শিরোনাম
টাঙ্গাইল, ২৯ জুলাই, ২০২৩ (বাসস): জেলার মির্জাপুরে টুটুল চৌধুরীর বাড়িতে নেই বিয়ের আনন্দ। গত তিনদিন ধরে ওখানে আছে শুধু কান্না আর আহাজারি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার তরফপুর দক্ষিণপাড়া গ্রামে বরযাত্রী ৭/৮ জনের নৌকাযোগে বুইড়া বিল পার হওয়ার সময় নৌকাটি ডুবে যায়। এ ঘটনায় বর টুটুলের বড়ভাই সিঙ্গাপুর প্রবাসী রিপন চৌধুরী (৪০) ও তার চাচাতো ভাই ইতালি প্রবাসী কহিনুর মিয়ার ৮ বছরের শিশু কন্যা ¯েœহা আক্তার ও আত্মীয় ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে আসিফ মিয়া (২০) পানিতে ডুবে মারা যায়।
মুন্দিরাপাড়া গ্রামে দেখা যায়, মেয়ের সমবয়সী নূর এ জান্নাতকে বার বার বুকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছেন ইতালি প্রবাসী কহিনুর মিয়া। মেয়েকে হারিয়ে বিলাপ করছেন তিনি। কহিনুর মিয়া বলেন, ১৪ বছর ধরে তিনি ইতালি থাকেন। আড়াই বছর আগে স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েকে ইতালিতে নিয়ে যান। সেখানেই সন্তানেরা লেখাপড়া করছে। চাচাতো ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে দুই মাস আগে তিনি সপরিবার দেশে আসেন। আগামীকাল রোববার সকাল সাড়ে ছয়টায় তাদের ইতালিতে ফিরে যাওয়ার ফ্লাইট। এরই মধ্যে মেয়েটি চলে গেল না ফেরার দেশে। কহিনুর মিয়ার বড় ছেলে রাফি বলেন, ইতালিতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন তিনি। ছোট ভাই অভি নবম শ্রেণিতে পড়ে। আর ছোট বোন স্নেহা আক্তার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
মির্জাপুর উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামের টুটুল চৌধুরীর সঙ্গে উপজেলার তরফপুর গ্রামের দক্ষিণপাড়া এলাকার মজনু মিয়ার মেয়ে লিপা আক্তারের বিয়ের দিন ধার্য ছিল। গত বৃহস্পতিবার দুপুরের খাবার শেষে বাড়ি ফেরার পথে নৌকাডুবিতে উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের মুন্দিরাপাড়া গ্রামের রিপন চৌধুরী, তার চাচাতো ভাই কহিনুর মিয়ার শিশুকন্যা স্নেহা আক্তার ও উপজেলা ভাওড়া ইউনিয়নের হাড়িয়া গ্রামের সেলিম মিয়ার ছেলে আসিফ মিয়ার মৃত্যু হয়। নিহত রিপন চৌধুরীর বাড়িতে দেখা যায় লোকশূণ্য। মাঝে মধ্যে দলে দলে আশপাশের বাড়ির মানুষ আসছেন। সবাই শোকে আফসোস করছেন। গতকাল শুক্রবার নির্ধারিত বিয়ের বউভাতের অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য সাজানো প্যান্ডেলটি ঠিকই পড়েছিলো। কিন্তু সেখানকার সব চেয়ার-টেবিল এলোমেলো। বর-কনের জন্য তৈরি করা মঞ্চটির দিকে কারও নজর ছিলোনা। পরে বিকেলে ডেকোরেশনের লোকজন বিয়ের গেট ও প্যান্ডেল খুলার কাজ শুরু করেন।
এদিকে প্রাণ ফিরে পাওয়ার আশায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) রাত নয়টা থেকে বারোটা পর্যন্ত শিশু ¯েœহা ও রিপন চৌধুরীর মরদেহ ছাই দিয়ে ঢেকে রাখা হয় বলে বর টুটুল চৌধুরী ও গ্রামের বাসিন্দা উজ্জল মিয়া জানিয়েছেন।
রিপনের ছোট ভাই বিয়ের বর টুটুল চৌধুরী বলেন, রিপন দীর্ঘদিন ধরে সিঙ্গাপুরে থাকেন। বিয়ে উপলক্ষে গত ১৭ জুলাই দেশে আসেন। রিপনের সংসারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। টুটুল আরও বলেন, তার আরেক ভাই খোকন তিনিও সিঙ্গাপুর থেকে দেশে এসেছেন।
এদিকে মির্জাপুর উপজেলা সদরের ইউনিয়নপাড়া এলাকায় সেলিম মিয়ার ছেলে নিহত আসিফ মিয়া এ বছর মির্জাপুরের ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। আসিফের চাচাতো বোন হাসি আক্তার বলেন, আসিফ সবার কাছে খুবই প্রিয় ও আদরের ছিল।