তি পাবে। জলাবদ্ধতা হবে তবে তা তিন ঘন্টার বেশি স্থায়ী হবে না।'

পানি নামতে কেন তিন ঘন্টা সময় লাগবে তার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘যেহেতু পানি নিষ্কাশনের পকেটগুলো বন্ধ, আমরা সেই পকেটগুলো পরিষ্কার করছি। কিছু কাটাকাটি করতে হবে পরবর্তীতে। আগামী অর্থ বছরে আমরা এই নেটওয়ার্কটা তৈরি করব। এর পরের বছর এক থেকে দেড় ঘন্টার মধ্যে পানি নামার ব্যবস্থা হবে।’

ডিএনসিসি প্রশাসক বলেন, ‘ঢাকা শহরে পানি নামতে গেলে শুধুমাত্র খালগুলো পরিষ্কার থাকলেই পানি নামবে তা কিন্তু নয়। ঢাকা শহরে জোয়ার ভাটার প্রভাব রয়েছে। সুতরাং যখন অতিবৃষ্টি হবে ওই সময় যদি জোয়ার থাকে, তাহলে কিন্তু পানি অতি সহজে নামবে না। জোয়ারের প্রভাব টঙ্গী পর্যন্ত যায়। অতএব পকেটগুলো যদি পরিষ্কার থাকে তারপরেও যদি জোয়ারের প্রভাব থাকে তাহলে পানি নামতে দেরি হবে। সুতরাং খোলা চোখেও যদি দেখি তাহলেও সমস্যা রয়েছে। আরো একটি বিষয়, সেটি হচ্ছে ঢাকার পানি নামে পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে কিন্তু আমাদের রাস্তাগুলো করা হয়েছে উত্তর এবং দক্ষিণে। উত্তর দক্ষিণের রাস্তার মানে হচ্ছে প্রত্যেকটা পানির প্রবাহের মাঝখানে এক একটি করে বাঁধ রয়েছে। এটাও পানি নামার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। এক সময় বড় পরিকল্পনা নিলে হয়তো ঢাকা শহরে আর জলাবদ্ধতা হবে না।'

জলাবদ্ধতা নিরসনে জনবল সংকট আরো একটি বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঢাকা ওয়াসা দুই সিটি কর্পোরেশনকে ড্রেনগুলো বুঝিয়ে দিয়েছে। অনেকগুলো খাল, কম বেশি ৫৬ টি খাল এখন সিটি কর্পোরেশনকে দেখতে হচ্ছে। এই খাল এবং ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার জন্য যে পরিমাণ জনবলের প্রয়োজন তা কিন্তু বাড়েনি। আগের জনবল এবং যন্ত্রাংশ দিয়ে কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এটি একটি বড় সমস্যা। গত ১৫ বছরে উন্নয়নের নামে যে বুলি ছড়ানো হয়েছে, আমি দায়িত্বে নেওয়ার পর দেখলাম খালগুলো পরিষ্কার করার মতো মেশিনটাও নেই আমাদের হাতে। ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব যারা নিয়েছেন তারা এটাকে সচল করার জন্য কোন উদ্যোগ নেয়নি।’