বাসস
  ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১২:২৯
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:৫০

জুলাই আন্দোলন নির্মূলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে চার মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১৫ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস) : ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত মানবতাবিরোধী অপরাধের চার মামলার তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সংশ্লিষ্ট রিপোর্টারদের সাথে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের মতবিনিময় অনুষ্ঠানে সম্প্রতি এ তথ্য তুলে ধরা হয়। মামলাগুলো হলো-আশুলিয়া লাশ পোড়ানোর ঘটনা, চানখারপুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনা, রামপুরা কার্নিশে ঝুলে থাকা গুলির ঘটনা ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘এ সকল মামলায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হতে পারে। তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক গৃহীত হওয়ার সাথে সাথেই আনুষ্ঠানিক বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

চিফ প্রসিকিউটর জুলাই আন্দোলন নির্মূলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার তদন্ত কার্যক্রম বিষয়ে বলেন, ‘প্রশাসনের অভ্যন্তরে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রতি অনুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবস্থান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের অসহযোগিতা সাক্ষ্যপ্রমাণাদি গ্রহণের প্রক্রিয়াকে সময়সাপেক্ষ করে তোলে।’

তিনি বলেন, ‘বিগত সরকার পতনের পর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউশন টিমের ওপর সরাসরি প্রাণঘাতী বোমা হামলার চেষ্টা/ষড়যন্ত্র হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করছে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব বা মিসইনফরমেশন ছড়ানো, তদন্তকারী কর্মকর্তা বা প্রসিকিউটরদের নামে মিথ্যা অপবাদ প্রদান, বিদেশি লবিস্ট ফার্ম এবং আইনজীবীদের মাধ্যমে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর বক্তব্য প্রদানে অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করেছে। থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্রাদি পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক স্থাপনার আকার আকৃতি, দেয়াল ইত্যাদি ভেঙ্গে এবং বিকৃত করে প্রমাণ লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তাগণ এগুলো ট্রেস করে পুনরুদ্ধার করতে কাজ করছেন বলে জানান তাজুল ইসলাম।

পলাতক আসামিদের গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তৎপর রয়েছে।

চিফ প্রসিকিউটর জানান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিশেষায়িত সংস্থা। সমন্বয়ক, সহ-সমন্বয়ক সহ তদন্ত সংস্থার মোট তদন্তকারী কর্মকর্তার বর্তমান সংখ্যা ২৪ জন। 

তদন্ত সংস্থার সকল সদস্যই পুলিশ বাহিনী থেকে প্রেষণে বা চুক্তিভিত্তিক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।

প্রসিকিউশন টিমে চিফ প্রসিকিউটরসহ মোট ১৭ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। আইনের বিধান অনুসারে, প্রসিকিউটরগণও তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতে পারেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আন্দোলন শুরু করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের এক রায়কে কেন্দ্র করে ফুঁসে ওঠে ছাত্র সমাজ। তাদের ওপর সরকারের দমন পীড়নের প্রেক্ষিতে জনতা এসে শরীক হয় ছাত্রদের সাথে। শুরু হয় ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলন। এ আন্দোলন নির্মূলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার প্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে হত্যা, গণহত্যা ও  মানবতা বিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে। আন্দোলন নির্মূলে সহস্রাধিক হত্যা, ২৩ হাজারের বেশি মানুষকে আহত যার মধ্যে অনেককে স্থায়ী অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। এখনো বহু আহতদের চিকিৎসা চলছে।

টানা ৩৬ দিনের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছরের আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসনের পতন হয়। আন্দোলন নির্মূলে পরিচালিত মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।