বাসস
  ০৮ আগস্ট ২০২৩, ১২:০৯

কক্সবাজারে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে ৫ জনের মৃত্যু

কক্সবাজার , ৮ আগস্ট, ২০২৩ (বাসস): জেলায় টানা  ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে এবং পানিতে ডুবে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বন্যায় দুই লক্ষাধিক লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে সোমবার সন্ধ্যায় উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও চকরিয়ায় পাহাড় ধসের ঘটনায় ৩ শিশুসহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই দিন রামুতে বানের পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে আরো এক শিশু।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক অতীশ চাকমা বলেন, উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে ৯ নম্বর ক্যাম্পে সি- Ÿøকে পাহাড়ের নিচে বসবাসকারী আনোয়ার ইসলামের বসতঘরের ওপর মাটি চাপা পড়ে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস উখিয়া স্টেশনের একটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এ সময় মা-মেয়েকে মৃত অবস্থায় এবং গৃহকর্তাকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- আনোয়ার ইসলামের স্ত্রী জান্নাত আরা (২৮) ও তার মেয়ে মাহিমা আক্তার (১)।
অপর দিকে, চকরিয়া উপজেলার বরইতলীতে ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে একই পরিবারের দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সোমবার বিকেলে বরতলী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বরঘোনা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাবেদ মাহমুদ বলেন, ওই এলাকার আনোয়ার হোসেন নামে এক ব্যক্তির ঘরে পাহাড়ের মাটি এসে পড়ে। এতে ঘরের দেওয়ালে নিচে চাপা পড়ে দুই শিশু। স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত ডাক্তার তাদের মৃত ঘোষণা করেন।  এখন ও মৃত শিশু দুইটির নাম জানা যায়নি।
রামুতে প্রবল বর্ষণে ১০ হাজার বসত বাড়ি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মৌলভীপাড়ায় বন্যার পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ২ বছর বয়সী শিশু সামিয়া। সোমবার, বিকাল ৫ টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে।
জেলা প্রশাসক মো: শাহীন ইমরান জানিয়েছেন প্রবল বর্ষণে জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস, দেয়াল ধস, গাছপালা পড়ে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এবং প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনসাধারণকে জানমাল রক্ষায় সচেতন করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক জানান-গত শনিবার রাত থেকে জেলায় ভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে পাহাড় ধসের আশংকা বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলার বিভিন্ন  ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা ও উপজেলায় সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বলেন- টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সোমবার রাতের পর থেকে আরো নতুন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু সদর উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের ৯০ গ্রাম বন্যা কবলিত। এসব এলাকার দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। মাতামুহুরী ও বাকখালী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী জামাল মোর্শেদ জানিয়েছেন, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর তীরে অন্তত ১০টি পয়েন্টে বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এ ছাড়া আরো একাধিক এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানিয়েছেন ,পাহাড়ি ঢলের পানি হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়ায় বন্যা দেখা দেয়। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে থাকা লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।