শিরোনাম
ঢাকা, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ (বাসস): নেত্রকোনার মগড়া নদীর মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ, দখলদারদের তালিকা প্রস্তুত করে উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে আনা এক রিট পিটিশনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ রুলসহ গতকাল এ আদেশ দেন।
জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক এবং নেত্রকোনার জেলা প্রশাসককে আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। আদেশে অনতিবিলম্বে নদীতে পৌরসভা ও গৃহস্থালীর পয়োবর্জ্য ফেলা বন্ধের জন্য নেত্রকোনা পৌরসভার প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে দূষণকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রস্তুত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও নেত্রকোনা জেলার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালককে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। ছয় মাসের মধ্যে আদেশ প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি নেত্রকোনা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত মগড়া নদী দখল ও দূষণ থেকে রক্ষার ব্যর্থতা সংবিধান ও প্রচলিত আইনের লঙ্ঘন হওয়ায় কেন তা বিধিবহির্ভূত,বেআইনি ও জনস্বার্থবিরোধী ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি রুল জারি করা হয়েছে।
এছাড়া নদীর সিএস, আরএস ম্যাপ ও মূল প্রবাহ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ, সব দখলদার ও ক্ষতিকর স্থাপনা উচ্ছেদ, দূষণের উৎস চিহ্নিত করে দূষণ নিয়ন্ত্রণের এবং প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা ও সে মোতাবেক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পুনরুদ্ধার, সংরক্ষণ ও রক্ষা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন উচ্চ আদালত।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) জনস্বার্থে এ রিট করে। রিটের পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন এডভোকেট এস. হাসানুল বান্না।
বেলা জানায়, নেত্রকোনা জেলার সদর উপজেলার চল্লিশা ইউনিয়নে ধলাই ও কুক্কাখালী নামক দুইটি নদী মিলিত হয়ে মগড়া নদী উৎপন্ন হয়েছে। নদীটি বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত চতুর্থ শ্রেণির নৌপথ। একদিকে প্রয়োজনীয় সংস্কারের অভাবে তলদেশে পলি/বালু জমে নদীটি নাব্যতা হারিয়েছে, অন্যদিকে দখল আর দূষণে এ নদী আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যানুযায়ী, নদীতে চিহ্নিত ৩১৬ জন দখলদার নদীর যথেচ্ছা ব্যবহার করে চলেছে। কচুরিপানা, গৃহস্থালি বর্জ্য, পৌরসভার ড্রেনেজ, আউটলেটের পয়োবর্জ্যরে মাধ্যমে নদী প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে এবং নদীর পানি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। নদীর উৎসমুখে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত জলকপাট বা স্লুইচগেট, নদীর ওপর নির্মিত কম উচ্চতার সেতু এবং পূর্বধলা-নেত্রকোনা সড়কের জন্য নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। নদীর পানি ব্যবহার করে নদী সংলগ্ন ফসলি জমিতে চাষাবাদ করা হতো। কিন্তু দূষণের কারণে বর্তমানে তা ব্যবহারের উপযোগিতা হারিয়েছে। নির্ধারিত নৌপথ হওয়া সত্ত্বেও এ নদীতে বর্তমানে লঞ্চ, মালবাহী বড় লঞ্চ ও ট্রলার চলতে পারে না।
এ অবস্থায় মগড়া নদীর দখল ও দূষণরোধ করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় বেলা জনস্বার্থে মামলাটি করে।