বাসস
  ০৪ আগস্ট ২০২৩, ১০:৩৩

শরীয়তপুরে ৪শ ৮৮ কোটি টাকার পাট উৎপাদনের আশা

॥ এস এম মজিবুর রহমান ॥
শরীয়তপুর, ৪ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস) : জেলায় এবার উৎপাদনের ক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৬৯ হাজার ৭শ ১০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদান হবে বলে আশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী যার বাজার মূল্য ৪শ ৮৮ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর সূত্র বাসসকে জানায়, জেলার ছয় উপজেলায় চলতি ২০২২-২৩ খরিপ-১ মৌসুমে পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার ৫শ হেক্টরে। আবহাওয়া পাট আবাদের অনুকূলে থাকায় লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৩০ হাজার ৭শ ১০ হেক্টরে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬৮ হাজার ৯শ ৫২ মেট্রিক টন থাকলেও ফলন অনুযায়ী ৬৯ হাজার ৭শ ১০ মেট্রিক টন পাওয়ার আশা কৃষি বিভাগের। বর্তমান বাজার অনুযায়ী (প্রতি মণ ২৮০০-৩০০০টাকা) যার বাজার মূল্য ৪শ ৮৭ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা। আবাদকৃত জাতের মধ্যে রয়েছে দেশী (সিজিএল-১) ৩০ হাজার ৫শ হেক্টর, তোষা (রবি-১, অ-৯৭/৯৮ ও জেআরও-৫২৪) ২১ হাজার ৮শ হেক্টর, মেসতা (এএইচএস-২৪ ও বিজেআরাই-৩) ১ হাজার ৮শ ৮০ হেক্টর এবং কেনাফ (এইচসি-২ ও ডিজেআরআই-৪) ৩ হাজার ৯শ ৮০ হেক্টর।
নড়িয়া উপজেলার নশাসন ইউনিয়নের মালতকান্দি গ্রামের পাট চাষি আমিনুল ইসলাম মীরমালত বলেন, পাট আবাদের সময় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ২ হেক্টর বেশি জমিতে পাট আবাদ করেছি। গত বছর যেখানে ৩ হেক্টর জমিতে পাট আবাদ করেছিলাম এবার সেখানে ৫ হেক্টরে পাট আবাদ করেছি। তবে এবার বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় ও খাল, বিল ও ডোবায় কাংখিত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। তবে বর্তমানে পাটের যে বাজারদর রয়েছে (২৮০০ টাকা-৩০০০টাকা) তাতে আমরা বেশ লাভবান হওয়ার আশা করছি। তবে ভরা মৌসুমের সময় যাতে সিন্ডিকেট করে পাটের দাম না কমিয়ে দেয় সেই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের সদয় দৃষ্টি কামনা করছি।
জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের ইয়াসিন আকনকান্দি গ্রামের দাদন হাওলাদার বলেন, গত তিন বছর যাবত আমি রবি-১ জাতের লাল পাটের বীজ চাষ করছি। গত বছর থেকে আমার বাজার থেকে কোন বিদেশি বীজ কিনতে হয়নি। এ জাতের পাটের ফলন পেতে ১২০ দিন লাগলেও অন্য যে কোন জাতের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বেশি ফলন পাচ্ছি। আমার কাছ থেকে অনেক প্রতিবেশী কৃষকরা এ বীজ নিয়ে নিজেরা বীজ উৎপাদন করছেন। যারা বীজ উৎপাদন করছেন তাদের অনেকেরই এখন আমদানি করা বীজের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে না। এতে করে আমদানি নির্ভর ঝুঁকিপূর্ণ বীজের ক্ষতি থেকে আমরা অনেকটাই রক্ষা পেয়েছি।
একই এলাকার কৃষাণী হালিমা বেগম বলেন, রবি-১ জাতের লাল পাট ও অন্য জাতের সাথে আমরা অতিরিক্ত ফসল হিসেবে উচ্চফলনশীল ধানের আবাদ করে বিঘায় ১০-১২ মণ পর্যন্ত ফলন পাচ্ছি। জমিতে পাটে দেয়া সারেই সামান্য খরচে অতিরিক্ত একটি ফসল পেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছি।
বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক (২০২৩) প্রাপ্ত জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো: জামাল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে জাজিরা উপজেলায় পাটের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে পাটের সাথে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে উচ্চফলনশীল জাতের আমন ধান চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কৃষক অতিরিক্ত ফসল হিসেবে প্রতি বিঘায় ৮ থেকে ১২ মণ পর্যন্ত ধানের ফলন পাচ্ছেন। এছাড়াও পাটের বীজের আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বীজ স্বত্ত্ব কৃষকের হাতে রাখতে আমাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে গত ২-৩ বছর থেকে নিজেদের উৎপাদিত রবি-১ জাতের লাল পাট বীজ উৎপাদন করছেন এ অঞ্চলের কৃষক। এবছর জাজিরায় কৃষক নিজেদের উৎপাদিত বীজের মাধ্যমে ৬শ ১০ হেক্টর জমিতে রবি-১ জাতের লাল পাট আবাদ করেছেন। আমরা আশা করছি বীজ স্বত্ত্বা কৃষকের হাতে রাখার এ ধারা অব্যাহত রেখে পাট বীজের আমদানি নির্ভরতা অনেক কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. রবীআহ নুর আহমেদ বাসস’কে বলেন, কৃষি নির্ভর শরীয়তপুর জেলার কৃষকদের অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান  হতে কারিগরি সহায়তা ও মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পাশে রয়েছি। ফলশ্রুতিতে পাটের সাথে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে মাটির উপযোগীতা অনুযায়ী উচ্চফলনশীল ধান আবাদও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া পাট বীজের স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যে কারণে ২০২২-২৩ খরিপ-১ মৌসুমে সকল প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে জেলার ৩০ হাজার ৫শ হেক্টর পাট আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৩০ হাজার ৭শ ১০ হেক্টরে পাট আবাদ হয়েছে।