শিরোনাম
॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা (দক্ষিণ), ৩ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : জেলায় ভ্রাম্যমাণ খামারে হাঁস পালন করেই তাদের সংসারে এসেছে স্বচাছলতা ।বছরের পুরোটা সময় খামারের আয় দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। হাঁসের ডিম ও ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে তা বিক্রি করেই সাবলম্বী হচ্ছে। ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে এবং নিজেদের জমানো কিছু টাকায় হাঁস কিনে চার বছর ধরে পথে-প্রান্তরে জলাশয়ে পালন করে আসছে ।তাদের ভাষায় তারা ভ্রাম্যমাণ হাঁস খামারি’। প্রতিবছর এক ঝাক হাঁস নিয়ে হবিগঞ্জ থেকে কুমিল্লায় চলে আসি। বর্ষা মৌসুমে আগে থেকেই হাঁস পালনের জন্য কুমিল্লার উঁচু এলাকার জলাধারগুলো বেছে নেই। এ হাঁস পালনের মাধ্যমে আমাদের সুদিন ফিরেছে। কথাগুলো বলেন, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বানিয়াচং গ্রাম থেকে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা এলাকায় এক ঝাক হাঁস নিয়ে আসা সুজাত আলী, সোহেল মিয়া ও ফারুক হোসেনসহ ছয় যুবক।
সারা দিন হাঁস চরিয়ে রাতের বেলা অস্থায়ীভাবে তৈরি ঘেরে হাঁসগুলো নিয়ে তাঁরা থাকছেন। কয়েক দিন পর খাবারের সন্ধানে হাঁসের পাল নিয়ে চলে যাচ্ছেন অন্য এলাকায়। এভাবে ঘুরেঘুরে হাঁস পালনে খাবারের খরচ নেই। লাভজনক হওয়ায় এ পদ্ধতিতে হাঁস পালনে আগ্রহীর সংখ্যা দ্রুত বেড়ে চলেছে।
খামারি সুজাত আলী, সোহেল মিয়াসহ অন্য যুবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছর জুন মাসের প্রথমদিকে তারা ছয়জন মিলে দেশীয় জাতের চার থেকে সাড়ে চার মাস বয়সের সাড়ে ৪ হাজার হাঁস নিয়ে দুই থেকে আড়াই মাসের জন্য কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা এলাকায় এসেছেন। তারা তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে উপজেলার কালখাড়পাড়, কাটানিসার ও বাঁশমঙ্গল এলাকায় জলাশয়ে হাঁস পালন করছেন। রাতে হাঁসগুলো রাখার জন্য টিন ও নেট দিয়ে বেষ্টনী গড়ে তুলেছেন এবং এর পাশে ছোট্ট টিনের চালা নির্মাণ করে রান্না ও খাওয়াসহ তারা রাতযাপন করেন। তারা জানান, সবগুলো হাঁস ডিম দেয় না। সাড়ে ৪ হাজার হাঁসের মধ্যে এখন ১৮শ হাঁস প্রতিদিন ডিম দিচ্ছে। তারা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ৪ হাজার হাঁস একসঙ্গে ডিম দেবে। এখন প্রতিদিন পাইকাররা এসে ১০০ ডিম ৮০০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। বছর শেষে সব খরচ বাদ দিয়ে তাদের ১৮ লাখ টাকার মতো মুনাফা থাকবে বলে জানান তারা। এতে প্রতিজনের লাভ হবে তিন লাখ টাকা করে। যে পদ্ধতিতে চলছে: মূলত ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যেই গড়ে তোলা হয় এ ধরনের খামার। সাধারণত প্রতিটি খামারে চার থেকে সাত'শ হাঁস থাকে। প্রতিটি খামারের দেখভালের জন্য থাকে দুই-তিনজন লোক। বর্ষার সময় খাল-বিল ডুবে থাকায় খামারিরা নিজেদের বাড়িতেই হাঁসগুলো লালন-পালন করেন। এ সময়ে খামারিদের লাভ হয় কম। কারণ তখন হাঁসগুলোকে পুরো খাবার যেমন কিনে খাওয়াতে হয়, তেমনি বদ্ধ পরিবেশের কারণে সেগুলোর ডিম দেওয়ার ক্ষমতাও কমে যায়। বর্ষার পানি কিছুটা কমতে না কমতেই খামারিরা বেরিয়ে পড়েন তাঁদের হাঁসগুলো নিয়ে।
সুজাত আলী ও সোহেল মিয়া বাসসকে জানান, সাধারণ খামারগুলোতে হাঁসের খাবারের পেছনেই লাভের বড় একটা অংশ চলে যায়। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ খামারের ক্ষেত্রে তা হয় না। খাল-বিলে পর্যাপ্ত খাবার পাওয়া যায় বলে ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় সেগুলোর জন্য খাবার প্রায় কিনতেই হয় না। এ ছাড়া উন্মুক্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক খাবার পেয়ে সেগুলোর ডিম দেওয়াও বেড়ে যায় বেশ। এ কারণে সাধারণ হাঁসের খামারের চেয়ে ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামারে লাভ অনেক বেশি। সাধারণ খামারের চেয়ে ভ্রাম্যমাণ হাঁসের খামারে বিনিয়োগ করতে হয় তুলনামূলক ভাবে কম। ভ্রাম্যমাণ খামারে অবকাঠামো-ব্যয় নেই বললেই চলে। হাঁস কেনা বাবদ যা ব্যয় হয় সেটিকেই মূল বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। ৫০০ হাঁস আছে এমন একটি খামারে হাঁসের পেছনে বিনিয়োগ প্রায় সোয়া লাখ টাকা (প্রতিটি গড়ে ২৫০ টাকা হিসেবে)। এ ছাড়া অন্যান্য খাতে সবমিলিয়ে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ পাঁচ হাজার টাকা। ৫০০ হাঁসের একটি ভ্রাম্যমাণ খামারে প্রতিদিন গড়ে ৪০০টি ডিম উৎপাদন হয়। বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী এর দাম প্রায় আড়াই হাজার টাকা। এতে এমন একটি খামারে খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে দুই হাজার টাকা আয় থাকে। ফারুক জানান, ৬ বছর থেকে হাঁস পালন করে আসছেন। বর্তমানে তার ৪ শ টি হাঁস রয়েছে। শুধু হাঁস পালন করেই সংসারে স্বচ্ছলতা